ঋতু পরিবর্তনে খুব স্বাভাবিকভাবে আমাদের ত্বকেও পরিবর্তন আসে। তাই এইসময় ত্বককে স্বাভাবিক রাখতে হলে, যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

শীতের ঠান্ডা হাওয়া আমাদের শরীর থেকে ন্যাচারাল অয়েল যেহেতু কমিয়ে দেয়, তাই ত্বকের টানটানভাব, ঠোঁট বা পা ফেটে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। তবে সবার ত্বকের একরকম সমস্যা হয় না। তাই ত্বক অনুসারে ক্রিম, লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করে ত্বকের স্বাস্থ্য সতেজ রাখতে হবে। আর এর জন্য কিছুটা সময় এবং ত্বকচর্চা করাতে পারলেই, বলতে পারবেন, ‘আই লাভ মাই স্কিন’।

অনেকে অবশ্য ত্বককে সতেজ রাখার জন্য কোন কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হয় তা ঠিকমতো জানেন না। বাজারে অনেকরকম ব্র্যান্ডেড স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট পাওয়া যায়, কিন্তু কোনটা সঠিকভাবে ত্বকের যত্ন নেবে, তা জানতে হবে। বিশেষ করে হোম কেয়ার বিউটির জন্য এটা জানা আবশ্যক। তবে বর্তমানের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় খুব বেশি প্রোডাক্ট সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করে কাজে লাগাবার সময় নেই। তাই বাজারের বিশেষ তিনটি স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের সম্পর্কে জানলেই কাজ হবে।

প্রথমটি হল, দেশের সুপ্রসিদ্ধ সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞের দ্বারা তৈরি প্রাকৃতিক উপাদানে সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট। এগুলির মধ্যে আছে শাহনাজ হুসেন, ব্লসম কোচর, ভিএলসিসি ইত্যাদি আরও অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠান।

ফেসওয়াশ

সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সাবান ত্বককে রুক্ষ করে তোলে এবং স্বাভাবিক সৌন্দর্য কমিয়ে দেয়। তাই ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত। কারণ এটা খুবই হাল্কা। লোশন এবং জেলের রূপে পাওয়া যায় এই ফেসওয়াশ। কোনও কোনও কোম্পানি প্রাকৃতিক উপাদানে প্রস্তুত এই ধরনের ফেসওয়াশ ব্যবহার করে। বায়োটেক-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিনীতা জৈন-এর বক্তব্য, ‘ফেসওয়াশ এমন হবে, যা প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এবং সোপ-ফ্রি।’ তাছাড়া মুখের ধুলো-ময়লা কিংবা মেক-আপ তুলে ত্বককে পরিষ্কার রাখাটাও জরুরি। বাজারে বায়োটেকের দু’ধরনের ফেসওয়াশ পাওয়া যায়। এক, হানি জেল। দুই, পাইনঅ্যাপেল জেল। প্রথমটি শুষ্ক ত্বককে ঠিক করে, আর দ্বিতীয়টি তৈলাক্ত ত্বককে স্বাভাবিক করে। গার্নিয়রেরও দুধরনের ফেসওয়াশ আছে। এক, ডিপ ফেসওয়াশ এবং দুই, ক্লিনফিল ফেসওয়াশ। এই ওয়াশ ফলের রসে সমৃদ্ধ।

ল্যাকমের পিএইচ ব্যালান্স ফেসওয়াশ, জনসন অ্যান্ড জনসনের ক্লিন অ্যান্ড ক্লিয়ার ফোমিং ফেসিয়াল ওয়াশ ইত্যাদিও সবরকম ত্বকের উপযুক্ত। তবে প্রাকৃতিক ফেসওয়াশের দাম বেশি হলেও, এই বিউটি-কিটে ত্বককে তরতাজা রাখা যায় খুবই সহজে।

স্কিন ক্লিঞ্জিং এবং টোনিং

বেশি সময়ের জন্য ত্বককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে হলে, আগে ভালোভাবে ত্বককে পরিষ্কার করতে হবে। তবে ত্বকের যত্নের জন্য শুধু ফেসওয়াশের ব্যবহারই যথেষ্ট নয়, রোমকূপের ময়লাও পরিষ্কার করতে হবে।

টোনার ত্বকের টোনিং তো করেই, সেইসঙ্গে ত্বকে মৃত কোশের আস্তরণকেও পরিষ্কার করে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ক্লিঞ্জার এবং টোনার পাওয়া যায়।

ল্যাকমের ডিপ পোর ক্লিঞ্জার মিল্ক, সামান্য শুষ্ক ত্বকের পক্ষে খুবই উপযুক্ত। আর তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ডিপ ক্লিঞ্জার (অ্যালকোহলযুক্ত) বাজারে পাওয়া যায়। গার্নিয়র সিনার্জির ক্লিঞ্জার মিল্ক বেস্ড প্রোডাক্টটি সবরকম স্কিনের জন্য উপযুক্ত। এছাড়া লোরিয়েল, পন্ডস্, বায়োটিক প্রভৃতি ব্র্যান্ডের ক্লিঞ্জার এবং টোনারও পাওয়া যায়।

শাহনাজ হুসেন গ্রুপের চন্দনযুক্ত ক্লিঞ্জার লোশন তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এবং ক্রিম বেস্ড ক্লিঞ্জার শুষ্ক ত্বকের জন্য খুবই উপযোগী।

ডেড স্কিনের যত্নে স্ক্রাব

সবরকম ত্বকের জন্যই স্ক্রাব খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ এটা মৃত কোশগুলিকে সরিয়ে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখে। শাগ্রেন, শা-স্ক্রাব, সাইড্রেস স্ক্রাব জেল, অ্যাপ্রিকট ইত্যাদি পাওয়া যায় বাজারে। এটা শুধু মুখের জন্য নয়, সারা শরীরে লাগানো যেতে পারে। মাত্র ৫ মিনিট হালকাভাবে ঘষে, ১০ মিনিট বাদে ধুয়ে ফেললেই সুফল পাওয়া যাবে।

ডারমাটোলজিস্টদের মতে, সপ্তাহে দু-তিনবার স্ক্রাব প্রয়োগ করা দরকার। আর স্ক্রাব প্রয়োগ করে কী ফল পাওয়া যায়, তা নিজেই একবার পরীক্ষা করে দেখুন।

ময়েশ্চারাইজার বা কোল্ডক্রিম

শীতকালেও যাদের ত্বক স্বাভাবিক থাকে, তারাও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। আর যাদের় শুষ্ক ত্বক, তাদের বেশি কোল্ডক্রিম ব্যবহার করা উচিত। হিমানি মালাই কেসর কোল্ডক্রিম ত্বককে খুব নরম রাখে।

ফেস প্যাক

ভিন্ন ত্বকের জন্য ভিন্ন ফেস প্যাক দরকার। সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কম বয়সের মহিলাদের ফেস প্যাকের পরিবর্তে স্ক্রাবের ব্যবহার করা উচিত। ২৫ বছর বয়সের পরে ফেস প্যাক বা স্ক্রাব ব্যবহার করা যায়।

সৌন্দর্য-সামগ্রী উৎপাদনকারী অগ্রণী

সংস্থা শাহনাজ হুসেন গ্রুপ লিমিটেডের প্রায় ৮ রকম ফেসপ্যাক বাজারে পাওয়া যায়। শাটেক্স, শাপিল, শায়াস্ক প্রভৃতি প্যাক, ত্বকের পক্ষে খুবই উপযোগী।

অন্যান্য প্রসিদ্ধ ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে বায়োটিক, ব্লসম, কোচরের অ্যারোমা ম্যাজিক, লোটাস, এভারইয়ুথ প্রভৃতি। এই প্যাকগুলি সবাই ব্যবহার করতে পারেন। তবে রেডিমেড ফেসপ্যাক সপ্তাহে দু’বার ব্যবহার করা উচিত। আর এসব কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেই সম্পর্কে বিশদে লেখা থাকে প্যাকেটের গায়ে। তবুও জানিয়়ে রাখি, ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেলার পর, ভালো কোনও ক্রিম দিয়ে মুখে হাল্কা করে ১০ মিনিট মাসাজ করুন। তবে চোখ এবং ঠোঁট বাদ দিয়ে। আর ক্রিম যখন শুকিয়ে গেছে মনে হবে, তখন আবার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

কিছু পরামর্শ

১) বাড়ি থেকে বাইরে বেরোনোর অন্তত ২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন।

২) রাতে শোওয়ার আগে অবশ্যই মেক-আপ ধুয়ে ফেলবেন।

৩) যদি হাত ফাটে, তাহলে ঈষদুষ্ণ জলে হাত ধুয়ে-মুছে নিয়ে হ্যান্ডলোশন লাগান।

৪) আর যদি পা ফাটে, তাহলে ওই একইরকমভাবে ঈষদুষ্ণ জলে পা ধুয়ে-মুছে নিয়ে ফুট-ক্রিম লাগান।

৫) যদি চোখের নীচে কালি পড়ে, তাহলে আন্ডার আই ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। ওই ক্রিম যদি বাদামতেলযুক্ত হয়, তাহলে আরও ভালো। অনেক ধরনের আন্ডার আইক্রিম বাজারে পাওয়া যায়।

৬) মাথায় যদি খুশকি থাকে তাহলে খুশকি দূর হবে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত।

৭) তৈলাক্ত নাকি শুষ্ক ত্বক, তা দেখে নিয়ে ফেসপ্যাক ব্যবহার করা উচিত।

ত্বকের সুরক্ষা

১) শীতকালে স্নানের জন্য খুব বেশি গরম জল ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ত্বকের স্বাভাবিক বর্ণ নষ্ট হয়ে শুষ্ক হয়ে উঠবে।

২) গ্লিসারিন-যুক্ত সাবান ব্যবহার করা উচিত শীতকালে।

৩) ছোবড়া দিয়ে হালকাভাবে শরীর ঘষুন। এতে রক্তসঞ্চালন ভালো হবে।

৪) পা ঘষার জন্য ফুট স্ক্রাপার ব্যবহার করা উচিত।

৫) সপ্তাহে অন্তত তিনবার স্নানের সময় স্ক্রাব ব্যবহার করা ভালো।

৬) স্নানের জলে দু-তিন ফোঁটা অলিভ অয়েল ফেলে স্নান করুন। ত্বক ভালো থাকবে।

৭) বোরোপ্লাস জাতীয় বডিলোশন ব্যবহার করা উচিত স্নানের পরে। এতে ত্বক বেশ নরম থাকবে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...