যিনি শোনার ক্ষমতা হারিয়েছেন, তিনি কিংবা তার বাড়ির লোকেরা বোঝেন কী ‘জ্বালা’। রোগী বঞ্চিত হন ভাবের আদানপ্রদান থেকে। পাখির কুজন, ঝরনার আওয়াজ, হাসির ছন্দ, সংগীতের মাধুর্য সবকিছুই তার কাছে নিরর্থক মনে হয়। তখন শুধুই হা-হুতাশই সার হয়। তাই, কানে শোনার সমস্যা যাতে না হয়, তার জন্য আগাম সতর্কতা এবং সুচিকিৎসার প্রয়োজন। ডা. দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি বধিরতার কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় ব্যাখ্যা করলেন বিশদে।

কানে কম শোনার কারণ কী?

মূলত দুটি কারণে কানে কম শোনার সমস্যা হয়। এরমধ্যে একটি কনজেনিটাল এবং দ্বিতীয়টি অ্যাকয়ার্ড।

কী কী কারণে কনজেনিটাল এবং অ্যাকয়ার্ড সমস্যা হয়?

কনজেনিটাল সমস্যা

  •  জন্মগত ভাবে কানে শোনার নার্ভটি ডেভেলপ না হলে
  • গর্ভাবস্থায় মায়ের কোনও জটিল অসুখ হলে
  • জন্মের পর শিশুর কোনও ভাইরাল ইনফেকশন হলে

অ্যাকয়ার্ড সমস্যা

  •  ৬০-৭০ বছর বয়সের পর শরীর কমজোরি হয়ে গেলে
  • কানে কোনও বড়ো চোট পেলে
  • ইমপ্যাকটেড ওয়াক্স, অর্থাৎ কানে ময়লা জমে শক্ত হয়ে গেলে
  • মিডিল-ইয়ার-এ সর্দি জমে গেলে (অর্থাৎ, ওটাইটিস মিডিয়া উইথ ইফিউশন)
  • কানের পর্দা ফুটো হয়ে গিয়ে পুঁজ জমলে
  • অটোস্কেলরোসিস ডিজিজ অর্থাৎ, কানের মধ্যে অবস্থিত স্টেপিস নামের হাড়টি ফিক্সড হয়ে গেলে

সবাই কি একইরকম কম শোনেন কানে নাকি কম শোনারও তারতম্য ঘটে সমস্যাভেদে?

কানে কম শোনার ধরন মূলত দুইপ্রকার –

কনডাকটিভ ডেফনেসঃ  এক্ষেত্রে মধ্যকর্ণে অবস্থিত ম্যালিয়াস, ইনকাস এবং স্টেপিস এই তিনটি হাড়ে কোনও সমস্যা হলে কিংবা কানের পর্দা ফুটো হয়ে গেলে নির্দিষ্ট মাত্রায় কম শোনার সমস্যা হয়।

নার্ভ (সেনসরি নিউরাল) ডেফনেসঃ  এটি একটি জটিল সমস্যা। এক্ষেত্রে কানে শোনার নার্ভ অকেজো হয়ে যেতে পারে এবং শ্রবণশক্তি প্রায় হারিয়ে যায়।

কানে শোনার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী?

চিকিৎসা

  •  কানে ময়লা জমলে ওষুধ দিয়ে ওয়াশ করে দিলেই আর শোনার সমস্যা থাকবে না
  • কানের পর্দা ফুটো হলে মাইক্রোসার্জারি করে শোনার সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যায়
  • যদি অ্যাডেনয়েড বড়ো থাকার জন্য, ক্রনিক ওয়াইটিস মিডিয়া উইদ ইফিউশন (সর্দি) হয়, তাহলে সার্জারি করে অ্যাডেনয়েক্টমি করে সমস্যামুক্ত করা হয়
  • বয়সজনিত কারণে শরীর কমজোরি হয়ে যদি কানে শোনার সমস্যা হয়, তাহলে হিয়ারিং এইড দিয়ে সমস্যা দূর করা যেতে পারে।

হিয়ারিং এইড কী এবং কীভাবে কাজ করে এই যন্ত্র?

হিয়ারিং এইড এমন একটি ছোট্ট যন্ত্র, যা মূলত শব্দকে অ্যামপ্লিফাইড করে দ্বিগুণ জোরে কানে পৌঁছে দেয়। আসলে, কানের ভিতরের নার্ভটি কমজোরি হয়ে গেলে হিয়ারিং এইড ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। অ্যানালগ হিয়ারিং এইড, ডিজিটাল হিয়ারিং এইড প্রভৃতি পাওয়া যায় বাজারে। তবে অ্যানালগ হিয়ারিং এইড-এ শব্দ জোরে শোনা গেলেও, তা দূষণমুক্ত (শব্দ) থাকে না। ফলে শব্দের উৎস সঠিক নির্ণয় করতে পারেন না রোগী। তাই এই হিয়ারিং এইড-এর জনপ্রিয়তা কম। তুলনায় ডিজিটাল হিয়ারিং এইড-এর জনপ্রিয়তা বেশি। কারণ, এই ডিজিটাল হিয়ারিং এইড পরিবেশগত শব্দকে অ্যামপ্লিফায়েড করে না, ফলে রোগী নয়েজফ্রি শব্দ শুনতে পান। অবশ্য বাজারে এখন আরও নানারকম মডার্ন হিয়ারিং এইড চলে এসেছে। এগুলি অনেক উন্নত এবং কসমেটিক্যালি গ্রহণযোগ্যও। যেমন– বডি ওর্ন হিয়ারিং এইড, বিহাইন্ড দ্য ইয়ার হিয়ারিং এইড, ইন দ্য ক্যানেল হিয়ারিং এইড প্রভৃতি।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...