অফিসের জন্য তৈরি হয়ে অনন্যা বাইরের ঘরে এসে দেখল, শাশুড়ি-মা বসে শ্বশুরের সঙ্গে গল্প করছেন। অনন্যা এসেই সুগন্ধার গলা জড়িয়ে ধরে অফিস যাওয়ার অনুমতি চেয়ে নিল। শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বাই বলে অফিসের ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিল। অজয়ের বাবা অনিরুদ্ধবাবু খুবই ভালোবাসেন অনন্যাকে।
সুগন্ধা বললেন, অনন্যা, আজ কিন্তু একটু তাড়াতাড়ি ফিরো। অজয়ের পিসিমা আসবেন সন্ধেবেলা।
মা, তাড়াতাড়ি আসা তো মুশকিল। অফিস থেকে পাঁচটায় বেরোলেও বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধে সাতটা তো বাজবেই। এসে দেখা হয়ে যাবে। তুমি চিন্তা কোরো না। বলে নিজেই জোর করে হাসি টেনে আনে মুখে। আর তাছাড়া পিসিমা তো আর আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন না। নিজের গুরুদেবের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন।
খানিক আগেই স্বামী অজয় ঘরে ঢুকেছে, অনন্যা খেয়াল করেনি। অজয়ে গলার আওয়াজে ওর দিকে দৃষ্টি পড়ল অনন্যার। ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসতে হাসতেই অজয় বলল, বাজে কথা বোলো না অনন্যা। ঠিক সময় চলে এসো।
হাসতে হাসতেই অনন্যা বেরিয়ে গেল।
মায়ে গম্ভীর মুখ দেখে অজয় সুগন্ধাকে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে মা? মুড খারাপ?
না, সংক্ষিপ্ত উত্তর পেয়ে অজয় বাবার দিকে তাকাল। অনিরুদ্ধবাবু ইশারায় ছেলেকে চুপ থাকতে বললেন। ইশারায় কথা বলে বাবা ছেলে দুজনের মুখেই চাপা হাসি ফুটে উঠল।
অজয় অফিস চলে গেলে অনিরুদ্ধবাবু নিজের স্ত্রীকে বললেন, আমি আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে চেষ্টা করব, দিদি আসার আগেই পৌঁছে যাব। কিন্তু তুমি এত কেন চুপচাপ?
স্বামী প্রশ্ন করতেই রাগে ফেটে পড়লেন সুগন্ধা। চুপ করে থাকব না তো আর কী করব? আর কত অ্যাডজাস্ট করব? সকাল থেকে ওইরকম বেহায়া ছেলের বউকে দেখে এমনিতেই আমার মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায়।
বেহায়া? অনন্যা? একথা কেন বলছ?
হাবভাব দেখছ তো, একে দেখে এ বাড়ির বউ বলে মনে হয়? সবসময় ঠাট্টা, ইয়ার্কি, সাজগোজ তারপর এই প্রাইভেট চাকরি! আর কথাবার্তার তো কোনও ছিরিছাঁদ নেই। কত ভেবেছিলাম বাড়ির বউ নম্র, ভদ্র হবে, মা-বাবার দেওয়া শিক্ষা-দীক্ষা থাকবে। কিন্তু না, যাই বলি না কেন এমন উত্তর দেবে যে, তারপর আর কিছু বলা চলে না। সব কথা হেসে উড়িয়ে দেয়। অথচ আমাদের মেয়ে অপর্ণাকে দেখো, শ্বশুরবাড়ির সকলে ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শাশুড়ি যা বলছেন তাই মাথা নীচু করে মেনে নিচ্ছে। আর আমাদের অজয় এমন একটা বেহায়া মেয়েে এনে আমাদের ঘাড়ে ফেলে দিয়েছে।