বাড়ির জিনিসপত্রের প্রতি যত্নশীল হলে ও মাঝেমাঝেই সেগুলি পরিষ্কার বা ঝাড়পোঁছ ইত্যাদি করলে, মেকানিক ডাকার প্রয়োজন অনেক কমে যায়। তাই নিজের ঘরের মেনটেনেন্স নিজেই করুন। এই প্রাত্যহিক রক্ষণাবেক্ষণের ফলে অনেক মোটা খরচের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন।

নিজেই শিখে নিন

বাড়িতে ব্যবহৃৎ অনেক মেশিনের নাটবোল্ট লুজ হয়ে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই নাটবোল্ট টাইট করাটা শিখে নিন। এজাতীয় রিপেয়ারিং নিজেই করে নিতে পারবেন। সব বাড়ির দেওয়ালেই পেরেকের গর্ত থাকে। এগুলো সব অ্যাডহেসিভ দিয়ে ভরাট করে দিন। জানলার ফাটল ভরাট করতে পুডিং ব্যবহার করুন।

বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র

বাড়ির নানা জায়গাতেই আলোর বাল্ব লাগানো থাকে। হঠাৎই কোনও বাল্ব কেটে যেতে পারে। সেটাও নিজেই পালটে নিন। মাঝেমাঝে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং চেক করুন। কোথাও যেন খোলা তার না থাকে। এতে শক লাগতে পারে ও স্পার্কিং হতে পারে। আগুন লাগাও অসম্ভব নয়। তাই এইরকম দেখলে, সঙ্গে সঙ্গে টেপ মেরে দিন। ওয়্যারিং ক্লিপ লুজ হয়ে গেছে দেখলে, তা টাইট করে দিন। এতে, তার ঝুলে থাকবে না ও ঘরের শোভা বর্ধনে অন্তরায় হবে না। লক্ষ্য রাখুন, ঘরে ইঁদুরের উৎপাত না হয়। ইঁদুর বৈদ্যুতিক তার কেটে দিতে পারে। ঘরের দামি জিনিসপত্রও নষ্ট করে।

নর্দমা পরিষ্কার করা

আমাদের নিজেদের দোষেই বাড়ির নর্দমায় ময়লা জমে। তারপর নর্দমা বুজে গেলে, নিকাশিকর্মীর ডাক পড়ে। এরকম হওয়ার আগে, স্বাস্থ্যকর পরিবেশরক্ষার জন্য মাঝেমাঝে নিজেই নর্দমা পরিষ্কার করুন।

ভাঙাচোরা সারানো

ঘরের কোনও জিনিস, ফার্নিচার বা দরজাজানলার কোনা ভেঙে গেলে, সিমেন্টিং-ক্লে জাতীয় কিছু কিনে নিজেই সেই অংশটুকু সারিয়ে ফেলুন। পরে বাড়িতে কখনও মিস্ত্রি লাগলে, স্থায়ীভাবে সেটা মেরামত করিয়ে নিতে পারবেন। তাৎক্ষণিকভাবে আপনাকে আর মিস্ত্রি ডাকতে হবে না।

লিকেজ থামানো

জল চুঁইয়ে বের হওয়ার সমস্যা খুবই সাধারণ। এটিকে গুরুত্ব না দিলে, একসময় এটি বৃহৎ আকার ধারণ করতে পারে। তাই কোনও পাইপ বা কলে যদি সামান্য লিকেজ দেখা দেয়, তবে নিজেই পুডিং দিয়ে তা বন্ধ করে দিন। বেশি পরিমাণে জল বের হলে অবশ্য কলের মিস্ত্রি ডাকতেই হবে।

বাথরুমের রক্ষণাবেক্ষণ

বাথরুম বা টয়লেটের টাইলসের প্রতি কেউ বেশি গুরুত্ব দেয় না। টাইলস্ যখন খুব নোংরা হয়ে যায়, তখন তা পরিষ্কার করতে গেলে বহু সময় লেগে যায়। এরচেয়ে সপ্তাহে একবার করে টাইলস, কাপড় দিয়ে ঘষে দেওয়াটা সহজ। বাথরুমের বাথটাব চকচকে করে তুলতে কেরোসিনের জবাব নেই। কেরোসিন তেলে, বাথটাবের জীবাণুও দূর হয়।

ফাটলে নজর দিন

বাড়ির দরজাজানলায় নানান ফাটল সৃষ্টি হয়। এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিন। কোনও অ্যাডহেসিভ দিয়ে চটপট এগুলো বন্ধ করে দিন। না হলে যে-কোনও ফাটলই কীটপতঙ্গের লুকোনোর জায়গা হয়ে ওঠে। এখানে তারা ডিম পাড়ে ও বংশবৃদ্ধিও করে। ফাটল, বাড়ির হিটিং ও কুলিং সিস্টেমকেও সঠিকভাবে কাজ করতে দেয় না। কারণ যে-কোনও ফাটল দিয়ে উত্তাপ লিক করে।

আসবাবের রক্ষণাবেক্ষণ

কাঠের ফার্নিচারে অল্প দাগ লাগলে কিংবা দীর্ঘদিন ফার্নিচারের শ্রী অক্ষুণ্ণ রাখতে তাতে পালিশ করতে থাকুন। দাগ তুলতে জুতোর পালিশ সবচেয়ে কার্যকরী। একটা খালি পাত্রে চ্-্ব ধরনের আলাদা রঙের পালিশ মিশিয়ে নিন। শুকনো কাপড় দিয়ে এই পালিশ আস্তে আস্তে ফার্নিচারে লাগান। দেখবেন আপনার আসবাব নতুনের রূপ ফিরে পাবে।

ধাতব বস্তুর যত্ন

দরজাজানলার তামা বা পেতলের হাতল বা রিং, বাসনকোশন বা ঘর সাজাবার জিনিস চকচকে করে তুলতে, লেবুর রস ও নুন অপরিহার্য।

কার্পেটের যত্ন

মেঝেতে কার্পেট পাতার আগে খবরের কাগজ পেতে দিন। এতে মেঝেতে ড্যাম্পভাব থাকলে, তা কার্পেটে লাগবে না। তাছাড়া কার্পেটের তলায় যে ধূলোময়লা জমে, সেগুলো সরাসরি মেঝেতে জমবে না। এর ফলে মেঝেতে দাগ হওয়া আটকানো যাবে। কার্পেটে সরাসরি কোনও দাগ ধরলে, তা কার্বন টেট্রাক্লোরাইড দিয়ে তোলা যাবে। কার্পেটকে প্রতিদিন ভ্যাকুয়াম ক্লিন করা উচিত।

বাড়ির বাইরের অংশের যত্ন

বাড়ির বাইরের লাইট বা উঁচু কার্নিশ, বছরে অন্তত একবার পরিষ্কার করুন। এতে পাখিরা সেখানে জঞ্জাল জমিয়ে নোংরা করতে পারবে না।

দরজাজানলা

কাঠের পাল্লার দরজা, বিশেষকরে বাথরুমের দরজা, নীচের দিক থেকে খারাপ হতে থাকে। তাই ছ’মাস অন্তর এই দরজায় রং করাতে থাকুন। অনেকসময় দরজাজানলার ছিটকিনি খারাপ হয়ে যায়। এদিকেও লক্ষ্য রাখুন। না হলে যখন কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন, তখন খেয়াল হবে দরজাজানলা নিরাপদভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না।

বাড়ির গাছপালার যত্ন

বাড়ির বাইরে ও ভিতরে টবের গাছ ও বাগানের পরিচ্ছন্নতা ও মেরামতির দিকে নজর রাখুন। বাড়ির ভিতরে রাখা কোনও টব পুরোনো হলে, তা পালটে দিন, নইলে তা হঠাৎ একদিন ভেঙে গেলে মাটি বা জল পড়ে, মেঝে নোংরা হবে। বাগানের গাছপালার ডালপালাও মাঝেমাঝে কেটে ছোটো করে দিন।

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি

বাড়ির টুলবক্সে স্ক্রু- ড্রাইভার, হাতুড়ি, প্লাস ইত্যাদি সাধারণ যন্ত্রপাতি জোগাড় করে রাখুন। নানান প্রয়োজনে এগুলো কাজে লাগবে। ছোটেখাটো দরকারে এগুলো না পেলে, আপনাকে মিস্ত্রি ডাকতে হবে।

অন্যান্য জিনিসপত্রের যত্ন

ওয়াটার ফিল্টার, এসি, শাওয়ার সিস্টেম ইত্যাদি সপ্তাহে একবার খুলে পরিষ্কার করুন। কোনও অংশ পালটানোর দরকার হলেও তা করুন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...