ঘরদোরের পরিচ্ছন্নতার সরাসরি প্রভাব পড়ে আমাদের শরীর ও মনে। তাই শুধু নিজেকে নয়, পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে নিজের বাসস্থানকেও। কারণ, Home hygiene বা পরিচ্ছন্নতাই সুস্থতার প্রধম ধাপ।

ভেবে দেখুন, সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর বাড়ি ফিরে আপনি নিজে যেমন আরামে থাকতে চাইবেন, আপনার পরিবারের সদস্যরাও তাই চাইবেন। কিন্তু যদি অগোছালো ঘর, নোনা ধরা, রং-চটা দেয়াল, ম্লান আলো, স্যাঁতসেঁতে মেঝে কিংবা মশা, আরশোলা, টিকটিকি, ইঁদুর প্রভৃতি চোখে পড়ে, তাহলে অবসাদ গ্রাস করার সম্ভাবনা প্রবল।

নিউরো স্পেশালিস্ট-এর মতে, ঘরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ যদি সৌন্দর্যহীন থাকে কিংবা Hygienic না হয়, তাহলে এর কুপ্রভাব পড়তে পারে ওই ঘরে বসবাসকারী সদস্যদের উপর। আর এই অপরিচ্ছন্নতার সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে বাড়ির বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটতে বাধ্য।

মনে রাখবেন, আমাদের দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বছরের কয়েটা মাস বাদ দিলে, বেশিরভাগ সময়ই আবহাওয়া থাকে ভ্যাপসা। বৃষ্টি এবং বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে বাড়িঘরে পোকামাকড়, জীবাণু প্রভৃতির উপদ্রব বাড়তে থাকে। আর এই পোকামাকড়ের উপস্থিতি যেমন বিরক্তিকর, ঠিক তেমনই হতে পারে স্বাস্থ্যহানির কারণ। অতএব, জেনে রাখুন পরিচ্ছন্নতার উপায়।

আলো-হাওয়ার ব্যবস্থা

প্রতিটি ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো-হাওয়া ঢোকে, তার ব্যবস্থা করা জরুরি। এর জন্য, প্রতিটি ঘরে একটি বা দুটি জানলা রাখা প্রয়োজন। দিনেরবেলা যতক্ষণ বাড়িতে থাকবেন, ততক্ষণ যতটা সম্ভব জানলা-দরজা খুলে রেখে আলো-হাওয়া ঢোকার ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজন হলে, বক্স-টাইপ জানলা করে তাতে মশকুইটো নেট ব্যবহার করুন, যাতে জানলা খুলে রাখলেও পোকামাকড় ঢুকতে না পারে। অবশ্য শুধু শোওয়ার ঘর নয়, বসার ঘর, রান্নাঘর, শৌচালয় প্রভৃতি জায়গাতে একই ভাবে আলো-হাওয়া ঢোকার ব্যবস্থা রাখুন। প্রতিটি ঘরে জমে থাকা অস্বাস্থ্যকর হাওয়া বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য এগ্জস্ট ফ্যান-এর ব্যবস্থা করুন। যে-সব ঘরে প্রাকৃতিক আলো কম ঢোকে, সেইসব ঘরে উপযুক্ত বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রাখুন। খরচ বাঁচানোর জন্য সম্ভব হলে সোলার পাওয়ার লাইট ব্যবহার করতে পারেন।

পোকামাকড় আটকান

স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার কারণে ঘরে আরশোলা, উই, পিঁপড়ে, মশা, মাছি, ইঁদুর প্রভতির উপদ্রব বাড়ে। প্রথম থেকেই যদি এসব না আটকানো যায়, তাহলে জ্বর, অ্যাজমা, টিবি, ডায়ারিয়া প্রভৃতি অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, ঘরদোর যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং তিনমাস অন্তর একবার Pest control করান পেশাদার কর্মীদের সাহায্যে।

নর্দমা পরিষ্কার রাখুন

মাথার চুল কিংবা প্লাস্টিকজাতীয় কোনও কিছু নর্দমায় ফেলবেন না। এমনকী, আনাজের কোনও খোসাও নয়। ভাতের মাড় ফেলার আগে তা জল দিয়ে পাতলা করে ফেলুন। কারণ, নর্দমায় গাঢ় কিছু ফেললে জল নিকাশ হবে না ঠিকমতো এবং ময়লা জমে, পচে গন্ধ বেরোতে থাকবে। অতএব, নর্দমা পরিষ্কার রাখুন। তবে, এই তিনটি বিষয় ছাড়াও, আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, যা যত্ন সহকারে করলে তবেই বাড়িঘরে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা যাবে।

যা যা করণীয় :

  • ঘরের দেয়ালে নোনা ধরতে দেবেন না। বাজারে এখন ড্যাম্প প্রুফ রং পাওয়া যায়, ওই রং ব্যবহার করুন প্রতি পাঁচ বছর অন্তর
  • জানলা-দরজার ফ্রেম অথবা পাল্লায় ফাটল কিংবা গর্ত তৈরি হলে, তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুডিং দিয়ে আটকান। কারণ, ওইসব ফাটল কিংবা গর্তে কীটপতঙ্গ বাসা বাঁধার প্রবল সম্ভাবনা আছে
  • জলের পাইপে কোনও ফাটল দেখলে তখনই তা গামটেপ দিয়ে আটকান। নয়তো জল চুঁইয়ে দেয়াল এবং পাইপে শ্যাওলা পড়তে পারে। আর এই স্যাঁতসেঁতে এবং শ্যাওলাযুক্ত জায়গায় বাসা বাঁধতে পারে জীবাণু
  • বাথরুম-এর টাইল্স-এ দাগছোপ এবং ধুলোময়লা জমতে দেবেন না। কারণ, এর ফলে জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। তাই, সপ্তাহে অন্তত একদিন লিকুইড সোপ দিয়ে টাইল্স পরিষ্কার করুন
  • মেঝে মোছার সময় সামান্য কেরোসিন ব্যবহার করুন, এতে দুর্গন্ধ দূর হবে এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব কমবে
  • রান্নাঘর এবং শৌচালয়ে নিকাশি পাইপ-এ মাঝেমধ্যে ড্রেনক্লিনার লিকুইড ঢেলে দিন। এতে ময়লা জমে থাকবে না এবং নিকাশি ব্যবস্থা উপযুক্ত থাকবে
  • ঘরদোরে যততত্র ধুলোময়লা জমিয়ে রাখবেন না। কারণ, ধুলোময়লা জমিয়ে রাখলে কীটপতঙ্গ বাসা বাঁধবে
  • ঘরে এসি মেশিন ব্যবহার করলে, বিছানাপত্তর মাঝেমধ্যে কড়া রোদে রাখুন। নয়তো, ফাংগাস পড়ে জীবাণু তৈরি হতে পারে
  • ঘরে কিংবা বারান্দায় গাছ বসানো টব রাখলে, মাঝেমধ্যে কীটনাশক স্প্রে করুন। এতে গাছ এবং বাড়ির পরিবেশ দুই-ই সুরক্ষিত থাকবে
  • পচা খাবার, উচ্ছিষ্ট, সবজির খোসা প্রভৃতি একবেলার বেশি ঘরে জমিয়ে রাখবেন না। কারণ, এসব জমিয়ে রাখলে দুর্গন্ধ এবং জীবাণু দুটোই উত্পন্ন হতে পারে
  • ঘরের ভিতর ভেজা জামাকাপড় মেলে রাখবেন না। কারণ, জামাকাপড়ের জল থেকে ঘরের আবহাওয়া ভ্যাপসা হয়ে উঠবে
  • বাথরুম-এ একই জল দীর্ঘদিন জমিয়ে রাখবেন না। কারণ, পরিষ্কার জমা জলে মশা জন্মায়
  • দরজা-জানলার পর্দা প্রতি পনেরো দিন অন্তর কেচে ধুয়ে কড়া রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করুন। এতে ঘরে জীবাণু বাসা বাঁধবে না
  • মাকড়সা, আরশোলা, টিকটিকি এবং ইঁদুরের উপদ্রব আটকানোর জন্য স্ট্রং গামযুক্ত পেপারবোর্ড ব্যবহার করুন। ঘরের দেয়াল এবং অন্ধকার জায়গায় এই বোর্ড-এ টাচ করলেই আটকে থাকবে ইঁদুর, আরশোলা, টিকটিকি, মাকড়সা সবকিছু।

এইসব মেনে চললে যেমন ঘরদোর পরিষ্কার রাখা যাবে অনয়াসেই, ঠিক তেমনই নিজের এবং পরিবারের সবার শরীর এবং মনও সুস্থ থাকবে। আর সেইসঙ্গে, আপনার সুরুচির পরিচয়ও প্রতিফলিত হবে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...