শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অরগান লিভার। কারণ, এই লিভারের উপর নির্ভর করে শারীরিক সুস্থতার অনেকটাই। লিভারের যে-কোনও অসুখের ছাপ পড়ে চেহারায়। ত্বকের স্বাভাবিক বর্ণও নষ্ট হয়ে যায় লিভারের অসুখে। মাথায় টাক পড়ে। খাবার হজম না হয়ে গ্যাসের উৎপত্তি হয় এবং সেই গ্যাস অনেকসময় হৃদপিণ্ডের চলন স্তব্ধ করে দিতে পারে। আর লিভারের যে-কয়েকটি অসুখ আছে, লিভার ক্যানসার তারমধ্যে সবচেয়ে বড়ো অসুখ। কিন্তু কখন, কেন হয় লিভার ক্যানসার? এর থেকে পরিত্রাণের উপায়-ই বা কী? এবিষয়ে সমস্ত কৌতূহল মেটালেন ডা. অভীক ভট্টাচার্য।
লিভার ক্যানসার কী?
লিভার সংক্রমিত হয় বেশিরভাগই ভাইরাস দ্বারা। এই তালিকায় রয়েছে হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি। এছাড়া ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এবং সিরোসিস অফ লিভারও রয়েছে। এগুলি থেকেই অনেক সময় হয় লিভার ক্যানসার। যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় এখন বলা হচ্ছে হেপাটোসেলুলার কারসিনোমা বা এইচ সিসি।
লিভার ক্যানসার-এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কি বাড়ছে ক্রমশ?
সত্যি বলতে কি, এই আধুনিক সময়ে লিভার আক্রান্ত হচ্ছে নানা রকম রোগে। আর দশটা সাধারণ রোগের মতোই নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছে লিভার। বছরে প্রতি পাঁচজন ভারতীয়-র মধ্যে একজন ভারতীয় আক্রান্ত হচ্ছেন লিভার ডিজিজ-এ। প্রায় আড়াই লক্ষ ভারতীয় এখন ভুগছেন লিভারের সমস্যায়। হেপাটোসেলুলার কারসিনোমা বা এইচ সিসি-র কারণে মৃত্যুও ঘটছে রোগীর। সারা পৃথিবীতে এখন এইচ সিসি-তে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ। পরিসংখ্যান বলছে, এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
এইচ সিসি-তে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে কেন?
দেরিতে ডায়াগোনোসিস করার কারণেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বেশি। অথচ এখন আমাদের দেশে প্রপার স্ক্রিনিং ফেসিলিটি রয়েছে। তবুও অনেকে অনীহা কিংবা নানা কারণে শেষ মুহূর্তে লিভার ডিজিজ-এর চিকিৎসা শুরু করেন। তাছাড়া, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অত্যধিক ধূমপান, মদ্যপান প্রভৃতির কারণেও এইচ সিসি-তে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে।
কখন এবং কীভাবে ডায়াগোনোসিস করা হয়?
ভারতবর্ষে মাত্র কুড়ি শতাংশ রোগী সঠিক সময়ে ডায়াগোনোস করেন। বাকি আশি শতাংশ রোগী প্রায় শেষ মুহূর্তে ডায়াগোনোস করতে আসেন। কিন্তু আরলি স্টেজ-এ টিউমার স্ক্যানিং করে চিকিৎসা শুরু করলে রোগীকে বহুদিন বাঁচিয়ে রাখা যায় কিংবা পুরোপুরি সারিয়ে তোলা যায়। তাই, কোনওরকম শারীরিক অসুবিধা অনুভব করলে কিংবা টিউমার রয়েছে সন্দেহ হলে, যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যান এবং পরীক্ষানিরীক্ষা করান। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ যদি শুরুতেই চিকিৎসা করা যায়, তাহলে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
চিকিৎসা পদ্ধতিটা-ই বা কী?
যদি প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়ে তাহলে চিকিৎসা করা যায় সহজে। অন্যথায়, সার্জারি কিংবা লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা ছাড়া উপায় থাকে না। যদি লিভারের কিছুটা অংশ ড্যামেজ হয়, তাহলে হেপাটেক্টমি সার্জারি করা হয়। কিন্তু যদি ক্যানসারে পুরো লিভার নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া দ্বিতীয় পথ খোলা নেই। তাই এক্ষেত্রে দ্রুত সঠিক ভাবে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। আর যদি ছোটো টিউমার ধরা পড়ে এবং তার মধ্যে ক্যানসার থাকে, তাহলে টিউমার রিমুভ করা হয়। আর যদি ক্যানসার বেশি ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে ইন্টারভেনশনাল রেডিয়োলজি করা হয়ে থাকে। একটা নিডল ঢুকিয়ে টিউমার-কে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে রোগীর সেরে ওঠার চান্স পঞ্চাশ শতাংশ।