বর্তমানে করোনা ভাইরাসের ভয়ংকর সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এই সতর্কতার মধ্যে অবশ্যই রয়েছে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি। আর এই ইমিউনিটি এতটাই স্ট্রং রাখা উচিত যে, শুধু করোনা ভাইরাস-ই নয়, কোনও জীবাণু যাতে শরীরে বাসা বাঁধতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করা উচিত। তবে এই প্রতিরোধ তখনই সম্পূর্ণ হবে, যখন ডায়েটে ইমিউনিটি বুস্টিং উপকরণ থাকবে। অবশ্য এই উপকরণের জন্য খুব কষ্ট করতে হবে না কিংবা অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হবে না। এইসব উপকরণ আপনার রান্নাঘরেই রয়েছে।

ইমিউনিটি বাড়ানোর যে-সব উপকরণের কথা জানানো হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম কার‌্যকরী ভূমিকা পালন করে মশলা। তাই জেনে রাখুন, মশলা শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না, ইমিউনিটি বুস্টিংয়ের ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফরিদাবাদের ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স-এর ডায়েটিসিয়ান ডা. বিভা জানিয়েছেন, কোন কোন মশলা ইমিউনিটি বাড়ায়।

হলুদ

হলুদ এমন এক মশলা, যা সবার রান্নাঘরে মজুত থাকে। আর এই সহজলভ্য উপাদানটি প্রায় সব রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এই হলুদকে বলা হয় ফ্লু-ফাইটার। এক রিপোর্ট-এ প্রকাশিত যে, করকিউমিন নামক এক উপাদান থাকে হলুদে, যা অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি প্রপার্টিজ সমৃদ্ধ। তবে রান্নায় হলুদ ব্যবহার করে, শরীরের যা লাভ হয়, তার থেকে বহুগুণ বেশি সুফল পাওয়া যায় দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পান করলে।

ডায়েটিসিয়ান ডা. বিভা জানিয়েছেন, আজকাল অনেক অসাধু ব্যবসায়ী হলুদের সঙ্গে অন্যকিছু মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। অনেকে সীসাও মিশিয়ে দেন, যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তাই যখনই হলুদ কিনবেন, তা ১০০ শতাংশ খাঁটি কিনা তা যাচাই করে নেবেন। তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে শুকনো গোটা হলুদ কিনে এনে জলে ভিজিয়ে রেখে বেটে নিয়ে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করবেন। অথবা, কাঁচা হলুদ পিষে নিয়ে তাও দুধে মিশিয়ে পান করতে পারলে সুফল পাবেন। কারণ, হলুদ খেলে রেসপিরেটরি ট্র‌্যাক ভাইরাসের আক্রমণ থেকে শরীরকে বাঁচাতে পারবেন।

হলুদের পরিমাণ : রান্নায় হলুদ ব্যবহার বেশি করলেও, দুধের সঙ্গে মাত্র এক চামচ হলুদ মিশিয়ে পান করতে হবে, বেশি নয়। কারণ, মাত্রাতিরিক্ত কোনও কিছুই ভালো নয়, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

সতর্কতা : শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে হলুদ। তাই খুব বেশি হলুদ খাবেন না। এতে পেট গরম এমনকী পুরো শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ফলে, পেট খারাপ, শরীরের অতিরিক্ত ঘাম প্রভৃতি সমস্যায় কষ্ট হতে পারে। এমনকী আয়রনের ঘাটতিও হতে পারে।

দারচিনি

সর্দিকাশি হলে দারচিনি মেশানো চা পান করলে যেমন তৃপ্তি পাওয়া যায়, ঠিক তেমনই তা সর্দিকাশি দূর করতেও সাহায্য করে। কারণ, দারচিনি অ্যান্টিবায়োটিক-এর কাজ করে এবং শরীরকে গরম রাখে। তবে শুধু চা-এ নয়, দারচিনি রান্নায় ব্যবহার করেও রান্না যেমন মুখরোচক করা যায়, তেমনই কিছু উপকারও পাওয়া যায়। অর্থাৎ, দারচিনি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে দারুণ ভাবে। আর এই দারচিনি খেতে পারেন সব বয়সের মানুষ এবং সবাই কমবেশি উপকার পাবেন।

দারচিনিতে থাকে পেলিফেনোল্স নামক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস্ উপাদান। এই উপাদান শরীরকে ফ্রোরেডিক্যাল্স থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে সিনেমেল্ডিহাইড নামের উপাদান থাকে, যা সবরকম সংক্রমণ থেকেও বাঁচায় শরীরকে। গোটা কিংবা গুঁড়ো সবরকম ভাবে ব্যবহার করা যায় দারচিনি।

দারচিনির পরিমাণ : প্রতিদিন এক গ্রাম করে চা-এ মিশিয়ে কিংবা রান্নায় ব্যবহার করে খেতে পারেন। এতে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে।

সতর্কতা : দারচিনিতে যেহেতু সিনেমেল্ডিহাইড উপাদান থাকে, তাই বেশি খেলে চুলকানির সমস্যা হতে পারে এবং মুখে ঘা হতে পারে। তাই প্রতিদিন ১ গ্রামের বেশি দারচিনি কোনও ভাবেই ব্যবহার করবেন না।

মেথিদানা

পাঁচফোড়নের মধ্যে অন্যতম উপাদান হল মেথি। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য মেথির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে মেথিকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না কিন্তু লিভার ঠান্ডা রাখতে কিংবা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত সহায়ক উপাদান হল মেথি। মেথি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস সমৃদ্ধ। সেইসঙ্গে, কপার, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে, শরীরকে পুষ্টি জোগাতেও সাহায্য করে।

মেথির ব্যবহার : রান্নায় ব্যবহার করে কিংবা জলে ভিজিয়ে সেই জল পান করলে উপকার পাবেন। তবে দৈনিক ৫ গ্রামের বেশি নয়।

সতর্কতা : মেথি যেহেতু একটু তেতো স্বাদের, তাই বেশি খেলে বমি ভাব আসতে পারে। অতএব, সঠিক মাত্রা বজায় রাখুন।

গোলমরিচ

শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর সমস্ত দেশের মানুষ নানা ভাবে খান গোলমরিচ। কেউ রান্নায় ব্যবহার করেন, কেউ বা আবার বিভিন্ন খাবার অথবা স্যালাড-এ গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়িয়ে স্বাদ বাড়ান।

গোলমরিচে রয়েে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান। এই দুই উপাদান সবরকম সংক্রমণের থেকে রক্ষা করে আমাদের শরীরকে। এছাড়া, নাক বন্ধ থাকলে কিংবা শ্বাসকষ্ট হলে, গোলমরিচের গুঁড়ো জলে ফুটিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে, চুলকানির সমস্যা থাকলে কিংবা দাঁতে ব্যথা হলে গোলমরিচ-যুক্ত চা পান করলে উপকার মেলে। হজমশক্তি বাড়িয়ে লিভার ভালো রাখতেও সাহায্য করে গোলমরিচ। আর লিভার ভালো থাকলেই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

গোলমরিচের পরিমাণ : চা চামচের চারভাগের এক ভাগ গোলমরিচ খেতে পারেন প্রতিদিন, তবে এর বেশি নয়।

সতর্কতা : গোলমরিচ যেহেতু শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়, তাই যাদের হাই ব্লাড প্রেসার-এর সমস্যা আছে, তারা গোলমরিচ খাবেন না।

আদা

অত্যন্ত সুফলদায়ক মশলা হল আদা। প্রতিদিন একটু আদা খেলে অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কারণ, আদায় রয়েে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস। তাই, অনেকরকম জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে আদা। অর্থাৎ, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া, গ্যাস-অম্বল এবং হজমের সমস্যাও দূর করে আদা। আর্থরাইটিস-এর সমস্যায় যারা ভোগেন, যন্ত্রণা লাঘব করতে তাদের আদা খাওয়া উচিত প্রতিদিন। আদা ওজন কমায়, মাথা ধরার সমস্যা দূর করে এবং ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়। সর্দিকাশি দূর করতেও কার্যকরী ভূমিকা নেয় আদা।

আদার ব্যবহার : প্রতিদিন এক টুকরো অর্থাৎ, ১০ গ্রামের মতো আদা খেতে পারেন কিন্তু এর বেশি নয়। রান্না ছাড়াও, চা-এ কিংবা গরম জলে আদা ফুটিয়ে সেই আদা-জল পান করতে পারেন প্রতিদিন একবার।

সতর্কতা : যারা সুগারের রোগী, তারা আদা কম খাবেন। কারণ, বেশি আদা খেলে শরীরে ইনসুলিন-এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া প্রযোজনের তুলনায় বেশি আদা খেলে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে এবং স্টমাকে কুপ্রভাব পড়তে পারে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...