অনেক বাড়িতেই দেখা যায় বাচ্চার ঘর খুব এলোমেলো অগোছালো হয়ে থাকে৷ সন্তান এখনও ছোটো, পারবে না বলে অনেক অভিভাবকই তাদের ঘর গোছানোর মতো কাজ করতে দেন না। এতে তাদের মধ্যে গোছানোর অভ্যাস কখনো তৈরি হয় না। শিশুরা খেলতে ভালোবাসে। খেলার ছলেও কিন্তু তাদের মধ্যে ঘর গোছানোর অভ্যাস তৈরি করা যায়।
অনের শিশুই ঘরের মধ্যে খেলনা, বই-খাতা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখে। তাই শিশুকে ছোটো থেকেই ঘর গুছিয়ে রাখার কৌশল শেখালে, বড়ো হয়ে সে নিজেই গুছিয়ে রাখবে নিজের ঘর।ওয়ার্কপ্লেস-এও এই সুঅভ্যাস তাকে সবার প্রিয় করে তুলবে৷
জেনে নিন কীভাবে ওদের ঘর গুছিয়ে রাখতে শেখাবেন।
খেলনা
খেলনা কিন্তু বাচ্চাদের খুবই প্রিয়। ওরা খেলতে খুবই ভালোবাসে।খেলনা বা পুতুলের ক্ষেত্রে ওয়ান ইন-ওয়ান-আউট নিয়ম করে দিন।একটা করে খেলনা নিয়ে খেলবে৷ পরেরটা নামানোর আগে সেই খেলনা তুলে রাখবে, এমন নিয়ম করে দিন৷ এছাড়া যখনই নতুন কোনও খেলনা কেনা হবে পুরনো খেলনা কাউকে দিয়ে দিন। কারণ বাচ্চারা কখনওই একই খেলনা নিয়ে বেশি দিন খেলে না৷ ভেঙে যাওয়া কোনও খেলনা থাকলে তা ফেলে দিন।
মনে রাখা দরকার, ঘরে নতুন খেলনা আসলেই পুরনো খেলনার প্রতি তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। বাচ্চার ঘরের জন্য ট্রান্সপারেন্ট বক্স কিনে আনুন। যাতে যে খেলনা প্রয়োজন, সেটা সে সহজেই যাতে বের করে আনতে পারে৷
বই
কালার কো়ড মেনে বাচ্চাদের বইগুলো সাজাতে পারেন।এতে বাচ্চা এটা নিজে হাতে করতে বেশ মজা পাবে৷ অথবা আলাদা আলাদা সেলফে ছবির বই, গল্পের বই, রিডিং মেটিরিয়াল করে রাখুন। এ ভাবে সাজিয়ে রাখা অভ্যাস করালে বাচ্চা বড়ো হলে নিজেই সাজিয়ে রাখবে।এতে তার বিপত্র খুঁজে পেতে সুবিধাই হবে৷
জামা-কাপড়
বাচ্চাদের বড়ো হবার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের জামা-কাপড়ও দ্রুত ছোটো হয়ে যায়। এসব জামা-কাপড় জমিয়ে না রেখে পরিবারের মধ্যে ছোটো কাউকে দিতে পারেন। না হলে দুঃস্থ শিশুদের মধ্যেও দিয়ে দিতে পারেন। জিনিসটাও কাজে লাগবে, বাড়িতেও জঞ্জাল হবে না।
বাচ্চাকে প্রতিদিন তার জামাকাপড় বাস্কেট বা তাকে গুছিয়ে রাখতে বলুন৷ঋতু অনুযায়ী জামাকাপড় সাজিয়ে রাখতে শেখান৷
আসবাব
বাচ্চাদের ঘরে আসবাবপত্র বেশি হয়ে গেলে ওদের চলাফেরা, খেলা করতে অসুবিধা হয়। ঘর বেশি ছড়ানো-ছিটানো থাকলে বাচ্চারা পড়াশোনাতেও মনোযোগী হতে পারে না। হয়তো বাচ্চা বড়ো হয়ে গিয়েছে, অথচ ছোটোবেলার চেয়ার-টেবিল এখনও ঘরে রয়ে গিয়েছে। এগুলো সরিয়ে ফেলুন। শিশুর ঘরে রাখার জন্য ফোল্ডেবল ফার্নিচার কিনুন। যাতে ঘর গোছানো লাগে এবং ঘরের জায়গাটাও বাড়ে।
প্রতিটি আসবাব যেন তার নির্দিষ্ট জায়গায় থাকে, সেটা ছোটো থেকেই ওকে শেখান৷এতে দুর্ঘটনাও কম ঘটবে৷
গ্যাজেট
আইপ্যাড, আইপড বা ভিডিও গেমস আজকাল খেলনার মতোই গুরুত্বপূর্ণ বাচ্চাদের কাছে। বেশির ভাগ সময়ই বাচ্চারা তার, চার্জার, অ্যাডপটর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। যা বিপজ্জনকও হয়ে উঠতে পারে। তাই আলাদা ড্রয়ার রাখুন যেখানে বাচ্চাকে এগুলো গুছিয়ে রাখতে নির্দেশ দিন।এতে ঘর পরিষ্কারও থাকবে, বাচ্চার জন্যও নিরাপদ হবে।
অভিভাবকরা মনে রাখুন
- শিশুদের জোর করে কিছু করানো উচিত নয়। ঘর গোছানো নিয়ে তাকে জোর করা যাবে না। পড়াশোনা, খেলাধুলা শেষে শিশুকে বলুন সে যদি তার নিজের জিনিসগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় গুছিয়ে রাখে তবে পরবর্তী সময়ে সময়ে সহজেই সে খুঁজে পাবে। এতে শিশুর ঘর গুছিয়ে রাখায় আগ্রহ বাড়বে
- শিশু যদি তার পছন্দমতো জায়গায় জিনিস রাখতে চায়, তবে তা পরিবর্তন করবেন না। তাদের ব্যক্তিত্ব, মতামত আলাদা। সেই মতামতকে গুরুত্ব দিতে শিখুন। শিশু নিজের কাজের গুরুত্ব বুঝতে শিখবে
- শুরুতে শিশু ঘর যেভাবেই গোছাক না কেন, ভুল ধরবেন না। এতে শিশু কাজে আগ্রহ হারাতে পারে। তার চেষ্টার প্রশংসা করুন
- অন্যের সামনে কখনো বাচ্চার সমালোচনা করবেন না। এতে তার আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে
- সন্তানের ঘর গোছানোর সময়, সঙ্গে একজন অভিভাবক থাকতে পারেন। তবে গোছানোর সময় নিজে মতামত না দিয়ে সে যেভাবে চায়, সেভাবে তাকে কাজে সাহায্য করুন
- পরিবারের সব সদস্যকে সমানভাবে কাজ ভাগ করে নিতে হবে। এতে শিশু নিজেই বুঝবে তার কাজের দায়িত্ব সম্পর্কে।