সমস্ত আনন্দ অনুষ্ঠানেই গয়না পরার একটা রেওয়াজ আমাদের দেশে রয়েছে। পাঁচ হাজার বছর আগেও ভারতীয় মহিলা এবং পুরুষেরা সোনার গয়নায় নিজেদের শরীর ঢেকে রাখতেন। গয়না এবং নারী এই দুয়ের সম্পর্ক চিরন্তন। গয়না পরার সংস্কৃতি আজও বিদ্যমান। শুধু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পছন্দ, তৈরির পদ্ধতি, ডিজাইন ইত্যাদির হেরফের হতে দেখা যায়। ইতিহাসের যুগ থেকেই রাজারাজড়া থেকে শুরু করে সমাজের মাথা যারা ছিলেন, সকলেই শিল্প এবং শিল্পীদের কদর দিয়ে এসেছেন যাতে তারা নিজেদের শিল্পকলাকে আরও উন্নত মানের করে তুলতে পারেন। সব ধরনের গয়নারই চাহিদা রয়েছে ভারতে। যার মধ্যে সোনার গয়নার মহিমা আজও আগের মতোই উজ্জ্বল। এছাড়াও রুপো, হিরে, প্ল্যাটিনামের গয়নার জনপ্রিয়তাও এখন ধীরে ধীরে ভারতীয় গয়নার সাম্রাজ্যে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে।
ভারতের আলাদা আলাদা রাজ্যে সেখানকার লোকপরম্পরা অনুযায়ী বিভিন্ন রকমের গয়নার ডিজাইন করা হয়। সাধারণত পোশাক অনুযায়ী কী গয়না পরা হবে সেটা ঠিক করা হয়। এমনকী ডিজাইনের থিম এবং গয়নার রং-ও পছন্দ করা হয় পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে। গয়নাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে নানা রকমের দামি পাথর এবং হিরে দিয়ে গয়নার অলংকরণ করা হয়। সংস্কৃতি অনুযায়ী ভারতীয় গয়না তৈরি হয় ভারী এবং অনেক বেশি সোনা দিয়ে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাম ও সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে হালকা এবং অল্প সোনায় পছন্দসই গয়না বানানোর রেওয়াজ শুরু হয়ে গেছে। স্বর্ণকাররা যাতে গ্রাহকদের ঠকাতে না পারে তার জন্যে হলমার্কযুক্ত সোনার গয়নারও কদর বেড়ে চলেছে এবং সতর্ক ক্রেতারাও এখন হলমার্ক দেখেই সোনার গয়না কিনছেন।
দুই ধরনের সোনার গয়না এখন তৈরি হয়। একটা ছাঁচে বানানো হয় অন্যটি হাতে তৈরি করা হয় (হ্যান্ডমেড)। ছাঁচের গয়না হালকা এবং কম বাজেটের হয়। খুব কম ডিজাইনই হয় এই ধরনের গয়নায়। তুলনায় হ্যান্ডমেড সোনার গয়নার কোয়ালিটি ভালো হয়। এটিতে সোনা একটু বেশি লাগে এবং দেখতেও আকর্ষণীয় হয়। বিয়ের গয়নায় (সোনা) ডিজাইন বলতে বেশিরভাগই পছন্দ করেন, হাঁস, ময়ূর, মাছ অথবা সাপের ডিজাইন। ফুল, লতাপাতার ডিজাইনও এখন ফ্যাশনে বিশেষ ভাবে ইন। বিয়ের গয়নায় এখন একটা নতুন ট্রেন্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিয়ের দিনটির জন্য ভারী গয়না কেনা হয় ঠিকই কিন্তু আজকাল এমন ভাবে ছোটো ছোটো অংশকে একসঙ্গে যুক্ত করে গয়নাটা তৈরি করা হয় যে প্রয়োজন অনুযায়ী গয়নাটি থেকে একটা করে অংশ খুলে রেখে ইচ্ছেমতো গয়নাটাকে হালকা এবং ছোটো করে নেওয়া যায়। সোনার গয়না সকলের পছন্দের আরও একটি কারণ এর সহজ লিকুইডিটি ভ্যালু।