শিশুদের করোনা ভাইরাস-এর ঝুঁকি প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কম। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে উপসর্গগুলি খুবই কম থাকে। অনেক ক্ষেত্রে বোঝার উপায় থাকে না । আর তাই চিকিৎসকের কাছেও সঠিক সময়ে যাওয়া হয় না। শিশুরা যেহেতু মা-বাবা, ঠাকুরমা, দাদুর কাছেই বেশিরভাগ থাকে– সেক্ষেত্রে শিশুদের থেকে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে মা-বাবা এবং ঠাকুমা,দাদুর। বয়সের কারণে ঠাকুরমা, দাদুর ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।তাই খুব ছোটো বাচ্চাদের সাবধানে রাখার দায়িত্ব মা-বাবাকেই নিতে হবে৷ বারেবারে শিশুর হাত ধুয়ে দিতে হবে৷ মনে রাখবেন বড়োদের মতো বাচ্চাদেরও স্যানিটাইজেশন একান্ত জরুরি৷
একদম ছোটো শিশুরা যারা হামাগুড়ি দেয় এবং মুখে আঙুল দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে মা-বাবাকেই। বাড়িতে শিশু থাকলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অবশ্যই বাড়তি নজর দিতে হবে।প্রতিদিন মেঝে লিকুইড ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷শিশু যেখানে বসবে বা হামা দেবে, সেই জায়গা আগে থেকেই স্যানিটাইজ করে রাখুন৷
করোনা ভাইরাসকে এখনও পর্যন্ত ফুড বোর্ন বা খাদ্য বাহিত বলছে না ‘হু’ , কিন্তু ফুড সেফটি মেজার বজায় রাখতে হবে। অর্থাৎ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে বাড়িতে শিশু থাকলে। খাবার যে-পাত্রে থাকবে, সেই জায়গাটি যেখানে শিশু বসে খাবে, আপনার নিজের হাত এবং খাবারের পাত্র যেখানে থাকবে সেই জায়গাটিও পরিষ্কার করতে হবে।
শিশুরা করোনা ভাইরাসে অপেক্ষাকৃত অনেক কম আক্রান্ত হলেও, বলা হচ্ছে শিশুরা করোনা ভাইরাসের নীরব শিকার।তাই এই রোগ-ব্যাধির পরিবেশে শিশুর পুষ্টির বিষয়ে সচেতন হোন৷পুষ্টির অভাব হলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকবে।শিশুকে সুস্থ রাখতে পেডিয়াট্রিশিয়ানের সঙ্গে কথা বলে, পরিমাণ মেনে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ান৷
একটু বড়ো শিশুদের ক্ষেত্রেও করোনা ভাইরাসের পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে৷ দীর্ঘদিনের আবদ্ধ অবস্থার ফলে শিশুর সব ধরনের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে।শিশু যখন হাঁটতে শেখে, কথা বলতে শেখে, দৌড়াতে শেখে, ছবি আঁকে বা নাচে তখন আমরা বুঝি এগুলি হল শিশুর বিকাশের অঙ্গ।বাইরে বেরোলে শিশু এটা ওটা চিনতে শেখে, গাছপালা ফুল পাখির সঙ্গে তার পরিচয় হয়৷ শিশুরা এখন পার্কে গিয়ে খেলা করার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত৷ফলে তার বেড়ে ওঠা এবং বুদ্ধির বিকাশ এই পরিস্থিতিতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শিশুর সময় কাটানোর জন্য আরেকটা শিশুর দরকার হয়।সেই মেলামেশার পথও সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়েছে৷ তাই শিশুদের ক্ষতিগুলি অনেকটাই পরিবেশেগত ভাবে নিশ্চুপে ঘটে চলেছে৷
অন্যদিকে সারাদিন বাবা-মায়ের ভাইরাস সংক্রমণ, আয় রোজগার আর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ। করোনা ভাইরাসে শিশুরা খুব বেশি আক্রান্ত না হলেও এ থেকে মুক্তিরও যেন উপায় নেই।দিনভর সকল সম্প্রচার মাধ্যমে একই বিষয় নিয়ে আলোচনা। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এত বেশি মানুষের আক্রান্ত হওয়া,এত মানুষের মৃত্যুর খবর নিয়ে বাড়ির বড়োরাও সারাক্ষণ কথা বলছে। চারিদিকে শুধু শঙ্কার এই আবহ, শিশুর মনোজগতের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্টরা৷
এক্ষেত্রে বড়োরা খেয়াল রাখুন, মনে ভিতর যতই উদ্বেগ থাকুক, বাচ্চাদের সামনে সেটা প্রকাশ করবেন না৷ নিজের হতাশা, রাগের বহিঃপ্রকাশ যেন শিশুর উপর না হয়৷ এর ফল কিন্তু মারাত্মক হতে পারে৷ শিশুর কোমল মনে অনিশ্চয়তার বীজ এই বেড়ে ওঠার সময় যদি বপন হয়ে যায়, তার ব্যক্তিত্বের উপর ছাপ পড়বে৷ সে বড়ো হওয়ার পরও হারানো আত্মবিশ্বাস ফেরত পাবে না৷তাই বড়োরা চেষ্টা করুন বাচ্চার সঙ্গে খেলাধুলো করা, নিয়মিত কথোপকথন চালিয়ে যাওয়া বা বাচ্চাকে আদর করার মতো স্বাভাবিক আচরণগুলি বজায় রাখতে৷