করোনা ভাইরাস এখন এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা দেশব্যাপী আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে চলেছে। যুবক থেকে প্রৌঢ় সকলেই কোনও না কোনও সময়ে এর কবলে পড়ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও গ্লোবাল এমার্জেন্সি হিসাবে এটাকে ট্রিট করা শুরু করেছে। শুধু অশক্ত ও বৃদ্ধরাই যে এর শিকার হচ্ছেন এমনটা আর বলা চলে না। শিশু থেকে তরুণ কেউ নিস্তার পাচ্ছে না এখন।
এরকম পরিস্থিতিতে প্রেগন্যান্ট মহিলারা কীভাবে সতর্ক থাকবেন কোভিড ১৯-এর প্রভাব থেকে, সেটা বেশ দুশ্চিন্তার। মা এবং গর্ভস্থ শিশু, দুজনেরই সুস্থ থাকা একান্ত জরুরি। বেশ কিছু হাসপাতালে কোভিড পজিটিভ হচ্ছেন প্রসূতিরা।
সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হল, গর্ভধারণের সময়কাল জুড়েই মহিলাদের শরীরের অভ্যন্তরে নানারকম পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ইমিউন সিস্টেম বেশ দুর্বল থাকে। এর ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই খুব আশঙ্কায় আছেন যে, প্রেগন্যান্ট মহিলাদের ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কতটা? এই রোগে আক্রান্ত হলে কতটাই বা সুরক্ষিত থাকবে তার গর্ভস্থ শিশুটি। সদ্যজাতও কি এই ভাইরাস শরীরে নিয়ে পৃথিবীতে আসবে? কী ভাবে নবজাতক-কে সুরক্ষিত রাখা প্রয়োজন?
কোনও অন্তঃসত্ত্বার করোনা হলে কী ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে?
অন্তঃসত্ত্বার ক্ষেত্রেও সিম্পটমগুলি সবই সাধারণ কোভিড রোগীর মতোই হবে। জ্বর,কাশি, নিঃশ্বাসের কষ্ট, মাথাব্যথা। কেউ কেউ সংজ্ঞাহীনও হয়ে পড়ছেন সিরিয়াস কন্ডিশনে। এর সঙ্গে থাকছে নিউমোনিয়ার লক্ষণ, যেহেতু এদের এই অবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।
ইনফেকশন রয়েছে এমন কোনও প্রেগন্যান্ট মহিলার বাচ্চার উপর কতটা রোগের প্রভাব পড়তে পারে?
মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। পৃথিবীতে যতগুলি এরকম কেস-এর কথা জানা যাচ্ছে তাতে দেখা গেছে, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ৩০ ঘন্টা পর তার শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রি-ম্যাচিয়োর বার্থ হয়েছে শিশুটির। কিন্তু সেটা মায়ের ইনফেকশন থাকার কারণেই ঘটেছে কিনা সেটা এখনও নিশ্চিত নয়।
প্রেগন্যান্ট থাকা অবস্থায় কোনও নারী কীভাবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা এড়িয়ে চলতে পারেন?
এই রোগ এড়াতে হলে, যা যা করতে হবে :
১) নিয়মিত হাত ধোয়া ও পরিচ্ছন্ন থাকা।
২) হাঁচি-কাশির সময় ব্যবহৃত টিশু ফেলে দিয়ে প্রতিবার হাত ধোবেন।
৩) কারও জ্বর বা কাশির লক্ষণ থাকলে, সেই ব্যক্তির সঙ্গে সমস্ত কনট্যাক্ট বর্জন করতে হবে।
৪) ফোনে বা ভিডিয়ো কল-এ নিয়মিত নিজের শরীরের সুবিধা-অসুবিধা আপনার চিকিৎসক-কে জানাতে হবে।
৫) বাড়ির কোনও সদস্য জরুরি কাজে রাস্তায় বের হলে তার ব্যবহার্য জিনিসে একেবারেই হাত দেওয়া চলবে না।
৬) ইমিউনিটি বাড়ায় এমন খাবার-দাবার খেতে হবে। ফলের মধ্যে লেবু, আর ডিম ও অন্যান্য প্রোটিন মাস্ট।
প্রেগন্যান্ট মহিলাদের শ্রেণিতে কাদের রিস্ক সবচেয়ে বেশি?
কোনও বিশেষ ধরনের হার্ট-এর সমস্যা বা শ্বাসকষ্টজনিত কোনও রোগ আছে, এমন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ক্ষেত্রে সময়টা অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
বাড়িতে ঠিক কতটা প্রোটেকশন নেওয়া উচিত প্রেগন্যান্ট মহিলাদের?
কয়েকটি নিয়ম অবশ্যই পালন করা উচিত :
ক) বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে একই জায়গা শেয়ার করার সময়টা কমিয়ে ফেলুন। অর্থাৎ কিচেন, খাবার ঘর, ব্যালকনি ইত্যাদি জায়গায় অন্যদের সঙ্গে বেশিক্ষণ সময় কাটাবেন না।
খ) অন্তত ২ মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন যারা বাইরে বেরোচ্ছে তাদের থেকে। প্রয়োজনে সম্পূর্ণ আলাদা ঘরে আইসোলেশনে থাকুন।
গ) অন্যদের সঙ্গে টয়লেট শেয়ার করলে, তাদের বলুন প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের পর যেন টয়লেট-এ ডিসইনফেকট্যান্ট দেওয়া হয়।
ঘ) আপনার খাবারের থালা-বাসন আলাদা করে নিন। প্রয়োজনে নিজের ঘরের ভিতর বসেই খান, ডাইনিং টেবিল অ্যাভয়েড করুন।
ঙ) বাড়ির সকলকে বেসিক হাইজিন মেনটেন করতে বলুন, যাতে ঘরের ভেতরটা জার্ম ফ্রি থাকে।
এত সত্ত্বেও যদি আসন্ন প্রসবার শরীরে কোনও কোভিড সিম্পটম দেখা যায়, কী করা উচিত?
অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক-কে জানান। বাড়ির অন্যদেরকেও ডাক্তারের এমার্জেন্সি কনট্যাক্ট নম্বর দিয়ে রাখুন। অন্তঃসত্ত্বা যা যা ওষুধ খাচ্ছেন তার সম্পূর্ণ তালিকা চিকিৎসক-কে দিন। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর হসপিটালাইজেশন হতে পারে, তার প্রস্তুতি নিয়ে বেরোন।
পরামর্শ সহায়তা :ডা. সাগরিকা অগ্রবাল
আইভিএফ এক্সপার্ট,ইন্দিরা আইভিএফ হাসপাতাল, নয়াদিল্লি।