একজন মানুষকে জীবনের নানা পর্বের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। মানুষ হিসাবে আরও যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য তাকে এক পর্বের শিক্ষাকে অন্য পর্বে বহন করে নিয়ে যেতে হয়। তবে একথাও মনে রাখতে হবে যে, শেক্সপিয়র যথার্থই বলেছিলেন, বার্ধক্য হল- দ্বিতীয় শৈশব। জীবনের এই চূড়ান্ত পর্বে প্রায়ই এমন সব বড়োসড়ো চ্যালেঞ্জ সামনে এসে হাজির হয়, যেগুলি পেরিয়ে যাওয়া অনেকের পক্ষেই বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বিখ্যাত ব্রিটিশ গায়ক তথা লেখক ডেভিড বাওয়ি একবার বলেছিলেন, মানুষের বয়স বেড়ে যাওয়াটা হল একটা অসাধারণ প্রক্রিয়া। যখন আপনি হয়ে ওঠেন সেই রকম ব্যক্তি, ঠিক যেমনটি আপনার হয়ে ওঠা উচিত ছিল। জীবনে পরিবর্তনই শাশ্বত, এটা মেনে নেওয়া সহজ। কিন্তু সেই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটা ততটাই কঠিন।
আনুমানিক হিসাবে শুধুমাত্র ভারতেই যাঁরা বযস্কদের মধ্যে পড়েন (৬৫ বছরের বেশি), তাঁদের ২০.০৫ শতাংশের কোনও না কোনও মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কো-মরবিডিটি রয়েছে। এদের মোট সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লক্ষ। এর অনেকগুলি কারণ রয়েছে। পরম্পরাগত ভাবে ভারতীয়রা যৌথ পরিবার ব্যবস্থার মধ্যে থাকেন। এইসব পরিবারের অর্থনীতি হল কৃষিভিত্তিক, যেখানে প্রত্যেকের নির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকে। আর্থিক লাভ-ক্ষতি কিংবা সামাজিক দায় সকলে ভাগ করে নিয়ে থাকেন। এইসব পরিবারে ছোটোরা বড়োদের সম্মান করে।
গত ৫০ বছরে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এত দ্রুতগতিতে সবকিছু বদলে দিয়েছে যে, সমাজ নিজেকে দ্রুত গতির নগরায়ণ ও শিল্পায়নের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উপযোগী করে তুলতে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই জীবিকার খোঁজে পূর্বপুরুষদের বাসস্থান থেকে বহু দূরে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন এবং এর ফলে ভেঙে পড়েছে যৌথ পরিবার।
পরিবারের সন্তান সংখ্যাও ক্রমশ কমে আসছে এবং তারাও শিক্ষা ও জীবিকার কারণে দূরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এর জেরে দ্রুত গড়ে উঠছে ছোটো পরিবার এবং বয়স্করা পড়ে থাকছেন পূর্বপুরুষদের ভিটেয়। ব্যক্তিগত সাহায্য, জনবলের সমর্থন, মানসিক ভরসা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সহায়তা কিংবা যত্ন বেশি বয়সে পৌঁছে, নিঃসঙ্গ জীবনে তাঁরা এসব কিছুই পাচ্ছেন না।