বছর ধরে আমি এবং আমার স্বামী আমাদের ২৫ বছর বয়সি একমাত্র মেয়ের বিয়ের চেষ্টা করছিকিন্তু কোনও কিছুই এখনও ঠিক হয়নিএর মূল কারণ হচ্ছে, যে- বিয়েই ঠিক করা হয় আমার মেয়ে সবগুলোই নাকচ করে দেয়কখনও পাত্র, আবার কখনও পাত্রের পরিবারের দোষ খোঁজেসম্প্রতি কয়েকদিন আগেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়াতে আমি এবং স্বামী মেয়েকে খুব বকাবকি করিবকাবকি করাতে মেয়ে আমাদের কাছে স্বীকার করে যে, সে সমলিঙ্গী এবং একটি মেয়েকে সে ভালোবাসে এবং সেই মেয়েটিও আমার মেয়েকে ভালোবাসে

এটা জানতে পেরে আমরা প্রচণ্ড বিচলিত হয়ে পড়ি।  আমার স্বামী তো এখনও শক্ কাটিয়ে উঠতে পারেননিওনার একটাই কথা, মেয়ে যদি অন্য মেয়েটির সঙ্গে থাকতে আরম্ভ করে, তাহলে উনি লজ্জায় আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হবেনএছাড়াও ভয় হচ্ছে আমরা একটা ছোট্ট শহরে থাকি যেখানে এই ধরনের ঘটনা কখনও ঘটতে শোনা যায়নি সুতরাং সমাজেও আমাদের মান-সম্মান কিছুই বজায় থাকবে নাকিন্তু আমার মেয়ে এসব কিছুই মানতে চাইছে নাআমার ছেলেই একমাত্র নিজের ছোটো বোনকে সাপোর্ট করছেআমি জানি না এই অবস্থায় আমার কী করা উচিত, শুধু আমি আমার মেয়েকে সুখী দেখতে চাইআমি কী করব?

 

সমকামী হওয়াটা দোষের নয়, যদিও আমাদের সমাজ এটা মেনে নিতে পারে না৷ আপনার মেয়ে নিজের ইচ্ছেয় সমলিঙ্গী হয়নি। ইচ্ছে করলেই সে নিজের যৌন-প্রয়োজন  বা সেক্সুয়াল প্রেফারেন্স বদলাতে পারবে না।এটা অনেক ভিতরের বিষয়, যা ওপর ওপর শাসন করে সমাধান হবার নয়৷  আপনাদের মন রেখে সে যদি কোনও পুরুষকে বিয়ে করে তাহলেও, সে নিজেকে এবং নিজের স্বামীকে কোনওদিনও সুখী করতে পারবে না।

অনেক সাহস সঞ্চয় করে আপনার মেয়ে যে সামাজিক সংস্কারের বন্ধন অগ্রাহ্য করে,আপনাদের সামনে সত্যিটা বলতে পেরেছে- এটা আশীর্বাদ বলে মনে করুন। এই অবস্থায় যদি মেয়েকে বিয়ের প্সঙ্গ টেনে এনে জোরদবরদস্তি করেন, বা তাকে লাঞ্ছনা করেন, তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে৷ মেয়েকে সাহস দিন এবং আপনার ছেলেও যে বোনের পাশে আছে, সেটা ভেবে একটু নিশ্চন্ত দোন৷এর ফলে অন্তত আপনাদের মেয়ে হঠকারিতা করবে না। মেয়ের কথা সবাই ভাবুন এবং সমাজের ভাবনা ছেড়ে, মেয়ের সুখের দিকেই নজর দিন। বাইরের লোক কী ভাববে তাই নিয়ে মাথাব্যথা করার যৌক্তিকতা নেই, কারণ আপনাদের মেয়ে আম্তহননের পথ বেছে নিলে আখেরে আপনাদেরই ক্ষতি।সহানুভূতির সঙ্গে ওর দিকটাও বিচার করুন৷

আপনারা যেহেতু ছোটো শহরে থাকেন তাই হয়তো এই ধরনের ঘটনা আপনাদের লজ্জার কারণ হতে পারে৷ তবে আপনার মেয়ে এবং তার পার্টনার এই ধরনের পরিবেশ এড়াতে পারলেই ভালো। তারা যদি কোনও মেট্রো শহরে চলে যায় তাহলে কোনও অসুবিধার সম্মুখীন তাদের হতে হবে না, কারণ সেখানে এধরনের ঘটনা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। তারা দুজনে সুখে সেখানে বসবাস করতে পারবে। এছাড়াও আপনি নিজের স্বামীকেও বোঝান যে মেয়ের এই সম্পর্ককে অ্যাকসেপ্ট করে নিতে, যতই তিনি এই জীবনচর্যার বিরোধী হোন না কেন।মেয়েকে তো বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে আপনারা রাজি ছিলেন৷তাতেও তাকে ভিন্ন শহরে গিয়ে বসবাস শুরু করতে হতো৷ ধরে নিন এও এক রকম দূরে কোথাও মেয়েকে পাঠানো৷

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...