পুরুষদের মতোই ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এ এখন মহিলারাও ব্যস্ত রেখেছেন নিজেদের। ইতিহাস বলে, বহু শতাব্দী ধরে মহিলারা পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খাবার সংগ্রহ করেছেন এমনকী বন্যপ্রাণীও শিকার করেছেন। তবে শিকারি হিসাবে পরিচিত মানুষরা আধুনিক সভ্যতার আগেও কিন্তু সৎ ছিলেন।
প্রত্যেক পুরুষই চান তার স্ত্রী তার অধীনে থাকুক। সব পুরুষই চান, যখন চাইব স্ত্রীকে শয্যাসঙ্গিনী হিসাবে পাব, যখন চাইব খাবার সামনে পাব। সেইসঙ্গে স্ত্রী ঘরসংসারও ঠিকমতো সামলাবে, এও চান তারা। আর যারা কিছুটা মহানুভবতা দেখাতে চান, সেইসব পুরুষরাও এমন ভাবে কাজ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন, যাতে মহিলাদের গুরুত্ব কম।
নারী-পুরুষের বিয়ের বিষয়টি তো পুরুষের অধিকার বলবৎ করার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মাত্র। বিয়ের মাধ্যমে সমাজকে এই বার্তা দেওয়া হয় যে, আমি যাকে বিয়ে করেছি, সে শুধু আমারই সম্পত্তি। অন্য কারওর অধিকার নেই তার উপর। কিন্তু অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার অধিকার পুরুষের আছে।
ইতিহাসে মহিলাদের দাসত্ব এবং বেশ্যাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ার নানা নজির তুলে ধরা হয়েছে। যে-সভ্যতা যত ধার্মিক, সেই সভ্যতায় ততই ঘটেছে অত্যাচারের ঘটনা। অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে পশ্চিমি দেশগুলিতে যুদ্ধকালীন সময়ে, যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করানোর জন্য মহিলাদের বাড়ির বাইরে আনা হয়েছিল কিংবা বলা যায়, তারা বাড়ির বাইরে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। আসলে যে-দেশ কিংবা সমাজ যত রক্ষণশীল, সেই দেশ তথা সমাজ ততই পিছিয়ে পড়েছে।
বর্তমানে কিন্তু সব ধ্যানধারণা বদলে দিয়েছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম। বাড়িতে থেকে সবকিছু সামলেও যে অর্থ উপার্জন করা যায়, তা আজ মহিলারা ওয়ার্ক ফ্রম হোম-কে মাধ্যম করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, ঘরে-বাইরে সমান পারদর্শী তারা। বরং বলা যায় এক্ষেত্রে পুরুষদের থেকে তারা কিছুটা এগিয়েও রয়েছেন৷ কারণ পুরুষরা যেমন শরীরচর্চা করতে করতে কিংবা খাবার খেতে খেতে ল্যাপটপ কিংবা মোবাইলকে মাধ্যম করে অফিস সামলাচ্ছেন, মহিলারাও ঠিত তেমনই রান্না খাওয়ার বন্দোবস্ত কিংবা বাচ্চার যত্ন নিতে নিতেই অফিসের কাজ সামলাচ্ছেন দক্ষতার সঙ্গে।
করোনা ভাইরাস শরীরের ক্ষতি করলেও সুবিধে দিয়েছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর। আর ঠিক এই কারণে নারীকে আটকে রাখার ধর্মীয় অনুশাসন এখন দুর্বল হয়ে পড়ছে।করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার পথ হিসেবে অনেকেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম-কে বেছে নিচ্ছেন।।
ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এ আরও কিছু সুবিধে পাওয়া যায়। থাকতে হয় না পুরুষের অধীনে, তাই যৌন নির্যাতনের ভয়ও থাকে না। বাড়ি থেকে তাই আজ অফিস কিংবা ব্যাবসা সবই চালানো যায় কম্পিউটার এবং মোবাইলকে মাধ্যম করে। তাই এও একপ্রকার নারী স্বাধীনতা বলা যায়।
অনেক লড়াইয়ের পর আজ মেয়েরা অনেকটা স্বাধীনতা পেয়েছে। আসলে, আজও ধর্মান্ধ লোকেদের সংকীর্ণ মনোভাব আর আস্ফালন বন্ধ হয়নি। আজও তারা সংখ্যায় অনেক। তাই গ্রাম থেকে শহরে তাদের দৌরাত্ম্য এখনও কমেনি। সেই তুলনায় প্রতিবাদী মহিলার সংখ্যা নগণ্য। তাই মহিলাদের সাহায্যে পরামর্শ দেওয়ার লোক কিংবা রক্ষাকারীও হাতে গোনা। তাই ভক্ষকের কাছেই মাথা নত করে বাঁচার জন্য মিনতি করতে হয় তাদের।
ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর মাধ্যমে, উপার্জনের সুন্দর এক দরজা খুলে গেছে মহিলাদের সামনে। তাই মহিলাদের উচিত সেবাদাসীর মতো পুরুষের অধীনস্ত না থেকে, গৃহবন্দি জীবন না কাটিয়ে,সম্মানজনক উপার্জনের সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। অর্থাৎ, পরনির্ভরশীলতার সীমাবদ্ধতা থেকে মনকে মুক্ত করে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর মাধ্যমে উপার্জন করে মাথা উঁচু করে বাঁচুন।