করোনা অতিমারির আবহে বাড়ির গৃহকর্ত্রীকে লোভী বা কৃপণ অ্যাখ্যা দেওয়া ঠিক নয়। কারণ আর্থিক উপার্জন সকলেরই কমেছে ফলে যেটুকু আসছে তাতেই গৃহকর্ত্রীকে সংসার টানতে হচ্ছে।
একটি সমাজসেবী সংস্থা বড় শহরের সম্ভ্রান্ত এলাকাগুলিতে সার্ভে করে জানতে পেরেছে বেশ বড় সংখ্যায় বাড়ির পরিচারিকাদের কাজের সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কোভিড ১৯-এর ভয়ে অনেকেই পরিচারিকাদের বাড়িতে ঢুকতে দিতে ভয় পাচ্ছেন। কোথাও কোথাও তো পুরো সোসাইটিতেই বহিরাগতদের ঢোকা স্ট্রিক্টলি নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। একমাত্র প্রযোজন পড়লে প্লাম্বার আর ইলেক্ট্রিশিয়ান শুধু আসতে পারবে।
পরিচারিকারা এখন সমস্যায় দিন কাটাচ্ছে কারণ এদের প্রাপ্য বেতন যতই কম হোক না কেন, পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে সেইটুকুরই প্রযোজন ছিল। এই সামান্য অর্থ থেকেই কিছু কিছু বাঁচিয়ে অনেকে হয়তো টিভি, মোবাইল বা একটা দুটো পরণের ভালো শাড়ি কিনেছে শখ করে। অনেকে সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করেছে ভবিষ্যতে মানুষ করে তুলতে। এখন উপার্জনের পথ বন্ধ সুতরাং দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। অনেকেই এদের মধ্যে মনে করেন কাজ চলে যাওয়ার জন্য পুরো দায় তাদের মালকিনের। কিন্তু লোভ বা কাপর্ণ্যের বশবর্তী হয়ে যে গৃহকর্ত্রীরা কাজের লোক ছাড়াচ্ছে সেটা ভেবে নেওয়াটা ঠিক নয়। এই গৃহকর্ত্রীদের মধ্যে চাকুরিরতার সংখ্যা কিন্তু কিছু কম নয়। করোনার লকডাউনের ফলে এদের মধ্যেও অনেকের চাকরি চলে গেছে, অফিসের বেতন কমেছে, অনেকের স্বামী কাজ হারিয়ে বাড়িতে বসে রয়েছে। সুতরাং মহিলাকে হয়তো একাই সংসারের দায়ভার একার কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে। এই অবস্থায় সংসার খরচের বাজেট না কমিয়ে উপায়ই বা কী রয়েছে? লোকেদের ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ব্যাবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তারাও তাদের কর্মচারীদের বেতন কমাতে বাধ্য হচ্ছে। এই যেখানে দেশের অবস্থা সেখানে বাড়ির গৃহকর্ত্রী, পরিচারিকা ছাড়া খুব আরামে দিনযাপন করছে শুধুমাত্র টাকা বাঁচানোর লোভে, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বাড়ির মহিলারাও অত্যন্ত সমস্যায় রয়েছেন কারণ পরিচারিকার উপর নির্ভরতা এখন আমাদের মজ্জাগত অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। সেই অভ্যাস কাটিয়ে উঠে বাড়ির সব কাজ নিজের হাতে করা সঙ্গে বাড়ি বসে অফিসের কাজ, সংসারের অন্যান্য দাযিত্বভার সামলানো ইত্যাদি এত পরিশ্রম মহিলাদের শারীরিক এবং মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা স্ট্রেসের শিকার হচ্ছেন।