বহু মানুষ আছেন যারা কেবল নিজের সাজ-পোশাককেই গুরুত্ব দেন। কিন্তু কিছু মানুষ আবার ভীষণ শৌখিন মানসিকতার। তারা নিজেদের পোশাক-আশাকের ব্যাপারেও যেমন চুজি, তেমনি বাড়িঘর সাজানোর ক্ষেত্রেও ভীষণ ভাবে পারফেক্টশনিস্ট। বেডরুমের রং কেমন হবে, লিভিংরুমে কোন আসবাবপত্র রাখলে মানানসই হবে, কার্টেনের কালার কোনটা হলে ভালো লাগবে– সব ব্যাপারেই ভীষণ খুঁতখুতে তারা। কেউ কেউ তো আবার ঘরে ক্লাসি লুক আনার জন্য বিশেষজ্ঞেরও পরামর্শ নিয়ে থাকেন। কোন রুমের কোন দেয়ালে ডার্ক শেড হবে আবার কোনটা হালকা, কোথায় কোন আসবাবপত্র রাখলে ভালো লাগবে, বাচ্চাদের রুমের ডেকোরেশন কেমন হবে– পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সমস্ত কিছুই বাতলে দেন তারা। আবার এমন অনেকেই আছেন যারা কোনও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই ঘরের পুরোনো আসবাব দিয়েই ঘরকে নতুন ভাবে নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে তুলতে চান। কিন্তু ভাবছেন কোনটা দিয়ে শুরু করবেন। তাদের জন্য রয়েছে কিছু পরামর্শ।
দেয়াল রাঙান –
ঘর সাজানোর প্রথম ধাপই শুরু হয় রং দিয়ে। রং-ই হল আনন্দের উৎস। তাই রং এমন হওয়া উচিত যা আপনাকে পজিটিভ এনার্জি জোগাবে। যেহেতু আমাদের দেশে গ্রীষ্মের প্রাধান্য বেশি, তাই একটু হালকা শেড বাছলেই ভালো হয়। সেক্ষেত্রে বেডরুমের কালার হিসাবে বাছতে পারেন হালকা আর গাঢ় নীলের কম্বিনেশন। ক্রিমের সঙ্গে গ্রিন অ্যাপল। লিভিং রুম রাঙিয়ে তুলতে পারেন গোল্ডেন ইয়েলো বা হালকা পিংক দিয়ে। বাচ্চাদের ঘরের জন্য হালকা সি-গ্রিন, কচিকলাপাতা অথবা লাইট পিংক একেবারে আদর্শ। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত ডার্ক শেড গরমে কখনওই বাছবেন না বরং এমন রং বাছুন যা চোখের পক্ষে সুদিংও।
আসবাবপত্রের স্থান পরিবর্তন –
ঘরকে নতুন আর স্টাইলিশ লুক দিতে হলে মাঝেমধ্যেই আসবাবপত্রের জায়গা পরিবর্তন করা দরকার। খাটের ডিরেকশন থেকে শুরু করে সোফা, সাইড টেবিল, শোকেস এবং ঘরের অন্যান্য আসবাবের স্থান পরিবর্তন বাঞ্ছনীয়। তবে প্রয়োজন ছাড়া ঘরে বাড়তি ফার্নিচার না রাখাই ভালো।
পর্দা এবং কভারস্ –
মূলত ঘরের রঙের উপর বেস করেই পর্দা বানানো হয়ে থাকে। আপনার ঘরের রং যদি অরেঞ্জ আর ক্রিম-এর কম্বিনেশনে থাকে তাহলে অরেঞ্জ রঙের পর্দা একেবারে পারফেক্ট। আবার বেস যদি নীল হয় তাহলে নীলের উপর হালকা ডিজাইন করা পর্দা ভালো যাবে। তেমনই গ্রিন অ্যাপল বেস হলে কচিকলাপাতা পারফেক্ট। সোফার কভার ও সেই মতোই বানাতে হবে।
ম্যাট্রেস এবং পাপোশ –
যথাযথ ম্যাট্রেস আর পাপোশ ড্রইংরুম আর বেডরুমের চেহারাই বদলে দিতে পারে। এগুলি থেকেও আপনার রুচি সম্পর্কে ধারণা করা যায়। ঘরের রং থেকে শুরু করে আনুষাঙ্গিক অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি ম্যাট্রেস-পাপোশ কেনা যায় তাহলেই ঘরের সাজ সঠিক মাত্রায় সম্পূর্ণ হবে। এগুলি হালকা গ্রে নয়তো হালকা গোলাপি রঙের হলে, যে-কোনও ঘরের ক্ষেত্রেই মানানসই হবে।
সাজানোর জন্য –
ফোটোফ্রেম, পেইন্টিং, ওয়াল হ্যাংগিং সিজন অনুযায়ী বদলানো সম্ভব, কারণ এই জিনিসগুলির দাম বেশ কম। ছোটো ছোটো জিনিস হলেও নিয়ম করে এগুলি বদলালে ঘরের লুকেরও পরিবর্তন হবে।
ফুলের সাজি –
ফুল কে না ভালোবাসে। আর সেই পছন্দের ফুল যদি কাজে লাগে ঘরের শোভা বাড়াতে তাহলে তো কথাই নেই। যুগ যুগ ধরে মহিলারা সুগন্ধি ফুল দিয়ে ঘর সাজিয়ে এসেছেন। এখনও যে খুব একটা হেরফের হয়েছে তা কিন্তু নয়, হ্যাঁ ফুল রাখার ভাবনাটা বদলেছে। আগে গোলটেবিল নয়তো ড্রেসিং টেবিলের এককোণে ফুলদানি রাখা হতো। আর এখন সেন্টার টেবিল বা কর্ণার টেবিলে আধুনিক ডিজাইনের ফ্লাওয়ার ভাসের মধ্যে শোভা পায় এই ফুল। এতে মন ভালো হতে বাধ্য। ঘরের কোণায় বা সিঁড়ির ল্যান্ডিং-এ আর্টিফিশিয়াল ফুলের ঝাড়, টেরাকোটার পট-এ মানায় ভালো।
বারান্দার কোণে ছোট্ট বাগান –
অনেকেই গাছ লাগাতে ভীষণ ভালোবাসেন। কিন্তু এই ফ্ল্যাট কালচারে পরিসর না থাকায় অনেকেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান। শখপূরণ করতে তাই বারান্দার এককোণেই টুকটাক ফুলগাছ লাগিয়ে ফেলেন কিংবা ঝুলিয়ে দেন বাহারি গাছ। বেল, জুঁই, গোলাপ বা লতানো সবুজ গাছ। ওগুলিও ঘরের শোভা বাড়ায়। সিঁড়িতে ওঠার মুখে পাতাবাহার গাছও লাগাতে পারেন। সবুজের স্পর্শে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।