প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে আকাশ চিরে নেমে আসা বারিধারা সিক্ত করে ধরিত্রীকে। বৃষ্টি-ফোঁটায় শরীর ও মনকে ভিজিয়ে নেওয়ার আনন্দে মেতে ওঠে মানুষজন। বর্ষার স্পর্শে সবুজের মেলা রঙিন করে তোলে মনকে। কিন্তু বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে বর্ষা বয়ে আনে বেশ কিছু রোগও। একটু অসাবধান হলেই বিপদ।
চিকিৎসকদের মতে এইসময় ডায়ারিয়া, কলেরা, হেপাটাইটিস-এ আর ই-র মতো রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। বিশেষত সুগার, ফুসফুস, হার্টের রোগীরা বর্ষাকালীন রোগে দ্রুত আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তাই বর্ষার সময় খাওয়াদাওয়ার উপর বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। খেয়াল রাখতে হবে কোনওভাবে যেন শরীর দুর্বল না হয়ে পড়ে। বর্ষায় জলবাহিত রোগ বেশি হয়। বৃষ্টিতে জল দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই খাবার জল যাতে পরিষ্কার ও পরিশুদ্ধ হয়, তা সুনিশ্চিত করা দরকার।
বর্ষায় সুস্থ থাকার টিপস
প্রচুর জল খান –
পিপাসা মেটানোর সঙ্গে শরীরকে ঠান্ডা ও হাইড্রেট করে জল। গরমের ফলে শরীর থেকে জল ও সোডিয়াম ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। তাই শরীরে জলের জোগান বজায় রাখতে প্রচুর পরিমানে জল খান।
কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও পুষ্টি জোগানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জল। শরীরে জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকারক বস্তু জলের মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হয়। একইভাবে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নিউট্রিশন পৌঁছোনোর বাহকও হল জল।
পাচনতন্ত্র ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ফলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়। আধ লিটার জল খেলে শরীরের মেটাবলিজমের ক্ষমতা ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। নতুন ব্লাড সেলস্, মাসল সেলস্ তৈরির প্রক্রিয়ায় গতি বৃদ্ধিতে জল সহায়ক। ত্বকের নমনীয়তা বাড়াতে জলের বিকল্প নেই।
মাদক দ্রব্য থেকে দূরে থাকুন। মাদক দ্রব্যে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক প্রচুর পদার্থ থাকে। মাদককে ‘গুডবাই’ জানান এবং পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। কৃত্রিম সুগার নিয়ন্ত্রণ করুন।
তাজা ফল ও সবজি খান –
দৈনন্দিন খাবার মেনুতে রাখুন তাজা ফল ও প্রচুর সবজি। কারণ এর মধ্যে জল, ভিটামিন, মিনারেল, প্রাকৃতিক সুগার, ফাইবার সহ নানাবিধ পুষ্টি থাকে প্রচুর পরিমাণে। গরম আর বর্ষার সময় খরমুজ, লেবু, লিচু, টম্যাটো, শশা, স্যালাডের পাশাপাশি ফলের জুস খান। ফল ও সবজি শরীরকে হাইড্রেট করে। ফলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
লেবু –
লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট-এর কাজ করে। কোলেস্টেরল কমাতে লেবু দারুণ কার্যকর। ভিটামিন সি-এর পাশাপাশি লেবুতে ভিটামিন-এ, সিলেনিয়ম ও জিংক থাকে।
বর্ষার সময় কলেরা থেকে রেহাই পেতে পেঁয়াজ, পুদিনার সঙ্গে মিলিয়ে লেবুর শরবত পান করুন। এনার্জি বাড়বে, শরীরকে তাজা করে তুলবে। লেবুর রস মিশ্রিত জলে স্নান করলে চুলকানি হয় না, ত্বকও চকচকে হয়।
আমলকী –
গরমে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককে ঠিক রাখতে আমলকী দারুণ উপকারী। এর মধ্যে প্রাকৃতিক ভাবে প্রচুর ভিটামিন-সি রয়েছে। একটা আমলকীতে তিনটি লেবুর সমান ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এটি লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ফলে শরীরের মধ্যে থাকা বিষাক্ত পদার্থ সহজেই বার করা সম্ভব হয়। নিয়মিত আমলকীর সেবনে বয়সের ছাপ অনেকটাই আটকানো সম্ভব হয়। এমনকী স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি করে। আমলকী দিয়ে তৈরি চাটনি, আচার, মুরব্বা, চূর্ণ অত্যন্ত পুষ্টিকর।
টম্যাটো –
টম্যাটোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ-র পরিমানও লক্ষণীয়।
অ্যাসিডিটির ভালো উপশম টম্যাটো। কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকায়, টম্যাটো অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর খাবার। এটি গ্যাসের সমস্যাও দূর করে।
সতর্কতা ও উপায়গুলি মেনে চলুন। তাহলে বৃষ্টির আনন্দে মেতে উঠতে কোনও সমস্যা হবে না।