বৃষ্টিকে উপভোগ করতে হলে আগাম সর্তকতা প্রয়োজন। এরজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।এখানে রইল সাতটি জরুরি টিপস।
(১) মশা থেকে সুরক্ষা
ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত এখন ভয়ানক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরমেও রোগ ব্যাধি হয় ঠিকই, কিন্তু বৃষ্টির জল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পোকামাকড় বৃদ্ধি পায় এবং আরও নানা রোগ দ্রুত ছড়াতে শুরু করে। জমে থাকা জলে মশা ডিম পাড়ে এবং দ্রুত বংশ বিস্তার করে। তাই মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে জমা জল পরিষ্কার করুন। মশার ওষুধ স্প্রে করুন। মশারি বা মসকিউটো রিপেল্যান্ট ব্যবহার করুন।
(২) প্রচুর জল খান
এসময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অত্যধিক। তাই শরীর থেকে ঘাম নির্গত হয় বেশি। এই জলের ঘাটতি মেটাতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন। ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হবে না। এর ফলে আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। তবে মনে রাখবেন যে-জল পান করবেন তা যেন পরিশুদ্ধ হয়, কারণ বর্ষাকালে জলের দ্বারাও নানারকম সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
(৩) ব্যাক্টেরিয়াল ও ফাংগাল ইনফেকশন
বর্ষাকালে ব্যাক্টেরিয়াজনিত নানা ধরনের ফাংগাল ইনফেকশন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে, কারণ বর্ষার আবহাওয়া এই ধরনের সংক্রমণের জন্য আদর্শ সময়। ত্বকের ইনফেকশন এই সময়ের কমন সমস্যা। তাই ত্বক ভেজা অবস্থায় বেশিক্ষণ রাখবেন না। ভেজা ত্বকের কারণে ব্যাক্টিরিয়াল ও ফাংগাস ইনফেকশন মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়াল সাবান ও ক্রিম বা পাউডার ব্যবহার করুন, বিশেষ করে আপনার ত্বক যদি অতিমাত্রায় সেন্সিটিভ হয়, তাহলে। তৈলাক্ত ত্বকে পিম্পল্স কিংবা ফুসকুড়ি হওয়ার সমস্যা বৃদ্ধি পায়। ত্বকে প্রদাহ বা চুলকানি হয়। ঘামে ভেজা বা বৃষ্টির জলে ভিজে যাওয়া জামাকাপড় বেশিক্ষণ গায়ে রাখলে সমস্যা বাড়বে। তাই স্নানের সময় অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড কয়েক ফোঁটা জলে মিশিয়ে স্নান করুন। শুকনো করে শরীর মুছে নিন। পায়ের ফাঁকে যেন জল না থাকে। পুরোপুরি শুকনো না হওয়া জামাকাপড় গায়ে পরবেন না। রাস্তা থেকে ফিরে অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড দিয়ে পা ধুয়ে নিন। ডেটল বা বেটাডিন এক্ষেত্রে অ্যান্টিফাংগাল হিসাবে কাজ করবে।
(৪) তৈলাক্ত বা জাংক ফুড নয়
এসময় শরীরে অ্যাসিডিটির মাত্রা বাড়ে। পাচনতন্ত্রের নানা সমস্যা দেখা দেয়। গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলুন। পেট খারাপের কমন সমস্যায় এসময় অনেকেই জর্জরিত হন। তাই সহজপাচ্য খাবারই এসময় গ্রহণ করা ভালো। বর্ষাকালে রাস্তার খোলা খাবার, কাটা ফল, খোলা জায়গায় তৈরি হওয়া ধাবা বা রেস্তোরাঁর খাবার না খাওয়াই ভালো।
(৫) চোখ পরিষ্কার রাখুন
বর্ষায় চোখের নানা রকম সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই চোখের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন। প্রতিবার বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে চোখ ধুয়ে নিন। স্যানিটাইজারে হাত পরিষ্কার করে তবেই হাত চোখে লাগাবেন। কন্ট্যাক্ট লেন্স পরিচ্ছন্ন রাখুন কারণ এটাও ফাংগাল ইনফেকশনের অন্যতম কারণ হতে পারে। রাতে ঘুমোনোর আগে কয়েক ফোঁটা গোলাপজল চোখে দিন। পরিষ্কার জলে একটুকরো সালফার রেখে, পরে এই জলে চোখ ধুতে পারেন।
(৬) রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান
সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য নিজের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান। শরীরকে ভেতর থেকে মজবুত করুন যা একমাত্র সুষম খাদ্য গ্রহণ দ্বারাই হওয়া সম্ভব। প্রতিদিন রসালো ফল, সবুজ শাকসবজি খাবেন। আপেল, নাসপাতি, বেদানা খান। রান্নায় অল্প রসুন ব্যবহার করুন। প্রতিদিন দই খান।
(৭) পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
বর্ষায় ইনফেকশন বৃদ্ধি পায় বলে পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াতের পর হাত পা ধোয়া, রুমাল পরিচ্ছন্ন রাখা, মোজা শুকনো করে পরা– এই বেসিক নিয়মগুলো মাথায় রাখবেন। বাইরে থেকে বৃষ্টিতে ভিজে ফিরলে অবশ্যই স্নান করে নেবেন।
পরামর্শঃ ডা. রবীন্দ্র গুপ্তা
ইন্টারনাল মেডিসিন কনসালট্যান্ট
কলাম্বিয়া এশিয়া হসপিটাল