নিয়মিত প্রায় ৩৪-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে চলে যাচ্ছে তাপমাত্রা। এই তীব্র তাপমাত্রা এবং করোনা-অতিমারির আবহে, আমাদের শরীর সুস্থ-স্বাভাবিক রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং সঠিক হজমের গুরুত্ব রয়েছে। এই দুটি বিষয় বিবেচনা করে, সম্প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন ডা.সঞ্জয় মণ্ডল।

এই করোনা সংক্রমণের আবহে কী ধরণের খাবার গ্রহণ করা উচিত আমাদের?

গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে, প্রচুর তরল পান করা উচিত আমাদের। অর্থাৎ, দৈনিক ৩ থেকে ৪ লিটার তরল গ্রহণ করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে প্লেইন জল পান করা উচিত। এক্ষেত্রে, পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ফ্লাস্কগুলিতে জল বহন করা উচিত এবং দোকানগুলি থেকে বোতলজাত ভালোমানের জল কেনা উচিত। ক্যান-আকারে থাকা কোমল পানীয় অর্থাৎ কোল্ড ড্রিঙ্কস, এনার্জি ড্রিংকস প্রভৃতি এড়ানো উচিত।

মনে রাখতে হবে, কৃত্রিম পানীয়গুলিতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ক্যালোরি থাকে এবং হাইপারটোনিক হয়। অতএব, কোমল পানীয় ভালো স্বাদ দিতে পারলেও, আসলে শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে সহায়তা করে না। সফট ড্রিংকস-এ বেশি পরিমাণে শর্করা উপস্থিত থাকার কারণে, স্বাস্থ্যের উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই, ক্যানজাত ফলের রসের পরিবর্তে, আমাদের সর্বদা গোটা ফল খাওয়া উচিত। কারণ, গোটা ফল প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অন্যান্য খনিজ সরবরাহ করে। যা ফলের রসে পাওয়া যায় না সঠিক পরিমাণে।

আর ডায়াবেটিস না থাকলে, নারকেল জলও পান করতে পারেন। এতে থাকা ইলেক্ট্রোলাইটগুলি মারাত্মক ডিহাইড্রেশন, হিট স্ট্রোক ইত্যাদি প্রতিরোধে বেশ কার্যকর হতে পারে।

অত্যধিক গরম এবং এই করোনাআবহে কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত?

খাবারের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, গরমের সময় সহজেই হজম হয় এমন কম তেলমশলা-যুক্ত হালকা খাবার খাওয়া প্রয়োজন। ফাস্ট ফুড খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে এই সংকটপূর্ণ সময়ে পরিবর্তে খেতে হবে মরশুমি ফল, স্যালাড এবং শাকসবজি। যেহেতু বেশিরভাগ খাবার এই গরম আবহাওয়ায় সহজেই নষ্ট হয়ে যায়, তাই সবসময় টাটকা অর্থাৎ, তখনই তৈরি করা হয়েছে এমন খাবার খেতে হবে। বাইরের তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় খোলা রাখা খাবারগুলি সাধারণত এড়ানো উচিত। এছাড়া, রাস্তার খাবার একেবারে খাওয়া উচিত নয় এখন। কারণ, করোনা ছাড়াও এই সময় টাইফয়েড এবং গ্যাস্ট্রো এন্টেরাইটিসের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।

এই সময় আর কী কী শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে?

কোষ্ঠকাঠিন্য, ডিহাইড্রেশন, হিট স্ট্রোক এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা থাকে এই সময়। আর কোষ্ঠকাঠিন্য স্পষ্টতই পাইলস এবং ফিশারের মতো অ্যানোরেক্টাল সমস্যাগুলির প্রবণতা বৃদ্ধি করতে পারে। সঠিক ভাবে তরল গ্রহণের অভাবে এগুলি মূলত ঘটে থাকে। তাই নিয়মিত সঠিক পরিমাণে জল পান করুন।

এখন বেশিরভাগ সময়ই আমরা বাড়িতে কম পরিশ্রম করে দিন কাটাচ্ছি ফিটনেস এবং শরীরে সঠিক ক্যালোরি বজায় রাখব কী করে?

আমাদের মাথায় রাখতে হবে, স্থূলতাও এক বিপজ্জনক অসুখ। অতএব, দীর্ঘ সময় বসে কাজ না করে, মাঝেমধ্যে হাঁটাচলা করুন এবং সঠিক ক্যালোরির খাবার খান। সেইসঙ্গে, খাবার হজম করার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করতে ভুলবেন না। আর স্থূলতা এড়াতে এক্ষেত্রে আপনার শরীরের ওজন, বয়স এবং অন্যান্য ঘাটতি দেখে নিয়ে চিকিৎসক আপনাকে জানিয়ে দেবেন প্রতিদিন কত ক্যালোরির প্রয়োজন আপনার এবং এর জন্য কতটা কী খেতে হবে।

এই করোনার আবহে বিশেষ আর কী কী সতর্কতা নিতে হবে?

এই করোনার আবহে রোগ প্রতিরোধের তিনটি স্তম্ভ অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে। এর মধ্যে মাস্ক, নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব এবং হাতের স্বাস্থ্যবিধি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অথবা হাত স্যানিটাইজ করতে হবে কিছু সময়ের ব্যবধানে। তবে গরমে সবসময় মাস্ক পরা কঠিন মনে হলে, ফাঁকা জায়গায় থাকলে মাস্ক একটু নামিয়ে ভালো ভাবে অক্সিজেন নিয়ে নিন। আর এখন কোথাও ভিড় করা উচিত নয়। আর যে-সমস্ত খাবার কাঁচা খাওয়া হয়, সেগুলো গরমজলে ভালো ভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত। হোটেল এবং রেস্তোরাঁয় এখন না যাওয়াই ভালো। পরিবর্তে, নিরাপদে ঘরে বসে খাবার তৈরি করে খাওয়া উচিত। কারণ ঘরের খাবার খেলে যেমন শরীর ভালো থাকবে, ঠিক তেমনই আর্থিক সাশ্রয় ঘটাবে।

এ প্রসঙ্গে আরও মনে রাখবেন, সঠিক সময়ে খেতে হবে এবং রাত ১১টার মধ্যে ঘুমোনোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ধূমপান এবং মদ্যপান বন্ধ করতে হবে পুরোপুরি।

ডা. সঞ্জয় মণ্ডল,

গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টিনাল সার্জন এবং অ্যাডভান্সড ল্যাপারোস্কোপিক ও জিআই অঙ্কো-সার্জারি বিশেষজ্ঞ

এএমআরআই হাসপাতাল,

সল্টলেক স্পেশালিটি ক্লিনিক, কলকাতা

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...