নম্রতা কর্পোরেট সেক্টরের এক ব্যস্ত কর্মী। সম্প্রতি মাতৃত্বের সুন্দর অনুভূতিগুলির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে নম্রতা। তার শরীরের ভিতরের ভ্রূণ যত পরিণত হচ্ছে, আকার পাচ্ছে শিশু, ততই তার বাহ্যিক চেহারায় বদল ঘটছে। এতদিনকার মাপমতো পছন্দসই পোশাকগুলি আর কিছুতেই শরীরে আঁটতে চাইছে না, তার ক্রমশ স্ফীত হতে থাকা উদরের কারণে। মাতৃত্বের অনুভূতি একদিকে যেমন ভারি সুন্দর, অন্যদিকে এই শারীরিক পরিবর্তন যেন বড়োই অস্বস্তিকর। অথচ এ যুগের ব্যস্ত কর্মরতা মেয়েদের পক্ষে আগাগোড়া প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড-এ ছুটি নিয়ে বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াও সম্ভব নয়। সুতরাং চেহারার এই অবস্থা সত্ত্বেও নিজেকে প্রেজেন্টেবল করতে হবে দফতরে, এটাই এ যুগের দস্তুর।
ভরা মাসগুলোয় নম্রতার ক্ষেত্রে অবশ্য একটা ‘পোশাকি’ দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তার ড্রেসিং-এর সচেতনতার অভাবের কারণে। সেই পরিস্থিতি-টা অবশ্য নম্রতা অতিক্রম করতে পেরেছিল তারই এক অফিস-সহচরীর সাহায্যে। নম্রতার সেই অভিজ্ঞতা পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করতে গিয়ে সে বলে, ‘আমি যখন এক্সপেক্ট করছি, একবারও ভাবিনি যে এই সময়টার জন্যও আমার ওয়ার্ডরোবে কিছু বিশেষ ধরনের পোশাক দরকার। ভেবেছিলাম নিজের ক্রমবর্ধমান চেহারাটা অনায়াসেই তার মাপমতো পোশাক খুঁজে পাবে স্বামীর আলমারিতে। তাই ওর কিছু টি-শার্ট আর জিনস দিয়েই কাজ চালাতে শুরু করলাম। কিন্তু একদিন কাজের ফাঁকে আমার সহকর্মী সুমনার, হঠাৎই চোখ পড়ে আমার আনবাটনড্ জিনস-এর উপর দিয়ে বেরিয়ে থাকা পেট এবং সে-ই আমায় সচেতন করে ওই বিসদৃশ সাজের ব্যাপারে। বোঝায় যে, ‘বডি শেপ-এ যখন পরিবর্তন হচ্ছে, তখন পোশাকেও পরিবর্তন করা জরুরি।’
ঠিক এই ভাবনাটাই প্রত্যেক সচেতন প্রেগন্যান্ট নারীর থাকা উচিত, গর্ভবতী অবস্থায় পোশাক নির্বাচনের সময়। আর সত্যিই তো হালফিল সময়ের মেয়েরা, ওয়েডিং ড্রেস, পার্টি ড্রেস সবকিছুতেই যখন ফ্যাশনদুরস্ত, তখন, প্রেগনেন্সি ওায়ার্ডরোব চয়ন করতেই বা পিছপা হবে কেন! সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই তো ভাবনাও বদলায়, তাই এই সময়ের জন্যই চাই রুচিশীল আরামদায়ক পোশাক যাতে উদরের স্ফীতিও চট করে লোকসমক্ষে না আসে। কিন্তু মুশকিল হল, উদরের স্ফীতি ঢাকতে অনেকেই ওভার সাইজড পোশাক পরে বিসদৃশ সাজে পথে বেরিয়ে পড়েন। এটা বোঝা জরুরি যে, হঠাৎ করে নিজের ড্রেসিং না বদলেও, আকর্ষণীয় সাজে নিজেকে প্রেজেন্ট করা যায়।
এথনিক ওয়্যার যারা পরেন তারা ঘেরওয়ালা কামিজ, আমব্রেলা কাট কুর্তি পরতে পারেন। ওয়েস্টার্ন পরলে বেলুন টপ বা ফ্রিলড ড্রেস ভালোলাগবে। আসলে পোশাক যা-ই পরুন না কেন, কমফর্ট-এর শুরুটা হয় অন্তর্বাস দিয়ে। মাতৃত্বের সময়টাতে স্তনের আকারেও পরিবর্তন আসে। সেক্ষেত্রে অন্তর্বাসের মাপেও বদল প্রয়োজন। শুরুতে কেবল নরম স্পোর্টস ব্রা পরুন। শেষের দিনগুলিতে নরম ইলাস্টিক কাপ বেছে নিন, স্টিফ আন্ডার-ওয়্যার যুক্ত ব্রা-এর বদলে। দেখবেন যাতে কাপ আর ব্রা-এর ব্যান্ড অতিরিক্ত টাইট হয়ে শরীরে না চেপে বসে। ভালো হয়, যদি স্তনের আকারের ক্রমপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, সাধারণ ব্রা থেকে ম্যাটারনিটি ব্রা-এ নিজেকে মানিয়ে নেন। একই সঙ্গে ম্যাটারনিটি ব্রা ও পরবর্তী সময়ের জন্য নার্সিং ব্রা হিসাবে ব্যবহার করা যাবে, এমন ব্রা-ও আজকাল পাওয়া যায়। সে ধরনের ব্রা পরলে দীর্ঘ সময় অফিসে বসে কাজ করতেও অসুবিধা হবে না। সাধারণ অবস্থায় যে-পোশাক পরেন, সেই স্টাইলেই স্টিক করে থাকুন, শুধু উদর স্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে পোশাকে ১-২ সাইজ বাড়িয়ে নিন। কেবল সুতি অথবা কোনও স্ট্রেচেবল ফ্যাব্রিকের পোশাকই কিনুন। আরামদায়ক, ঢিলেঢালা কিন্তু ফিটিং-এও বেঢপ নয়, এমন পোশাকই আপনার প্রায়োরিটি হওয়া উচিত।
এ যুগের নারীদের অন্যতম পছন্দের পোশাক জিনস। কিন্তু এ সময়ে জিনস পরলেও তা ওয়েস্ট ব্যান্ড-যুক্ত জিনস হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এছাড়া লংড্রেস, স্কার্ট-টপ, স্ল্যাক্স, কেপ্রি– এখন সবই পরছেন সাহসিনীরা। অফিসের জন্য অবশ্য ফ্রিল্ড বা বেশি ঘেরদার স্কার্ট, প্লিটেড কামিজ, লুজ ফিটিং কুর্তি, লেগিংস-ই ভালো। মলমল, ভয়েল, সুতি– এইসব ফ্যাব্রিকই আমাদের গ্রীষ্মপ্রধান দেশের পক্ষে আদর্শ।
ফিগারের হেরফের
আপাদমস্তক স্থূল হলে – একরঙা উপরের ও নীচের পোশাক নির্বাচন করুন। এর ফলে আপনার চেহারা একটু লম্বাটে দেখাবে এবং স্থূল লাগবে না। বোট নেক ও হাই নেক দুই-ই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরতে পারেন। স্লিম ফিট কাট-এর পোশাক নির্বাচন করুন।
দেহের নীচের অংশ ভারী দেখালে – গাঢ় রঙের স্ল্যাক্স, প্যান্টস্, স্কার্ট বা লেগিংস বাছুন। কালো, ব্রাউন, নেভি ব্লু, ডার্ক গ্রে, ও ওয়াইন রং এক্ষেত্রে আদর্শ। হরাইজনটাল স্ট্রাইপ অ্যাভয়েড করুন। পুরুষালি স্ট্রাইপ খারাপ লাগবে না আর শার্ট সামান্য ওভার সাইজড্ হলেও ক্ষতি নেই।
যদি লম্বা হন – ম্যাটারনিটি নি-লেংথ পোশাক, বা প্লিটেড স্কার্টে খারাপ দেখাবে না। একরঙা পোশাকের বদলে মাল্টিকালার্ড পোশাক পরুন। দেহের উপরের অংশের পোশাকের সঙ্গে নীচের দিকের পরিধান কন্ট্রাস্ট কালারের মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ রাখুন। লং জ্যাকেট ও প্যান্ট-এও দারুণ মানাবে।
জিনস – প্রেগন্যান্ট হলেই বা কী, জিনস পরার লোভ কি সহজে সংবরণ করা যায়? সমস্যা সমাধানে রয়েছে ম্যাটারনিটি জিনস। ‘নো ব্যান্ড’ বৈশিষ্ট্যের জন্যই ম্যাটারনিটি জিনস, এ সময়ের পক্ষে জাস্ট পারফেক্ট। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি থেকে কেটি হোল্মস– স্ফীত উদরেও এই পোশাকে নজরকাড়া সৌন্দর্যে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। এই প্যান্টের লো রাইজ আন্ডারবেলি ফিট, একটি বোতাম ও চেন-এর সাহায্যে পেটের স্থূল অংশ-কে সাপোর্ট দিয়ে রাখে এবং পোশাকটিকে আরামদায়ক করে তোলে।
যারা একটু এক্সট্রা বেলি সাপোর্ট চান, তাদের জন্য রয়েছে ইলাস্টিক ওয়েস্ট ব্যান্ড-যুক্ত বিলো দ্য বেলি জিনস। এই ওয়েস্ট ব্যান্ড, পেট-কে সুন্দর সাপোর্ট দেয়, এর সঙ্গে একটু ঝুলওয়ালা টপ পরলে, পেটের ফোলাভাব ঢেকেও ফেলা যায় সহজেই।
মিড বেলি জিনস চাইলে, একটি বিদেশি কোম্পানির তৈরি ‘মামা ব্ল্যাক ম্যাটারনিটি জিনস’-এর খোঁজ করুন। এতে এক্সট্রা সাপোর্ট-এর জন্য ইলাস্টিক ব্যান্ড রয়েছে। এটি দু’ভাবে ব্যবহার করা যায়। প্রেগন্যান্সির সময় ব্যান্ড থাকা অবস্থায় জিনস পরুন। প্রয়োজন ফুরোলে ব্যান্ড গুটিয়ে পেট অনাবৃত রেখে জিনসটি ব্যবহার করুন।
আসলে ফ্যাশনেবল্ থাকাটাই হল মূল ব্যাপার। এই টিপস শুধু কর্মরতাদের জন্যই নয়। সাধারণ গৃহবধূরাও এই অবস্থায় নানা কাজে বাইরে বেরোতে হলে, একই পরামর্শ মেনে চলুন। এই অবস্থাতেও যে-কোনও পোশাকই স্বচ্ছন্দে ক্যারি করুন। শুধু চাই একটু কনফিডেন্স।