প্রাচীনকালে মুনি-ঋষিরা তাদের স্বাস্থ্যরক্ষা করতেন এই যোগাভ্যাসের মাধ্যমে। প্রায় ৪০০ বছর ধরে বজায় রয়েছে সেই যোগবিদ্যার ধারা এবং সাফল্য। আসলে, দেহ ও মনের যৌবন ধরে রাখার এটি অন্যতম প্রধান কৌশল। রোগ-ব্যাধি সরিয়ে রাখতে যোগব্যায়ামের সাহায্য নিন। শিখুন যোগাসনের সঠিক পদ্ধতি এবং ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করার কৌশল।
তারাসন
পদ্ধতি : মসৃণ জায়গায় একটি Yoga-Mat বা মোটা চাদর পাতুন। সোজা হয়ে দাঁড়ান। দুটি পায়ের মাঝখানে ছয় ইঞ্চির দূরত্ব বজায় রাখুন। এবার হাত দুটি উপরে সোজা তুলে, দুই হাতের আটটি আঙুল (বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ছাড়া) লক করুন। এরপর কোমর থেকে হাত পর্যন্ত শরীরের অংশ যতটা সম্ভব হেলিয়ে একবার বাম দিকে, একবার ডান দিকে নিয়ে যান। এই বাম দিক এবং ডান দিক করার মাঝে, সোজা অবস্থায় দুই থেকে তিন সেকেন্ড স্টে করুন। এভাবে, উভয় দিকে অন্তত দশবার এই আসন অভ্যাস করে শবাসনে (শুয়ে থাকুন কিছুক্ষণ। সকাল এবং বিকেল বেলায় প্রতিদিন এই আসন করলে অনেক উপকার পাবেন।
উপকারিতা : এই আসন করলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। গর্ভাবস্থার প্রথম দুতিন মাস এই আসন করলে গর্ভস্থ শিশুর গ্রোথ ভালো হবে। স্নাযুসমূহ স্বাভাবিক থাকবে এবং মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে। হাত, পা, বুক এবং পিঠের মাংসপেশীকে নমনীয় রাখবে। স্পন্ডিলোসিস-এর সমস্যা প্রতিরোধ করবে।
ত্রিকোণাসন
ত্রিভূজের যেমন তিনটি কোণ থাকে, এই আসনও তিনটি কোণবিশিষ্ট হয়, তাই এটিকে ত্রিকোণাসন বলা হয়। যে-কোনও জায়গায় খুব সহজেই এই আসন করা যায়। মজার বিষয় হল এই যে, আসনটির পদ্ধতি সহজ হলেও, এর থেকে অনেক সুফল পাওয়া যায়।
পদ্ধতি : প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান। পা দুটিকে ছড়িয়ে দিন দু’দিকে। দুটি পায়ের মধ্যে অন্তত চার ফিট-এর ব্যবধান থাকা চাই। এবার বাম হাত ছোঁয়ান বাম পায়ে পাতায়, ডান হাত সোজা উপরে তুলুন। এই অবস্থায় স্টে করুন কয়েক সেকেন্ড। আবার একই ভাবে ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের পাতায় ছোঁয়ান এবং বাম হাত সোজা উপরে তুলুন। দৃষ্টি সবসময় উপরের হাতের দিকে থাকবে। আর মনে রাখবেন, নীচের দিকে যে-হাত থাকবে, তা ১৫ ডিগ্রি কোণ তৈরি করবে এবং উপরে যে-হাত থাকবে, তা ৯০ ডিগ্রি কোণ তৈরি করবে। সারাদিনে দু’দফায়, দশবার করে এই যোগাসন অভ্যাস করুন।
উপকারিতা : হাত, পা, বুক, কাঁধ প্রভৃতি জায়গার মাংসপেশী নমনীয় রাখে এবং হাড় মজবুত রাখে। হজমে সাহায্য করে। দূর করে মানসিক চাপ। রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রেখে স্নাযুরোগ আটকায়।
সর্তকতা : পেট খারাপ থাকলে এই আসন করবেন না।
উষ্ট্রাসন
এই আসনটি করার সময় শরীর উটের মতো আকার ধারণ করে বলেই, এটিকে উষ্ট্রাসন বা ক্যামেল-পোজ বলা হয়। প্রতিদিন দুবার অর্থাৎ, সকালে এবং বিকেলে এই আসন করলে বেশি উপকার পাবেন।
পদ্ধতি : প্রথমে হাঁটু গেড়ে বসুন। দুই পায়ের হাঁটুর সঙ্গে দুই কাঁধ সমান্তরাল রাখুন। দুটি পায়ের পাতা মাটি ছুঁইয়ে রাখুন এবং গোড়ালি ও পায়ের তলদেশকে রাখুন আকাশমুখী। হাঁটু গাড়া অবস্থায় স্টে করুন দশ সেকেন্ড। এই L শেপ-এ থাকার পর, মাথা হেলিয়ে দিন পিছনে গোড়ালি পর্যন্ত এবং দুই হাত দিয়ে ধরুন দুই পায়ের গোড়ালি। এক্ষেত্রে আপনার মুখমণ্ডল থাকবে ঊর্ধ্বমুখী। এই উটের মতো অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড থাকার পর, আবার ধীরে ধীরে হাঁটু গাড়া অবস্থায় L প্যাটার্ন-এ ফিরে আসুন এবং পাঁচ সেকেন্ড স্টে করার পর আসনটি পুনরায় অভ্যাস করুন। সকাল-বিকেল দু’দফায় পাঁচ বার করে করুন এই আসন।
উপকারিতা : দুই পায়ের হাঁটু এবং গোড়ালিকে মজবুত করে। উরু, নিতম্ব, কাঁধ এবং হাতের মাংসপেশীকে নমনীয় রাখে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়। হজমশক্তি বাড়ায়। মেরুদণ্ড সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে। সেই সঙ্গে চোয়ালের হার শক্ত করে এই আসন।
সতর্কতা : পেটে, বুকে কিংবা পায়ে কোনও সার্জারি থাকলে এই আসন করবেন না।
মডেলঃ অনুসূয়া দাস।