অপরিচ্ছন্নতা এবং অসতর্কতা বিপদ ডেকে আনতে পারে বর্ষাকালে। তাই, এই সময় নিজে যেমন যত্নে থাকবেন, বাচ্চাদের আরও বেশি যত্নে রাখবেন।
বর্ষাকালে আবহাওয়া বড়ো খামখেয়ালি। এই রোদ তো এই বৃষ্টি। অতএব, তাপমাত্রা বাড়তে-কমতে থাকে। আর এই তাপমাত্রার ওঠানামা মানব-শরীর মানিয়ে নিতে পারে না অনেক সময়। তাই অনেকে জ্বর-অসুখে আক্রান্ত হয়, বিশেষ করে শিশুরা। এ সময় বাতাসে রোগ-জীবাণু ভেসে বেড়ায়। অতএব, শিশুদের সুরক্ষিত রাখা জরুরি।
বৃষ্টির জল গায়ে লাগলে কিংবা জীবাণু আক্রমণ করলে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে গিয়ে ১০২-১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়ে যায়। প্রতিদিন সন্ধেবেলা টেম্পারেচার বাড়ে এবং এরকম চলতে থাকে প্রায় পাঁচ থেকে সাতদিন। সঙ্গে বমি, তলপেটে ব্যথা, লুজ মোশন প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এই সমস্ত উপসর্গ যদি একইসঙ্গে দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা শুরু করা উচিত। সেইসঙ্গে, পুরো বর্ষাকালে হয় জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খেতে হবে অথবা কার্বোনেটেড ওয়াটার কিনে খেতে হবে।
শাকসবজি গরম জলে নুন মিশিয়ে ধুয়ে, তারপর রান্না করতে হবে। ফল কেটে দীর্ঘ সময় রেখে খাওয়া যাবে না। প্রতিবার খাওয়ার আগে ভালো ভাবে হাত ধুতে হবে সাবান দিয়ে। ফুটপাতে বিক্রি করা খাবার খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে বর্ষাকালে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বিশুদ্ধ জল পান করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণে।
জামাকাপড় রোদে ঠিকমতো না শুকোলে আয়রন করে পরাতে হবে বাচ্চাদের। বৃষ্টিতে ভিজে গেলে, বাড়িতে এসে সঙ্গে সঙ্গে শুদ্ধ হালকা গরমজলে স্নান করে নিতে হবে। রাতে মশারি টাঙিয়ে শুতে হবে এবং বিছানায় বাসি চাদর রাখা যাবে না। নালা নর্দমায় ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে রাখবেন এবং কোথাও খোলা জায়গায় জল জমিয়ে রাখবেন না। সাধারণ জ্বরে প্যারাসিটামল ওষুধ খেলেও, যদি জ্বর দু’দিনের বেশি কন্টিনিউ করে, তাহলে নিজের সিদ্ধান্তে ওষুধ না খেয়ে, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খান।
সতর্কতা এবং পরামর্শ
বর্ষাকালে বিভিন্ন অসুখ থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখার জন্য কী কী করা উচিত, সেই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন অ্যাপোলো গ্লেনেগেলস (কলকাতা) হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
বর্ষাকাল মানেই শ্বাসকষ্ট, ত্বকের সমস্যা এবং জল-বাহিত অসুখ দ্রুত ছড়ায়। যদি আগে থেকে প্রতিরোধ গড়ে না তোলা যায়, অসুখ অনেক দূর গড়াতে পারে এমনকী প্রাণহানিও হয়। ডায়েরিয়া, ছত্রাক সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ঠান্ডা লাগা, কনজাংটিভাইটিস, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ, লেপাটোসপাইরোসিস ইত্যাদি রোগ এই মরশুমে অসতর্কতা ও অপরিচ্ছন্নতার জন্য ছড়ায়।
বর্ষার সময়ে শিশুদের ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ভাইরাল এবং পেটের সংক্রমণ বেশি হয়। এই সময়ে কোনও শিশু যদি দূষিত খাবার বা জল পান করে তাহলে অস্বস্তি, বমিভাব, জ্বর এবং অস্বাভাবিক রকমের ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে। কেউ যদি এইরকম শারীরিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তাহলে তার দ্রুত চিকিৎসা ও শুশ্রুষার প্রয়োজন।
বর্ষা জাঁকিয়ে আসার আগে আবহাওয়ায় তাপমাত্রার তারতম্য ও বাতাসে জলকণার আধিক্যের ফলে ভাইরাল, ইনফেকশনের সম্ভাবনা বাড়ে। যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন বৃষ্টির জলের সঙ্গে মাইক্রো-অর্গানিজম অর্থাৎ ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক শহরের পানীয় জলে মিশে যেতে পারে বন্যার সময় বা জলের পাইপ লাইন ফেটে গিয়ে। এর ফলে ইনফেকশন ছড়াতে পারে আর ডায়েরিয়া, গ্যাস্ট্রো এন্ট্রাইটিস, জন্ডিস, জ্বর ও টাইফায়েড-এর প্রকোপ বাড়ে।
বর্ষা মানেই মশার বংশ বিস্তারের সময়। অনেক জায়গাতেই জল জমার সমস্যা রয়েছে, যা, জমা জলে মশার বংশ বিস্তারে প্রভূত সহায়তা করে। আর ম্যালেরিয়া সহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগেরও এই সময় প্রাদুর্ভাব ঘটে, তাই প্রয়োজন যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের।
ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়াও এই মরশুমে বাড়তে থাকে। তাই যথাসম্ভব নজরে রাখুন শিশুদের। কারণ, তারাই সবার আগে অসুস্থ হয়। আর যদি কেউ অসুস্থ হয়, তাহলে অবশ্যই প্রযুক্তি ও যথাযথ চিকিৎসার পরিকাঠামো রয়েছে এমন হাসপাতালে রোগাক্রান্তকে নিয়ে যান। কারণ, উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে এইসব রোগ থেকে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে থাকে।
বর্ষায় রোগ প্রতিরোধের উপায়
কী করবেন
- লম্বা হাতা জামা ও মোজা পরুন মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে
- মশা দূর করার রেপেলেন্টস ও মশারি ব্যবহার করুন
- প্রচুর জল পান করুন
- খাবার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন
- অস্বস্তি হলে বা যদি নির্দিষ্ট কোনও লক্ষণ দেখা দেয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কী করবেন না
- খোলা খাবার ও কাটা ফল খাবেন না
- পথের ধারে বাইরের খাবার খাবেন না
- বর্ষাকালে বেশিক্ষণ স্নান না করাই ভালো
- অপরিশোধিত জল পান করবেন না
—–