চিকিৎসার খরচ ক্রমশ আকাশ ছুঁচ্ছে। সামান্য জ্বর, সর্দি-কাশিতেই মাসমাইনের অনেকটা চলে যায়। আর একটু বড়োসড়ো কিছু হওয়া মানে তো আর কথাই নেই। রোগীর সঙ্গে চিকিৎসার খরচের চিন্তায় রাতের ঘুম উধাও। চিকিৎসার বিল মেটাতে ঘটিবাটি বিক্রির জোগাড়। তাই ভবিষ্যতে নিজের পরিবার ও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে চিকিৎসা বিমা করে রাখুন।Health issues -এ বড়ো ধাক্বার থেকে বাঁচতে প্রতি বছর অল্প পরিমাণ প্রিমিয়াম দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

Mediclaim করলেই চলবে না। বাজারে বহু কোম্পানি আছে। রয়েছে বিভিন্ন প্ল্যানের মেডিক্লেম। কোনওটাতে প্রথমে আপনাকে খরচ করতে হবে, পরে টাকা পাবেন। আবার কোনওটাতে চিকিৎসা খরচ সরাসরি হাসপাতালে জমা পড়বে। এছাড়াও আরও বেশ কিছু বিষয়– কোন রোগের খরচ পাবেন, কোনটার নয়। কী কী রোগে কতদিন ‘লক ইন পিরিয়ড’ রয়েছে। হাসপাতাল, নার্সিংহোমের নাম ইত্যাদি। মেডিক্লেম করার আগে তাই ভালোভাবে খতিয়ে দেখাটা জরুরি।

মেডিক্লেম পদ্ধতি

মূলত দুই ধরনের পদ্ধতি প্রচলিত। ক্যাশলেস ও রি-ইম্বার্সমেন্ট। ক্যাশলেসের মধ্যে বিমাকৃত অর্থের মধ্যে খরচ হলে এক পয়সাও আপনাকে দিতে হবে না। তালিকাভুক্ত হাসপাতালে ভর্তি হলেই চলবে। বিমা সংস্থাই সরাসরি চিকিৎসার বিল মিটিয়ে দেবে। রি-ইম্বার্সমেন্ট পদ্ধতিতে শুরুতে আপনাকে খরচ বহন করতে হবে। পরে চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি, রসিদ জমা দেওয়ার পর তা মিটিয়ে দেবে বিমা সংস্থা। দুই পদ্ধতির মধ্যে ক্যাশলেস তুলনামূলক সুবিধার। কারণ হঠাৎ করে হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে, অনেক সময় হাতে টাকা থাকে না। মেডিক্লেম ক্যাশলেস থাকলে সেই টেনশন দূর হয়। ‘টিপিএ’ অর্থাৎ থার্ড পার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মাধ্যমে বিমা সংস্থা যার দায় নিয়ে নেয়।

টিপিএ

১)  মেডিক্লেমের ক্ষেত্রে টিপিএ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাশলেস পরিষেবার মূল রাশটাই থাকে বিমা সংস্থা ও হাসপাতালের মধ্যে যোগসূত্রকারী এই টিপিএ-র হাতে। হাসপাতাল, নার্সিংহোমের সঙ্গে চুক্তি করে টিপিএ এবং চুক্তিভুক্ত হাসপাতালে গ্রাহকদের চিকিৎসা পরিষেবার বিষয়টি দেখভাল করে।

২)  সার্ভেয়ার, ইন্সপেক্টর, রিটায়ার্ড ইনশিয়োরেন্স অফিসার, কখনও কখনও ডাক্তাররাও টিপিএ হিসাবে কাজ করে থাকে।

৩)  টিপিএ-র কার্যপদ্ধতি – থার্ড পার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে স্বীকৃতি দিয়েছে আইআরডিএ। গ্রাহকদের দ্রুত পরিষেবা দিতেই মূলত এই ব্যবস্থা। টিপিএ-র মূল কাজগুলি হল–

ক্যাশলেস হসপিটালাইজেশন – পলিসির মাধ্যমে কোন কোন হাসপাতাল, নার্সিংহোমে চিকিৎসার সুবিধা মিলবে, তা গ্রাহকদের জানানো।

আই কার্ড – মেডিক্লেমের গ্রাহকদের পলিসি নেওয়ার সময় আই-কার্ড হস্তান্তর।

ক্লেম – ইনশিয়োরেন্স কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে হাসপাতাল ও পলিসি হোল্ডারের ক্লেম মেটাতে মূল ভূমিকা পালন করে।

কাস্টোমার সার্ভিস – ২৪ ঘন্টা সার্ভিস দিয়ে থাকে টিপিএ। প্রয়োজনমাফিক গ্রাহকের ডেটা, নেটওয়ার্ক, ক্লেম স্ট্যাটাস ও বেনিফিট ইত্যাদি পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য জোগায়।

পেপার ও কার্ডের মেন্টেনেন্স – কোনও টিপিএ, ইনশিয়োরেন্স কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পেপার রেকর্ড, ডকুমেন্ট, এভিডেন্স ও ট্রানজাকশনগুলির দেখভাল করে।

৪) প্রায় একদশক হয়ে গেলেও টিপিএ-র বিরুদ্ধে নানান অভিযোগও রয়েছে। চিকিৎসার পুরো খরচ দিতে না চাওয়া, হাসপাতালের বিল মেটাতে গড়িমসি, প্রতিশ্রুতিমাফিক বিমাকৃত অর্থ দেওয়া নিয়ে হয়রানি, তালিকাভুক্ত হাসপাতালে রোগীর ভর্তি নিয়ে টালবাহানা ইত্যাদি ইত্যাদি।

৫) হয়রানি হলে কী করবেন?

টিপিএ-র অসহযোগিতা নিয়ে সরাসরি বিমা সংস্থার কাছে সমস্যার কথা জানান। বিমা সংস্থা কর্ণপাত না করলে ‘ইনশিয়োরেন্স ওম্বাডসম্যান’ অফিসে অভিযোগ করুন। প্রয়োজনে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।

৬) পরিষেবা পেতে সতর্কতা – গ্রাহকদেরও বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

ক) বিমার পর পর টিপিএ-র থেকে ইনশিয়োরেন্স কার্ড নিয়ে রাখুন।

খ) যদি পলিসি রিনিউ করে থাকেন, তাহলে পলিসি এনরোলমেন্ট সম্পর্কে জেনে নিন।

গ) ক্লেম পদ্ধতি সঠিক এবং যথাযথ হওয়া দরকার। না হলে অনেক সময় হয়রানি হয়, ক্লেমের অর্থ আটকে যায়। এছাড়াও কয়েকটি বিষয়ে নজর দিতে হবে।

Cashless-এর ক্ষেত্রে

১)  হাসপাতালে ভর্তির সময় মেডিক্লেম কার্ড সঙ্গে রাখুন। দেখে নিন যে-রোগের চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন, তা আপনার মেডিক্লেমের অন্তর্ভুক্ত কি না।

২)  যে-হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তা বিমা পরিষেবার তালিকাভুক্ত কিনা। ক্যাশলেস ব্যবস্থা আছে কিনা। রোগের খরচ, কভারেজ সম্পর্কেও আগাম ওয়াকিবহাল হওয়া জরুরি। সাধারণত হসপিটালাইজড না হলে ওপিডি কনসালটেশন, প্রোসিডিওর, ইনভেস্টিগেশনগুলি ইনশিয়োরেন্স-এর আওতায় পড়ে না।

৩)  অনেক ক্ষেত্রে একটা অংশ গ্রাহককে বহন করতে হয়। আপনার মেডিক্লেমে এরকম কোনও শর্ত আছে কিনা দেখে নিন।

৪)  আপৎকালীন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিমা সংস্থাকে জানান এবং তার প্রমাণ রাখুন।

রি-ইম্বার্সমেন্ট-এর ক্ষেত্রে

১)  রি-ইম্বার্সমেন্টের ক্ষেত্রে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে নথিপত্র-সহ ক্লেম দাবি করুন। বাড়িতে ফিরেও চিকিৎসা করাতে হলে, সেই খরচের ক্লেমও এক মাসের মধ্যেই করুন।

২)  এই ক্ষেত্রে নথিপত্র পারফেক্ট থাকাটা জরুরি। প্রেসক্রিপশন, ডায়াগনোসিস সংক্রান্ত রিপোর্ট, ওষুধপত্র, চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য খরচের ক্যাশমেমো জমা দিতে হয়। ক্লেম জমার আগে এবিষয়ে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল হয়ে নিন। মনে রাখবেন, চুক্তি অনুযায়ী পলিসির অর্থের বাইরে অতিরিক্ত খরচ পাওয়া যায় না।

৩)  ইমারজেন্সি নয়, এমন কোনও রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা যদি হাসপাতালে রেফার করেন, তাহলে আগেভাগে তা বিমা সংস্থা বা টিপিএ-কে জানিয়ে খরচের বিষয়টি অনুমোদন করিয়ে নিন।

মনে রাখবেন পকেটে মেডিক্লেম বিমা মানে আপনার পরিবার অনেকাংশে সুরক্ষিত। তাই দেরি না করে চোখ-কান খোলা রেখে সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা বেছে নিন।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...