শরীর প্রকৃতির অসাধারণ দান। সুষম খাবার ও শরীরচর্চা প্রকৃতির সেরা দানকে আরও সুন্দর করে তোলে। করিনার জিরো ফিগার কিংবা বলিউড তারকাদের সিক্স প্যাকের পিছনে সবাইকে দৌড়োতে হবে, তার কোনও মানে নেই। তবে নিজেকে সুস্থ, সবল রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তাই একটু সময় বের করে নিন শরীরচর্চার জন্য।
আপনি কী ধরনের এক্সারসাইজ করবেন তা অনেকাংশে নির্ভর করবে আপনার স্বাস্থ্য, শরীরী গঠন, বয়স এবং জীবনশৈলীর উপর। একজনের ব্যায়াম পদ্ধতি আর-এক জনের পক্ষে সঠিক হবে, তার কোনও যুক্তি নেই। কষ্টদায়ক, অপছন্দের ব্যায়াম এড়িয়ে চলাই ভালো। যোগব্যায়াম, দৌড়োনো, হাঁটা, ওয়েট ট্রেনিং, সাঁতার, খেলাধুলো, নাচ শরীরচর্চার ভালো মাধ্যম।
ব্যায়ামের পদ্ধতি – ব্যায়াম করার সময় পাঁচটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত।
চাপ বাড়ানো – সাধারণ কাজকর্মের সময় শরীরের উপর যে চাপ পড়ে, ব্যায়ামের সময় তার চেয়ে বেশি চাপ দিতে হবে। ধাপে ধাপে এটা বাড়াতে হবে।
ওয়ার্ম-আপ – শরীরকে চালিত করে মস্তিষ্ক। যেভাবে ভাববেন, সেভাবে শরীর চলে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী অ্যাডজাস্ট করে নেয়। ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ওয়েট ট্রেনিং করলে শুরুতে ওয়ার্ম-আপ করে নিন। এর ফলে স্নায়ু, ওয়েট ট্রেনিংয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
দুর্বলতা – খেয়াল রাখতে হবে শরীর যেন দুর্বল না হয়ে পড়ে। শরীরচর্চার ফলে ক্যালোরি ক্ষয় হয়, যা পূরণে সুষম, পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। প্রচুর জল খান। জমিয়ে ঘুমোন। না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম – দৈনন্দিন রুটিনে ঢুকিয়ে নিতে হবে শরীরচর্চাকে। অনিয়মিত ব্যায়ামে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শরীরের উপর। ব্যায়ামের জন্য স্নায়ুকে তৈরি করতে হয়। ফলে নিয়মিত ব্যায়াম না করলে, স্নায়ু পুরোনো অবস্থানে চলে যাবে। ব্যায়ামের সুফল সেভাবে মিলবে না।
ব্যায়ামের বৈচিত্র্য – পরিস্থিতি অনুযায়ী, সময়বিশেষে ব্যায়ামে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। নিয়মিত একই ব্যায়াম করলে শরীর তার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যায়। দেহের উপর প্রয়োজনীয় বাড়তি চাপ তৈরি হয় না। ফলে উন্নতির রাস্তাটা একসময় বন্ধ হয়ে যায়। তাই পরিস্থিতি বদলাতে বদল আনা প্রয়োজন শরীরচর্চাতেও।
কী ধরনের ব্যায়াম করবেন – প্রতিটি মানুষের শরীরের গঠন ও চাহিদা সমান নয়। তাই কী ধরনের ব্যায়াম করবেন– এব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
প্রয়োজনীয় টিপস –
১) যে ব্যায়ামই করুন, বেসিক বিষয়গুলি মেনে চলুন
২) বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
৩) স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, তেমন ব্যায়ামই বাছুন
৪) নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম করুন
৫) শরীরচর্চার আগে স্যালাড, ফল, ড্রাইফুডের মতো হালকা কিছু খান
৬) পেট ভরে খাওয়ার তিন-চার ঘন্টা পর ব্যায়াম করতে পারবেন
৭) ব্যায়ামের সময় পোশাক গুরুত্বপূর্ণ। সুতির অথবা আরামদায়ক পোশাক বাছুন। ঠান্ডার সময় হালকা জ্যাকেট পরতে পারেন
৮) ঘাম মোছার জন্য হাতের কাছে পরিষ্কার তোয়ালে রাখুন
৯) প্রথম কয়েকদিন ব্যায়াম করার কারণে শরীরে ব্যথা অনুভব হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কেটে যায়
সুস্থ থাকতে সকালে হাঁটুন –
দৈনন্দিন কাজে কমবেশি সকলকেই দৌড়াতে হয়। চলাফেরার সময় কয়েকটা জিনিস মেনে চললে শরীরচর্চাও হয়ে যায়।
ক) চলার সময় শ্বসন ক্রিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন। এটি আপনার হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে
খ) হাঁটার সময় সুতির মোজা ব্যবহার করুন
গ) হাঁটার আদর্শ সময় হল ভোর। এই সময়ে বাতাসে ধূলিকণা, ক্ষতিকারক পদার্থের পরিমাণ কম থাকে। সকালের ফ্রেশ হাওয়া শরীর ও মনকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে
দৌড়োনো –
শরীরের ওজন কমাতে কিংবা ক্ষমতা বাড়াতে দৌড়ের বিকল্প নেই। এছাড়া নানাবিধ উপকার হয়।
নীরোগ হূদয় – দৌড়োলে হার্ট ভালো থাকে। হার্টবিট বেড়ে যায়। এতে স্নায়ুর শক্তি বৃদ্ধি পায়।
ওজন কমানো – বাড়তি ওজন কমাতে দৌড়োনো অত্যন্ত ফলদায়ক। দৌড়োনোর সময় শরীর থেকে প্রায় এক হাজার ক্যালোরি ক্ষয় হয়। ফলে ওজন কমে।
হাড়ে ক্ষমতা বৃদ্ধি – ব্যায়াম করলেও অনেক সময় শরীরের হাড় দুর্বলই থেকে যায়। কিন্তু ব্যায়াম না করেও শুধু নিয়মিত দৌড়োলে শরীরের হাড়ের ক্ষমতা বাড়ে।
শ্বসন ক্রিয়ার উন্নতি – দৌড়োলে শ্বাসপ্রক্রিয়ায় উন্নতি হয়, যা স্নায়ুর ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
সুগঠিত শরীর – বাড়তি মেদ ঝরে শরীর আকর্ষণীয় ও সুগঠিত হয়ে ওঠে।
মানসিক চাপ কমায় – মানসিক চাপ কমায়। ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হয়। সারাদিন আপনার মন ও শরীরকে তরতাজা রাখে।
পর্যাপ্ত ঘুম – দৌড়োনোর ফলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালিত হয়। ফলে রাতের ঘুম ভালো হয়।
নীরোগ শরীর – শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। স্ট্রোক, ডায়াবেটিসের মতো রোগ থেকে দূরে থাকতে দারুণ কার্যকর। অতএব নিয়মিত দৌড়োন, আপনার জীবনও দৌড়োবে।