প্রমিতা কাঞ্জিলাল হাই স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের টিচার। স্বামী কুণাল সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। এককথায় দুজনে শিক্ষিত, রুচিসম্পন্ন মানুষ। জীবনে স্বচ্ছলতার অভাব নেই। অভাব শুধু দুটি কচি হাতের আদরের। বিয়ের পাঁচ বছর বাদেও ওরা কেউ ‘মা-বাবা’ ডাক শুনতে পায়নি। আত্মীয় পরিজনেরা যে যেমন বলেছে, তেমনটি করেছে। ডাক্তার, বৈদ্য, ঠাকুর-পিরবাবা কিছুই বাদ যায়নি। নিজেরা তাবিজ মাদুলিতে বিশ্বাস না করলেও গুরুজনদের মুখ চেয়ে সব কিছু চুপচাপ মেনে নিতে হয়েছে। যদিও প্রমিতা-কুণাল দুজনে ফ্ল্যাটে থাকে তবুও কোনও এক সংস্কার কাজ করছে।
তাই প্রমিতা খুলতে পারেনি মাদুলি। ‘মা’ হওয়ার আকাঙক্ষায় মেয়েরা বোধহয় সবকিছুতেই বিশ্বাস রাখে। প্রমিতারা দু'জনে যা যা প্রয়োজন সব পরীক্ষা করিয়েছিল, সব কিছুর রিপোর্ট নর্মাল। তবু ওই অসম্পূর্ণতা। শেষে সবকিছু ভাগ্যের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে প্রমিতা-কুণাল।
এটা একটা ঘটনা মাত্র। অনেক দম্পতি আছে যাদের ডাক্তারি পরীক্ষায় তেমনভাবে কোনও শারীরিক ত্রুটিবিচ্যুতি ধরা পড়েনি, তবু তাদের কোল জুড়ে কোনও শিশু আসেনি। বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আজ আইভিএফ অর্থাৎ ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন-এর সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে সন্তানোৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে এটা একটা বড়ো আশীর্বাদ।
কে না চায় সন্তান সুখ
যে-কোনও মানুষের দুর্বলতম স্থান হচ্ছে নিজের সন্তান। বড়ো বড়ো রাজা, উজিরের যে অনুভূতি, সেই একই অনুভূতি সাধারণ মানুষ তথা ভিখারিরও নিজের সন্তানের জন্য। সন্তানের জন্য মা-বাবা করতে পারে না হেন কাজ নেই। যারা নিঃসন্তান দম্পতি তারা সন্তানকামনায় কী না করে। পুরাকালে অযোধ্যার রাজা দশরথ পুত্রলাভের জন্য যজ্ঞ করেন। এ কাহিনি প্রায় সকলেই জানে। আমাদের বাঙালিদের বারো মাসের ব্রতকথায়ও সন্তান কামনায় অনেক বার-ব্রতর প্রচলন আছে। ঈশ্বরী পাটনির বিখ্যাত উক্তি ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। যার সন্তান নেই সেও কামনা করে সন্তানের সাফল্য।
আজকের মেডিকেল সায়েন্স জানাচ্ছে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৬ জন মানুষ সন্তানহীনতার শিকার হয়। আরও জানা গেছে প্রতি ৮ জনের মধ্যে এক দম্পতি পরিবার দু’বছরের মধ্যে সন্তান ধারণ করতেই পারে না। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে ৭৫ শতাংশ দম্পতি বিবাহের একবছরের ভিতরে সন্তানের জন্ম দিচ্ছে।