নারীর ক্ষমতায়নের উপর ভিত্তি করে নিবেদন করা হল এক পৌরানিক কাহিনি—‘আহুতি’। লন্ডনের মেরটন আর্ট স্পেস-এ এই অনুষ্ঠানটি সম্প্রতি নিবেদন করল ‘কালাকার আর্টস,ইউকে’। লকডাউনের পর এই প্রথম এমন একটি লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে।
ইউকে-র এই ‘কালাকার আর্টস’, শাস্ত্রীয় সংগীত জগতে সুপরিচিত। লকডাউন পর্বে ‘কালাকার আর্টস’ অনলাইনে ফেসবুকের মাধ্যমে গুরু পণ্ডিত কাননের শতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য ভারতীয় শাস্ত্রীয় এবং আধা-শাস্ত্রীয় সংগীতের একটি বিশেষ সিরিজ ‘গুরু শিষ্য পরম্পরা’ আয়োজন করে নজর কেড়েছিল।
ওই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে, এবার তাই সীতা ও দ্রৌপদীর উপর ভিত্তি করে, নতুন উপস্থাপনা—- ‘আহুতি- সীতা ও দ্রৌপদীর সংগীত প্রতিধ্বনি’। নিবেদন করল ‘কালাকার আর্টস,ইউকে’। এখানে ছিল হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সংগীত এবং নিখুঁত অভিনয়। সেইসঙ্গে, মহিমান্বিত আবেদনকে আরও উপরে তুলতে, আবৃত্তির দ্বারা অনুষ্ঠানটিকে আবদ্ধ করা হয়েছিল বলেও জানানো হয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে।
‘কালাকার আর্টস,ইউকে’-র প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক শ্রীমতি চন্দ্রা চক্রবর্তী এই অনুষ্ঠানের পরিচালক এবং উদ্যোক্তা।
তিনি জানিয়েছেন, ‘শাস্ত্রীয় গায়িকা হিসাবে, পুরাণে আমার সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। যখন আমি কোনও বনে যাই, তখন পাখির গান কিংবা পশুর ডাক অথবা জলপ্রপাতের শব্দ শুনি। কিন্তু, প্রকৃতির ফিসফিস করা কথা, গভীর শব্দের সৌন্দর্য বহন করে। একইভাবে, যখনই আমি পৃথিবীর পৌরাণিক কাহিনী পড়ি, আমি সর্বদা পুনরুত্থান করতে চাই এবং কিছুটা হলেও পৌরাণিক চরিত্রগুলিকে পুনর্নির্মাণ করতে চাই। কারণ, তারা এখনও এত প্রাণবন্ত এবং তারা আধুনিক বিশ্বের অনেক গভীর সংকটকেও নির্দেশ করতে পারে।’
তিনি আরও জানান, ‘সংগীতের পাশাপাশি, নারীবাদ সম্পর্কে আমার ধারণা তুলে ধরে, সংগীতে একটি স্বতন্ত্র ভাষাবিকাশের চেষ্টা করছি। আমি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের তিন রাণীর জীবন নিয়ে এমন তিনটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছি, যারা এক রকম পিতৃতন্ত্রের শিকার হয়েছিল। সংগীতের এই পরিবেশনায়, আমি নিজেই বেশিরভাগ সংগীত রচনা করেছি কারণ ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীর অন্যতম শাশ্বত উৎস রামায়ণ ও মহাভারতের এই দুটি চরিত্র আমার হৃদয়ের খুব কাছাকাছি আছে।’
ইউকে নিবাসী বিখ্যাত কত্থক নৃত্য শিল্পী ইন্দ্রাণী দত্ত দ্রৌপদীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি পণ্ডিত বিরজু মহারাজের নেতৃত্বে কত্থকের ‘কালকা বিন্দা দিন’ ঘরানার নৃত্য পরিবেশন করেন।
ইন্দ্রাণী বলেন, ‘পৌরাণিক কাহিনী এবং গল্প বলার বিষয়ে আমার নৃত্য আঙ্গিক স্বাভাবিক ভাবেই ‘আহুতি’-র সঙ্গে মিলে যায়। অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়ের এই নতুন স্ক্রিপ্ট, প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রশ্ন উত্থাপন করায় কিন্তু ঐতিহ্যের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল’।
এই উপস্থাপনায় কণ্ঠদান এবং আবহসংগীত পরিবেশন করেন অমিথ দে। তবলা-সহযোগিতায় ছিলেন জুনায়েদ আলী।
উপস্থিত বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন লন্ডন নেহরু সেন্টারের পরিচালক মি. অমীশ ত্রিপাঠি, ইউকে-র সামা আর্টস-এর পরিচালক মি. জয়বিশ্ব দেব, মেরটন ক্লাবের মেয়র মাইকেল ব্রান্ট এবং মিউজিক রুম ওয়েম্বলির পরিচালক মি. রহমত সিমাব।