চাকুরিরত পুরুষদের মতোই, চাকুরিরতা মহিলাদের জন্যে আয়কর ছাড়ের সুযোগ-সুবিধা সমান। কিছুদিন আগে পর্যন্ত যেসব মহিলা ট্যাক্স দিতেন তাদের জন্যে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার টাকার একটা ছাড় দেওয়া হতো। এখন সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তাহলে কীভাবে করবেন আপনার Income Tax ও আর্থিক পরিকল্পনা? জেনে নিন৷
হেল্থ ইনশিয়োরেন্স
বেতনভুক্ত মহিলারা ট্যাক্স প্ল্যানিং করতে গেলে, দুটি সেকশন আছে যা জানা বিশেষ দরকার। একটি সেকশন ৮০সি এবং অপরটি সেকশন ৮০ডি। সেকশন ৮০ডি-তে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত Health Insurance প্রিমিয়ামের অর্থ জোগান দেওয়ার জন্য, তা ট্যাক্সেবল ইনকাম থেকে বাদ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
হেলথ্ ইনশিয়োরেন্স প্রত্যেক ব্যক্তিরই বেসিক প্রয়োজন। মহিলাদের ক্ষেত্রেও একই। অনেক সময় মেডিকেল এমারজেন্সির ক্ষেত্রে এমপ্লয়ার্সরাই নিজেদের কর্মীদের জন্যে এই ইনশিয়োরেন্স কাভারেজ দিয়ে থাকেন। প্রত্যেক বেতনভুক্ত মহিলারই উচিত হেলথ্ ইনশিয়োরেন্স করিয়ে নেওয়া। সঠিক পরিমাণ হল ৫ লক্ষ টাকা।
দেখা গেছে অনেকের কাছেই হেলথ্ ইনশিয়োরেন্স পলিসিজ রয়েছে কিন্তু অর্থরাশি অপর্যাপ্ত কারণ অর্থের পরিমাণ ১ লক্ষ কিংবা ২লক্ষ টাকা। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার খরচ এখন আকাশছোঁয়া সুতরাং ইনশিয়োরেন্সের জন্যে অর্থের পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকার কম হওয়া উচিত নয়। এমপ্লয়ার্স যদি এমপ্লয়িদের হেলথ্ ইনশিয়োরেন্সের সুবিধা প্রদান করে এবং তার পরিমাণ যদি ১ লক্ষ অথবা ২ লক্ষ টাকার শুধু হয়, তাহলে বেতনভুক্ত মহিলাদের উচিত অতিরিক্ত হেলথ্ ইনশিয়োরেন্স পলিসি করিয়ে নেওয়া। যাতে টোটাল কাভারেজ ৫ লক্ষ টাকার উপরে হয়। কোনও ব্যক্তির আশ্রিত কেউ যদি থাকে যেমন মা-বাবা, সন্তান যারা ব্যক্তির অর্থের উপর নির্ভর করে, তাহলে ফ্যামিলি ফ্লোটার প্ল্যান নেওয়া উচিত। এই প্ল্যানের মধ্যে নির্ভরশীল মা-বাবা এবং সন্তানের চিকিৎসার খরচ কভার করা হয়। নয়তো অপ্রত্যাশিত মেডিকেল খরচা, সারা জীবনের সঞ্চয় এক নিমেষে শেষ করে দিতে পারে। সুতরাং প্রয়োজন বেতনভুক্ত মহিলাদের হেলথ্ ইনশিয়োরেন্স পলিসির মধ্যে মা-বাবা এবং সন্তানদেরও কভার করে নেওয়া।
অন্য বিকল্প
অন্য গুরুত্বপূর্ণ সেকশনটি হল সেকশন ৮০সি। বেতনভুক্ত মহিলারা সেকশন সি দ্বারা অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ট্যাক্স সেভিং বিকল্পগুলিতে ইনভেস্ট করে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স বাঁচাতে পারেন।
এটি বাছার সময় মহিলাদের নিজেদের পরিস্থিতি দেখে, সেকশন সি-এর কোন বিকল্প বাছলে ক্লেম-এর অর্থরাশিতে সাশ্রয় হবে, সেটা বিবেচনা করতে পারেন। গত বাজেটে অর্থের পরিমাণ ১ লক্ষ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা বাড়ানো হয়েছে। সেকশন ৮০সি-এর আন্ডারে বিভিন্ন ট্যাক্স সেভিং বিকল্পগুলি এবং বেতনভুক্ত মহিলাদের জন্যে সেগুলির উপযোগিতা সম্পর্কে বিশদে জানাটা খুব প্রয়োজন। প্রভিডেন্ট ফান্ডের একটি বাস্কেট রয়েছে। সাধারণত বেশিরভাগ বেতনভুক্ত মহিলারাই প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) আওতাভুক্ত হয়ে থাকেন এবং এই ফান্ডে কিছু পরিমাণ অর্থ এমপ্লয়ারকেও জমা দিতে হয়।
এছাড়াও পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে অ্যাকাউন্ট করার জন্যে প্রত্যেক বেতনভুক্ত মহিলা-পুরুষ উভয়েরই একটু বেশি উৎসাহিত বোধ করা উচিত। এর কারণ উক্ত ব্যক্তিটি তখনকার মতো চাকুরিরত হলেও পরে তার চাকরি না-ও থাকতে পারে। অথবা ব্যক্তিটির রিটায়ারমেন্টের সময় কাছাকাছি এসে গেছে। নিশ্চিন্ত ভাবে অবসরযাপন করার জন্যে পিপিএফ খুব ভালো উপায়। যে-কোনও সময় টাকার প্রয়োজন পড়তেই পারে। সেই কারণে ইপিএফ এবং পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড সাধারণত বেতনভুক্ত ব্যক্তিদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
পিপিএফ-এ কত পরিমাণ অর্থ ইনভেস্ট করা উচিত
প্রত্যেক মহিলার জন্যে অর্থের পরিমাণ আলাদা হবে। অল্পবয়সি বেতনভুক্ত যুবতি অথবা ৪০ বছরের কম বয়সি মহিলাদের উচিত ইপিএফ এবং PPF মিলে ৫০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করা। উদাহরণ স্বরূপ যদি বেতন ৪০-৫০ হাজার টাকা হয়, তাহলে প্রতি বছর পিপিএফে ২৫ হাজার টাকা করে রাখা যাবে।
যদি ইপিএফ-এই শুধু ৪০-৫০হাজার টাকা থাকে তাহলে বেতনভুক্ত মহিলাদের, টাকা জমানোর ক্ষমতা অনুসারে বাৎসরিক পিপিএফে ১০-২০ হাজার টাকা রাখা যেতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে র বছরে পিপিএফে ইনভেস্ট করার সর্বাধিক সীমা বার্ষিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এটি ইনভেস্ট করার সবথেকে সুরক্ষিত বিকল্প, যেখানে ইনভেস্ট করলে না কেবল ট্যাক্স বাঁচানো যাবে, সঙ্গে ভালো সুদও পাওয়া যাবে। এছাড়াও ম্যাচিওরিটির পর যখন পুরো টাকাটা বার করা হবে তখনও সেই অর্থের উপর কোনও ট্যাক্স দিতে হবে না। এইসব কারণের জন্যেই বেতনভুক্ত মহিলাদের জন্যে পিপিএফ অত্যন্ত জরুরি।
মিউচুয়াল ফান্ড
বিকল্প হিসাবে অন্যকিছু ভাবা হলে ইকুইটি লিংক্ড সেভিংস স্কিম (ইএলএসএস) যেটা Mutual Funds লঞ্চ করেছে, সেটা সম্পর্কে ভাবা যেতে পারে। যেসব মহিলাদের লক্ষ্য লং টার্ম ইনভেস্টমেন্ট তাদের জন্যে এটি অত্যন্ত আবশ্যক। লং টার্ম-এর লক্ষ্য রিটায়ারমেন্ট, সন্তানের শিক্ষা অথবা সন্তানের বিয়ের জন্য সেভিংস।
টাকা জমাবার জন্যে, ইকুইটিতে টাকা বিনিয়োগ করা জরুরি। এই প্রয়োজন মেটাতে মোট ১.৫ লক্ষ টাকার মধ্যে থেকে বিভিন্ন ইএলএসএস স্কিমগুলিতে কম করে ৫০হাজার টাকা ইনভেস্ট করতে পারা যায়। এরই সঙ্গে একসঙ্গে অনেকটা টাকা ইনভেস্ট না করে সিস্টেমেটিক ইনভেস্ট প্ল্যানে যাওয়া উচিত।
তৃতীয় বিকল্প হিসেবে বেতনভুক্ত মহিলাদের আলাদা আলাদা রকমের Life Insurance Plans সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। যা কিনা ইউলিপ (ইউনিট লিংক ইনশিয়োরেন্স প্ল্যান), টার্ম প্ল্যান বা ট্র্যাডিশনাল প্ল্যান অথবা পেনশন প্ল্যানও হতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পেনশন ফেসিলিটি আছে কিনা, এমপ্লয়ার ইনশিয়োরেন্স কভার দিচ্ছে কিনা, এইসব জিনিসগুলোর খেয়াল রেখে মহিলাদের, নিজের পরিবার এবং নির্ভরশীলদের সুরক্ষা দেবার জন্যে সঠিক প্ল্যান বাছা উচিত। যদি বেতনভুক্ত মহিলা সম্পূর্ণ একাকী হন তাহলে লাইফ ইনশিয়োরেন্স করা অনাবশ্যক। এর প্রয়োজন খুব একটা হয় না।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আলোচিত ইনশিয়োরেন্স প্ল্যানগুলির প্রয়োজন পড়ে। সেইজন্যে প্রত্যেক বেতনভুক্ত মহিলারাই নিজের ভবিষ্যতের প্ল্যান অনুযায়ী উপরে আলোচিত যে-কোনও প্ল্যান বেছে তাতে টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন।
বেতনভুক্ত মহিলাদের মধ্যে আবার সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট বা কেন্দ্র সরকার অথবা স্টেট গভর্নমেন্ট অর্থাৎ রাজ্য সরকারের অধীনস্থ মহিলা কর্মচারীরাও রয়েছেন। তারা বেশিরভাগই পেনশন প্ল্যানস কভার করার ইচ্ছে রাখেন। এই সেকশনে পেনশন প্ল্যানিং-এর উপর বিশেষ খেয়াল রাখা হয়। এটি ছাড়াও সরকার সিজিএইচএস প্ল্যানের মাধ্যমে হেলথ্ ইনশিয়োরেন্সের বিস্তৃত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এছাড়াও ইপিএফ-ও করা যায়। যারা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কাজ করেন নিজেদের বেতন অনুযায়ী, বেশি পরিমাণ অর্থ জমাবার জন্যে ইকুইটি লিংকড সেভিং স্কিমে (ইএলএসএস) বেশি ইনভেস্ট করতে পারেন।
১.৫ লক্ষ টাকার মধ্যে যদি প্রভিডেন্ট ফান্ডে ৩০থেকে ৪০ হাজার টাকা চলে যায়, তাহলে বাকি টাকাটা লং টার্মের জন্যে ইএলএসএস-এও ইনভেস্ট করা যাবে। সুযোগ-সুবিধা দেখে টার্ম প্ল্যান করা উচিত। টোটাল অ্যাসিওর্ড সামযবিমার টাকা বার্ষিক বেতনের থেকে কম করে ৭ থেকে ১০ গুন হওয়া উচিত। যদি ১বছরে কারও বেতন ১০ লাখ হয়, তাহলে ইনশিয়োরেন্স কভারেজ ১ কোটি টাকা হওয়া বাঞ্ছনীয়। সেইসব বেতনভুক্ত মহিলাদের জন্যে এই যোজনা বেশি আবশ্যক যাদের উপরে পরিবারের পুরো দায়িত্ব রয়েছে। যিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন, একলা থাকেন অথবা অবিবাহিত, তাদের এই ইনশিয়োরেন্স কভারের প্রয়োজন না-ও পড়তে পারে।