অন্যকিছু বিষয়ের মতো, সন্দেহ প্রবণতারও Scepticism ভালো-মন্দ দুটি দিক আছে। এখন আপনাকে জানতে হবে, কোন ক্ষেত্রে কতটা সন্দেহ ইতিবাচক আর কোন ক্ষেত্রে খারাপ এবং ক্ষতিকারক।

ভালো দিক : অনেক সময় আমরা বলে থাকি, আমার সন্দেহ যে সঠিক ছিল, আজ তা প্রমাণিত হল। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে সন্দেহ ইতিবাচক রূপ নিল। কারণ, সন্দেহ সত্য উদঘাটন করতে সাহায্য করেছে। যেমন কেউ আপনার চাহিদা কিংবা দুর্বলতার কথা ভেবে প্রলোভিত করতে পারে। তাই, অপরিচিত, অল্প-পরিচিত কিংবা হঠাৎ হাত মেলানো কোনও শত্রুর পরামর্শে প্রথমেই বিশ্বাস করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। এমনকী, তাদের দেওয়া খাবার খাওয়ার আগে, কিছুটা সন্দেহ রেখে, ভালো ভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিত। প্রযোজনে কিছু খাবার অন্যের পাত্রে তুলে দিয়ে ওই ব্যক্তির খাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ভালো। বিশেষ করে সফর পথে কোনও অপরিচিত পুরুষ অথবা মহিলার দেওয়া খাবার কিংবা পানীয় না খাওয়া ভালো। এক্ষেত্রে সন্দেহ ইতিবাচক।

কিংবা ধরুন কেউ যদি টাকা বা অন্যকিছু ধার চায়, তাহলে সে সঠিক সময়ে ধার শোধ করতে পারবে কিনা এ বিষয়ে সন্দেহ রেখে তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তারপর সিদ্ধান্তে আসা ভালো।

আবার কেউ যদি অর্থের বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়া, স্কুল-কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে, তাহলে তার প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করা ভালো লক্ষণ।

অথবা ধরুন রাতে কেউ দরজায় নক্ করল। আপনি কারণ জিজ্ঞাসা করাতে সে জানাল, থানা থেকে আসছি, দরকার আছে, দরজা খুলুন, তাহলে তার বা তাদের প্রতি সন্দেহ রেখে থানায় ফোন করে খোঁজখবর নেওয়া ভালো। এক্ষেত্রেও সন্দেহ প্রকাশ করা ভালো লক্ষণ।

অন্যদিকে, কেউ আপনাকে ইমোশনালি ঠকাচ্ছে কিনা কিংবা ঠকাতে পারে কিনা, সেই বিষয়ে সন্দেহ রাখা কোনও অন্যায় নয়। যাকে আপনি দীর্ঘদিন ধরে চেনেন, জানেন, তার সম্পর্কে হঠাৎ যদি কেউ গুরুতর অভিযোগ জানায়, সে ক্ষেত্রে অভিযোগকারীকে তৎক্ষণাত বিশ্বাস না করে, কিছুটা সন্দেহ রাখা ভালো। অর্থাৎ, সন্দেহ যদি সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য হয়, ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য হয়, তাহলে তা ভালো দিক।

The tendency of doubt

ক্ষতিকারক দিক : Suspicion বা সন্দেহের যেমন কিছু ভালো দিক আছে, ঠিক তেমনই অত্যন্ত খারাপ দিকও আছে। অর্থাৎ, যিনি অবিবেচকের মতো সবাইকে, সব ক্ষেত্রে সন্দেহ প্রকাশ করেন কিংবা সন্দেহের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন তা অত্যন্ত ক্ষতিকারক। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে সন্দেহ প্রবণতা একটা রোগে রূপান্তিরিত হয় এবং চিকিৎসার প্রযোজন হয়। আর এই ক্ষতিকারক সন্দেহ প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায় দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে। সবচেয়ে মজার কথা, এই সন্দেহ প্রবণতার রোগে নারী-পুরুষ উভয়ে আক্রান্ত হতে পারেন।

সম্পর্কের ক্ষেত্রে সন্দেহ যতক্ষণ হালকা থাকে অর্থাৎ, ভালোবাসার মানুষটিকে আগলে রাখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, ততক্ষণ ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু সম্পর্ক যেখানে বিশ্বাসের সরু সুতোয় আটকে থাকে, সেখানে সঙ্গী অন্য কারওর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে নিতে পারে কিংবা অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এমন সন্দেহ অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। এক্ষেত্রে সন্দেহের বশে সঙ্গীর স্বাভাবিক চলাফেরা, অন্যের সঙ্গে কথা বলা কিংবা হইহুল্লোড় করা নিয়ন্ত্রণ করা কিংবা পুরোপুরি আটকে দেওয়া মানেই মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পায়।

অনেকে এমনও আছেন, অন্যের কোনও কথাই তাঁরা বিশ্বাস করতে পারেন না। অহেতুক অন্যের প্রতি অতিরিক্ত সন্দেহ Scepticism প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে যিনি এমনটি করেন, তাকে সবাই এড়িয়ে চলেন, এমনকী ঘৃণ্য মানুষ বলেও মনে করেন অনেকে। তাই, অতিরিক্ত সন্দেহ প্রবণ মানুষটি ধীরে ধীরে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হন এবং একমসয় তাকে একাকিত্ব গ্রাস করে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত সন্দেহ প্রবণতা সম্পর্ক নষ্ট করে, ঝগড়া-অশান্তি তৈরি করে, সংসার ভাঙে, এমনকী খুন কিংবা আত্মহত্যার ঘটনা পর্যন্ত ঘটিয়ে ফেলতে পারে।

অতএব, সন্দেহ প্রবণতা যদি রোগে পরিণত হয়, তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করুন। আর, চেষ্টা করুন আনন্দে থাকার। ভালো গান শুনুন, বই পড়ুন এবং শরীরচর্চা করে মন বড়ো করুন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...