আজকের শৈশব খুব স্বাভাবিক ভাবে আসে না৷ সেই নির্মল খুশির দিনগুলো, যা আমরা ছোটোবেলায় অতিক্রম করেছি, আজকের শিশুরা তা অনুভব করতে পারে না৷আধিকাংশ পরিবারে মেয়েকে আগলে রাখার দিকে যতটা নজর দেওয়া হয়, ততটাই অবহেলিত হয় পুত্রসন্তান৷অথচ ছেলে শিশুটিও হতে পারে যৌন হেনস্থার শিকার৷ আবার অনেক সময়ই ছেলেটি নিঃসঙ্গতার কারণে, কিংবা মনযোগ পাওয়ার চেষ্টায় অপরাধপ্রবণ মানসিকতায় জড়িয়ে পড়ে৷ কিংবা বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই তার ভিতর তৈরি হয় যৌনতার বোধ৷ অনেক সময় ভুল সঙ্গে পড়ে সে সময়ের আগেই শারীরিক সম্পর্ক করে ফেলে৷ দেখা যায় পরিবারের কেউ তার অসহায়তার সুযোগ নিয়ে, তার কঙ্গে খারাপ কোনও ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে৷ শিশুটি হয়ে উঠেছে তার সেক্স টয়৷

পরিবারে মা-বাবার নজর যেন পুত্রের উপরেও থাকে, যেমন তা থাকে মেয়েটির উপর৷পারিবারিক স্নেহ থেকে ছেলেটিও যেন কোনও অবস্থায় বঞ্চিত না হয়৷ দেখা গেছে যে-পরিবারে মা-বাবা ও সন্তান-সন্ততিরা একসঙ্গে শোওয়া-বসা করে, সেই পরিবারে সম্পর্কের বন্ধন অটুট থাকে৷ ছেলে মেয়ে বাড়ন্ত বয়সে পৌঁছে গেলেই তাকে নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাববেন না৷

সমাজ একটা অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে৷ আপনার শিশুকে তাই কখনও একা বোধ করতে দেবেন না৷ দেখুন এটি এমন একটি বিষয়, যে সবাই এ ব্যাপারে সচেতন নয়। অনেক সময়  বয়ঃসন্ধির সন্তান, না জেনেই এ ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে৷আবার অনেক বাচ্চার সাথে দুর্ভাগ্যবশত ঘটে অবাঞ্ছিত কোনও ঘটনা৷সব মা-বাবা এ ব্যাপারে কারও সাথে কথা বলেন না। মনে করেন বিষয়টি সবাই জানলে বাচ্চার ক্ষতি হবে।তারা সন্তানকে শাস্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান খোঁজেন৷ কিন্তু তারা ভুল করেন, ফলে এ ঘটনাটি যে বাচ্চার সারা জীবনের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে তা তারা বুঝতে পারেন না। আপনি একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনার বাচ্চাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন।

Kid care

মানুষ তাকেই ঘৃণা করে যে অপরাধী। আপনার বাচ্চা অপরাধী নয়, সে ঘটনার শিকার মাত্র। এর জন্য শিশুটি কোনক্রমেই দায়ী নয়। অপরাধী সে-ই যে আপনার শিশুকে নির্যাতন করেছে। ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিতে পারি–

  • তাকে নিয়মিত কাউন্সেলিং-এর জন্য একজন কাউন্সেলারের কাছে নিতে পারি
  • শারীরিক সমস্যাটি সমাধানের জন্য চিকিৎসকের কাছে নিতে পারি।
  • বকাবকি না করে তার মনের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য তার কোনও পছন্দের জায়গায় নিয়ে যেতে পারি
  • তার সাথে এমন কোন আচরণ না করা বা কথা না বলা যাতে সে মনে আঘাত পায়
  • বাচ্চাটির কিছু হয়নি, কথায় ও ব্যবহারে তা প্রকাশ করা দরকার
  • পারিবারিক কাজে তার অংশগ্রহণের পরিবেশ তৈরি করুন এবং তাকে সবসময় কাজে উৎসাহিত করুন
  • ওর সাথে খেলাধূলা করা, গল্পের বই পড়তে দেওয়া দরকার, যা ও পড়তে চায়

বাচ্চার সাথে আগের চেয়ে আরও বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বেশি করে সঙ্গ দিন।বাবা-মা ও সন্তান কিছু দিন একসঙ্গে ঘুমোন৷ঘটনার জন্য কখনওই ওকে দোষী বা দায়ী করতে যাবেন না বরং তাকে কোন সৃজণশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন৷তার ইচ্ছার প্রাধান্য দেবেন। জোর করে কোন কাজ চাপিয়ে দেবেন না।

ওর কোনও ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকলে যার সঙ্গে সে মন খুলে সব কথা বলে, তাকে বেশি করে শিশুটির কাছে আনতে হবে।যেসব বন্ধু ওর সমালোচনা করে, হাসাহাসি করে তাদের কাছ থেকে শিশুটিকে দূরে রাখতে হবে।
প্রয়োজনে এমন কোনও বন্ধুর সাহায্য নিতে পারেন যে কিনা শিশুটির সমস্যাটি বুঝতে পারছে এবং সহমর্মিতা অনুভব করছে৷ আসল কথা হল আপনার কাজ হবে  সন্তানকে সারাক্ষণ সঙ্গ দেওয়া, যাতে করে সে নিঃসঙ্গ বোধ না করে এবং বুঝতে পারে এ সময় তার পাশে কেউ আছে। তাহলেই সে আর-পাঁচটা শিশুর মতে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারবে৷

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...