পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে রোবটিক সার্জারি। এই Robotic Surgery কলকাতায়ও চালু হয়েছে। এই বিষয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে কলকাতার এক বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র।এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, গাইনিকোলজিক্যাল ক্যান্সার-এর চিকিৎসারও মাধ্যম এখন  রোবটিক সার্জারি। এই বিষয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে রোবটিক সার্জারির তথ্যগত এবং ব্যবহারিক দিকটি তুলে ধরতে উপস্থিত ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ডা. জয়ন্ত গুপ্ত, ডা. অর্ণব বসাক এবং ডা. ভাস্কর পাল ছাড়াও, Robotic Surgery সংক্রান্ত সমস্ত কৌতূহল মেটালেন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গাইনিকোলজিক অঙ্কলজি গ্রুপ-এর অধ্যাপক এবং রিসার্চ ডিরেক্টর ডা. কৃষ্ণাংশু এস তিওয়ারি।

কোন সার্জিক্যাল সিস্টেম ব্যবহৃৎ হচ্ছে রোবটিক সার্জারি-তে?

‘দ্য ভিঞ্চি সার্জিক্যাল সিস্টেম’ ব্যবহৃৎ হচ্ছে সারা পৃথিবীতে।

সার্জারিতে বিশ্বব্যাপী কত সংখ্যক রোবট ব্যবহার হচ্ছে বর্তমানে?

সারা পৃথিবীতে বর্তমানে মোট ১৫০০ হাসপাতালে প্রায় ১৯০০ সংখ্যক ‘দ্য ভিঞ্চি সার্জিক্যাল সিস্টেম’-এর ব্যবহার শুরু হয়েছে।

সার্জারিতে ব্যবহৃৎ এই রোবট-টির বর্তমান ক্রয়মূল্য কত?

টু মিলিয়ন ইউএস ডলার। অর্থাৎ, ভারতীয় মূল্যে প্রায় দশ কোটি টাকা।

সার্জিক্যাল এই রোবট-টির গঠনগত বৈশিষ্ট্য কি?

এটি চার বাহুবিশিষ্ট। অর্থাৎ, দুজন সার্জেন-এর কাজ একসঙ্গে করতে পারে একাই। এর আছে একটি অপারেটিং মনিটর এবং ভিউ স্ক্রিন।

এই রোবটিক সার্জারির বিশেষত্ব কি? অর্থাৎ, ট্র্যাডিশনাল অথবা ল্যাপরোস্কোপিক সার্জারি না করে কেন রোগীরা রোবটিক সার্জারি করাবেন?

দেখুন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু বদলায়। মানুষ সবসময় আরও ভালো কিছু, আরও সুবিধেজনক কিছু চান। যেমন, সিংহভাগ মানুষ এখন আর সাদা-কালো টেলিভিশন দেখেন না, রঙিন টিভি দেখেন। আর এই রঙিন টিভির ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাট টিভি, এলসিডি এবং সবচেয়ে লেটেস্ট ভার্সন এলইডি। অর্থাৎ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সবচেয়ে উন্নত এবং ভালো গুণমানের জিনিসই সবার প্রথম পছন্দ। রোবটিক সার্জারিও ঠিক তাই। এই সার্জারির অনেকগুলি বিশেষত্ব কিংবা বলা যায় অনেকগুলি পজিটিভ দিক আছে। প্রথমত, শুধুমাত্র কম্পিউটার ‘কি বোর্ড’-এর মাধ্যমে একজন চিকিৎসক পুরো সার্জারি করে নিতে পারেন খুব সহজে এবং সুষ্ঠুভাবে। দ্বিতীয়ত, ওপেন এবং ল্যাপরোস্কোপিক এই দু’রকম সার্জারিতেই রোবটিক সার্জারি খুব এফেকটিভ। তৃতীয়ত, যে-কোনও জটিল অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও এই সার্জিক্যাল রোবট খুবই কার্যকরী। তাছাড়া, রোবটিক সার্জারি পেনলেস, প্রায় ব্লাডলেস, সেফ, অ্যাকুরেট এবং এই শল্যচিকিৎসার পর খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন রোগী।

এখনও পর্যন্ত কী কী ধরনের সার্জারি করেছেন এই রোবট-এর মাধ্যমে?

গাইনিকোলজি, কার্ডিওথোরোসিস, ইউরোলজি এবং জেনারেল সার্জারির ক্ষেত্রেও আমরা রোবট ব্যবহার করেছি এবং সফল হয়েছি। তবে বর্তমানে আমরা গাইনি-অঙ্কলজি-র ক্ষেত্রে রোবটিক সার্জারিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।

গাইনি-অঙ্কলজির ক্ষেত্রে রোবটিক সার্জারিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কোনও বিশেষ কারণ আছে কি?

‘বিশ্ব ক্যান্সার দিবস’ উপলক্ষ্যেই এমন উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। অবশ্য এটা সাধারণ কারণ। কিন্তু গাইনি-অঙ্কলজির ক্ষেত্রে রোবটিক সার্জারিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার বিশেষ কারণ হল, অস্ত্রোপচারের পর কোনওভাবে সংক্রমণ ছড়ায় না এই সার্জারি-তে। অর্থাৎ, এই ধরনের সার্জারিতে পাওয়া যায় বেটার ক্লিনিক্যাল রেজাল্ট।

আজ পর্যন্ত মোট কতগুলি অস্ত্রোপচার করেছেন রোবট-এর মাধ্যমে?

সব বিভাগ মিলে মোট চল্লিশটি অস্ত্রোপচার করেছি রোবট-এর মাধ্যমে।

রোবটিক সার্জারি-তে কত সময় লাগে?

খুব জটিল অস্ত্রোপচার না হলে, চল্লিশ মিনিটের মধ্যে সার্জারি কমপ্লিট করা যায়। তবে রোবটিক সার্জারিতে, অস্ত্রোপচার শুরু করার আগে প্রস্তুতি পর্বে প্রায় তিরিশ মিনিট ব্যয় হয়।

গাইনি-অঙ্কলজিক্যাল রোবটিক সার্জারির ক্ষেত্রে কত টাকা খরচ পড়বে এবং সাধারণ সার্জারির তুলনায় সেই খরচ কতটা বেশি?

গাইনি-অঙ্কলজিক্যাল রোবটিক সার্জারির জন্য বর্তমানে খরচ পড়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। যা সাধারণ সার্জারি-র তুলনায় প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা বেশি।

রোবটিক সার্জারির খরচ কি কমবে ভবিষ্যতে?

খরচ কমার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। রোবটের সাহায্যে অস্ত্রোপচার বাড়লে, খুব স্বাভাবিকভাবে খরচ কমবে। কারণ, সার্জিক্যাল রোবট কেনার খরচ এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ তখন বেশিসংখ্যক রোগীর মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাবে।

রোবটিক সার্জারি-তে কতটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন রোগীরা?

রোবটিক সার্জারির পজিটিভ দিকগুলোর প্রচার চলছে বর্তমানে। তবে এরমধ্যে রোগীদের অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ফোন করছেন এবং সবকিছু জেনে রোবটিক সার্জারিতে আগ্রহী হয়েছেন। আসলে, এই সার্জারিতে খরচ বেশি হলেও, যেহেতু খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠছেন রোগী, তাই তাঁকে হাসপাতালে বেশি দিন থাকতে হচ্ছে না। অতএব, মোটের উপর বিচার করলে সাধারণ সার্জারি এবং রোবটিক সার্জারির মধ্যে খরচের তেমন কোনও তারতম্য নেই।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...