যদিও একদিনেই সব মন্দির দেখা হয়নি, তবু অন্যদিনে দেখা ‘চতুর্দশ দেবতা মন্দির'-এর কথা এখানেই বলে নিচ্ছি। জনশ্রুতি— মহাভারতের যুগেও চতুর্দশ দেবতার পুজোর প্রচলন ছিল। পুজো করতেন ত্রিপুরার রাজা ত্রিলোচন। পরবর্তীকালেও ত্রিপুরার রাজপরিবারের দ্বারা পূজিত হয়ে আসছেন চতুর্দশ দেবতাগণ।
১৭৭০ খ্রিস্টাব্দের আগে এই চতুর্দশ দেবতার অবস্থান ছিল পুরাতন রাজধানী উদয়পুরে। সামশের গাজীর কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মহারাজ কৃষ্ণকিশোর মাণিক্য উদয়পুর থেকে পুরাতন আগরতলার খয়েরপুরে রাজধানী স্থানান্তরিত করার সময় চতুর্দশ দেবতার বিগ্রহ সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং মন্দির স্থাপন করেন। পুনরায় ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে রাজধানী বর্তমান আগরতলায় স্থানান্তরিত হলেও চতুর্দশ দেবতার মন্দির খয়েরপুরেই রয়ে যায়।
মন্দিরের আকার স্বতন্ত্র। বৃত্তাকার চালার মন্দিরটি দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন চাষিদের মাথায় পরার যে টোকা, অনেকটা সেইরকম। বৌদ্ধস্তূপের সাদৃশ্যও আছে। মন্দির সংলগ্ন এক বিশাল পুষ্করিণীও আছে। মন্দির দর্শন হলেও বিগ্রহ দর্শন হল না। পুজো- সামগ্রীর দোকান থেকে কেনা ছবি অনুযায়ী দেবতাগণ হলেন— শংকর, শংকরী, বিষ্ণু, লক্ষ্মী, বাগদেবী, কার্তিক, গণপতি, ব্রহ্মা, পৃথিবী, সমুদ্র ভাগীরথী, অগ্নি, প্রদ্যুন্ম এবং হিমালয় পর্বত।
জুলাই মাসের শুক্লা সপ্তমী তিথিতে এই মন্দিরে ত্রিপুরার জাতীয় উৎসব ‘খটি পুজো' জাঁকজমক সহকারে অনুষ্ঠিত হয়। কবিগুরুর ‘রাজর্ষি' উপন্যাসে উল্লেখ আছে এই চতুর্দশ দেবতাগণের কথা।
পার্ক উদ্যান লেক
ত্রিপুরা ভ্রমণে বেশ কিছু পার্ক, উদ্যান, ইকো-পার্ক, ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি ঘুরেছি। পার্কগুলি আঞ্চলিক প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— বড়োমুড়া ইকো-পার্ক, থুমলওণ্ড পার্ক, তৃষ্ণা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির বাইসন পার্ক, বাটারফ্লাই পার্ক, তেপানিয়া ইকো-পার্ক এবং অবশ্যই দর্শনীয়- ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান।
এই পার্কগুলিতে দেখা যাবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নানান প্রজাতির বাঁশ গাছ, গাছপালা, অর্কিড, ফুল। কোথাও বা লেকের জলে নৌকাবিহারের আয়োজন। লগ-হাট...। ফুল পাখিদের সমাগমে সুসজ্জিত পার্কগুলি রঙিন সজীব। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের সামনে হাজির এইসব পার্ক উদ্যান।
আগরতলা থেকে প্রায় একশো পনেরো কিলোমিটার দূরে রাইমা এবং সাইমা নদীর বহতা জলধারায় সমৃদ্ধ ‘ডম্বুর লেক’। লেকটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ ! জলবিহারের ব্যবস্থা আছে। বিশাল লেকের মাঝে বেশ কিছু দ্বীপ আছে। তার মধ্যে সুসজ্জিত ‘নারকেল কুঞ্জ’ দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। কাছেই গোমতীর উৎসস্থল। পৌষ সংক্রান্তির দিন এখানে ‘তীর্থমুখ’ উৎসব পালিত হয়। শীতকালে প্রচুর পরিযায়ী পাখিদের সমাগম হয়।