সৌন্দর্যের প্রথম কথাই হল সুস্থ, সুন্দর, উজ্জ্বল, টানটান ত্বক। অথচ রোদ-জল-দূষণের দৌরাত্ম্যে এই ত্বকই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন ঋতুতে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করতেই হয় ফেসপ্যাক। কিন্তু সব ত্বকে একইরকম ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আগে জেনে নিন আপনার Dry skin, Oily skin, Normal skin  নাকি  T-zone skin.  ত্বক পরিচর্যার আগে জানা দরকার ত্বকের প্রকৃতি। খুব সহজ, ঘরোয়া পদ্ধতি থেকেই জানা সম্ভব, আপনার ত্বক কী ধরনের। তবে পরীক্ষাগুলি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরেই করতে হবে।

সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি

ঘুম থেকে উঠে ম্যাগনিফাইং গ্লাস হাতে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখের ত্বক ভালো করে লক্ষ্য করুন। দেখুন রোমকূপগুলির মুখ বন্ধ কিনা। যদি বন্ধ থাকে এবং তার উপর তৈলাক্ত পদার্থ বেরিয়ে আসতে দেখেন, বুঝতে হবে আপনার ত্বকের প্রকৃতি তৈলাক্ত। ব্ল্যাক হেডসও তৈলাক্ত ত্বকের লক্ষণ। যদি ত্বকে সরু সুতোর মতো রেখা দেখা যায়, ত্বকে সামান্য কুঞ্চন এবং রোমকূপের মুখগুলি খোলা থাকে, তা হলে বুঝবেন আপনার ত্বক শুষ্ক প্রকৃতির।

ব্লটিং পেপার পদ্ধতি

ত্বকের প্রকৃতি বোঝার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল এটি। ঘুম থেকে ওঠার পর, মুখে জল না দিয়ে, এক টুকরো ব্লটিং পেপার নিয়ে দুহাত দিয়ে মুখে চেপে ধরুন। এবার ব্লটিং পেপার মুখ থেকে সরিয়ে লক্ষ্য করুন পেপারে কোনও তৈলাক্ত ছাপ পড়েছে কিনা। ছাপ পড়লে বুঝতে হবে, অবশ্যই আপনার ত্বক তৈলাক্ত। যদি ছাপ না পড়ে, তাহলে জানবেন আপনার ত্বক শুষ্ক প্রকৃতির।

রুক্ষ ত্বক পরিষ্কারের ক্ষেত্রে

দিনে এক অথবা দুবার চর্বিযুক্ত সাবান লাগাতে পারেন। ত্বক যদি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও রুক্ষ হয়, তাহলে গ্লিসারিন সাবানই ব্যবহার করা উচিত।

তৈলাক্ত ত্বক পরিষ্কারের জন্য

দিনে দুবারের বেশি সাবান ব্যবহার করতে পারেন। তবে সাবান আম্লিক হলে ভালো হয়।

সাধারণ ত্বক পরিষ্কারের জন্য

সাধারণ ত্বকের ক্লিনজিংয়ের জন্য, এক চা-চামচ পাতিলেবুর রসের সঙ্গে ইয়োগার্ট মিশিয়ে মাস্ক-এর মতো ব্যবহার করতে পারেন। তবে এই মিশ্রণ প্রতিবার নতুন করে তৈরি করতে হবে।

শুষ্ক ত্বকের ফেসপ্যাক

১)   শুষ্ক ত্বকে ঔজ্জ্বল্য প্রায় থাকেই না। তাই ফেসপ্যাক ব্যবহার করতেই হয়। এক চা-চামচ মুলতানি মাটি, এক চা-চামচ সাদা চন্দনের গুঁড়ো এবং অর্ধেক চা-চামচ মধু, একসঙ্গে মিশিয়ে মুখ-গলা এবং দুটি হাতে ভালো করে মেখে, ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক উজ্জ্বল হবে।

২)   একটি ডিমের কুসুম, অর্ধেক চামচ মধু ও অর্ধেক চামচ যবের গুঁড়ো একসঙ্গে ভালো করে ফেটিয়ে নিয়ে মুখে ও শরীরের যে-সমস্ত স্থানের ত্বক উন্মুক্ত থাকে, যেমন গলা, হাত-পায়ের পাতা প্রভৃতিতে মেখে নিন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন।

৩)   একটা মাঝারি সাইজের আলু বেটে নিন। এর সঙ্গে অর্ধেক চামচ টক দই মিশিয়ে মেখে নিন। কিছুক্ষণ বাদে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের উপর রোদে পোড়া কালো ছোপ দূর হয়।

তৈলাক্ত ত্বকের ফেসপ্যাক

১)   একটি কমলালেবু, একটি পাতিলেবু ও কয়েকটা আঙুর, রস করে একটি পাত্রে রাখুন। এবার ওই মিশ্রণে তিন গ্লাস বিশুদ্ধ জল মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হলে সারা গায়ে মেখে, বেশ কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন।

২)   এক ইঞ্চি মাখা ময়দার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা জল মিশিয়ে লেই তৈরি করুন। এবার ওই লেই মুখ-হাত-গলায় মেখে, ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি খুব ভালো ক্লিনজিংয়ের কাজ করে। রোমকূপ পরিষ্কার করে, অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ রোধ করে।

৩)   এক চামচ শসার রস, একটি ডিমের সাদা অংশ ও এক চামচ গুঁড়ো দুধ, একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার ওই পেস্ট মেখে ২৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

৪)   ওটমিলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়েও মাখতে পারেন। মাখার ১০ মিনিট পর ভালো করে ধুয়ে নিন।

৫)   দুই চামচ টক দই, দুই চামচ বেসন ও এক চামচ গাজরের রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে, ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

সাধারণ ত্বকের ফেসপ্যাক

১)   এক চামচ ক্যামমাইল পাউডার, দুই চামচ বাটার মিল্ক, একসঙ্গে মিশিয়ে মুখ-গলা-হাতে মেখে ১০ মিনিট রেখে ঈষদুষ্ণ জলে ধুয়ে ফেলুন। এবার শসা কুরে নিয়ে তা থেকে রস বের করে নিন। ওই রসে তুলো ভিজিয়ে মুখে লাগান।

২)   সাদা দই বা টক ক্রিম কিছুটা নিয়ে, চোখের চারপাশ বাদ দিয়ে, মুখ ও গলায় মেখে ১০-১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিন। ঠান্ডা দই শুধু ময়েশ্চারাইজারের কাজই করে না, ক্লান্তিও দূর করে।

৩)   কাঁচা পেঁপে কুরে রস বের করে তুলোর সাহায্যে মাখতে পারেন। তবে মিনিট দশেক রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৪)   একটি ডিমের সাদা অংশ, এক চামচ কাঁচা দুধ ও এক চিমটে কর্পূর ভালো করে ফেটিয়ে নিয়ে মাস্ক হিসাবে ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন।

৫)   অর্ধেক চামচ মধু ও একটি গাজরের রস একসঙ্গে মিশিয়ে মাখতে পারেন।

রোদে পোড়া কালো দাগ তোলার ফেসপ্যাক

১)   পাকা পেঁপে ভালো করে চটকে নিয়ে মুখে, গলায় মেখে নিন। কিছুক্ষণ বাদে ধুয়ে ফেলুন।

২)   অর্ধেক চামচ পাতিলেবুর রসের সঙ্গে, ডিমের হলুদ অংশটি ফেটিয়ে, ত্বকের যে-

অংশগুলি রোদে কালো হয়ে গেছে, সেই সমস্ত জায়গায় লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্ক ত্বককে উজ্জ্বল করে।

৩)   দুই চামচ টক দই, এক চামচ থেঁতো করা আলু, অর্ধেক চামচ পাতিলেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মাখুন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

৪)   দুই চামচ মকাইয়ের আটা, এক চামচ সাদা চন্দনের গুঁড়ো, একটি পাতিলেবুর রস মিশিয়ে মাস্ক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।

অন্যান্য ফেসমাস্ক

গাজরের মাস্ক – একটি গাজরের রস ও অর্ধেক চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে লাগান ও ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্ক ত্বকে ভিটামিন ‘এ’-র অভাব পূরণ করে।

স্ট্রবেরি মাস্ক তিনটি বড়ো স্ট্রবেরি কেটে নিয়ে মুখের ত্বকে ঘষতে থাকুন। কিছুক্ষণ পর স্ট্রবেরির রস ত্বকে বসে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘এ’র জোগান দেয়।

আলু মাস্ক – অর্ধেক চামচ টক দইয়ের সঙ্গে একটি বড়ো আলুবাটা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখ-গলা ও হাতে লাগিয়ে রেখে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

ওট মাস্ক – অর্ধেক চামচ ওট, এক চামচ দুধে ভিজিয়ে দিন। এবার ভেজা ওট মিহি করে বেটে নিয়ে লাগান। এই মাস্ক ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে।

টম্যাটো মাস্ক একটি টম্যাটোর সঙ্গে অর্ধেক পাতিলেবুর রস মিশিয়ে মাস্ক হিসাবে মাখুন। মিনিট ১৫ পর অল্প গরম জলে ধুয়ে ফেলুন।

হাঙ্গেরিয়ান মাস্ক – দুই চামচ ভাত, এক চামচ বাদামবাটা, একটি ডিমের কুসুম ও সাত ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। ওই পেস্ট ত্বকে মেখে শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

লেবু-ডিমের মাস্ক অর্ধেক চামচ পাতিলেবুর রস ও একটি ডিমের কুসুম একসঙ্গে ফেটিয়ে নিয়ে মেখে নিন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...