ইরফান খান বলতেন, ‘এখানেই শিল্পের মজা। আপনার ছোট্ট একটা কাজ মানুষের মনে এমন আঁক কষে যে, আপনাকে সে মনে রাখে যুগ যুগ ধরে।‘ Irfan Khan-এর পুত্র বাবিল খান এবার বাবার সেই অদর্শ নিয়েই পদার্পণ করতে চলেছেন অভিনয়ের দুনিয়ায় ৷ বাবার মতোই Babil Khan খুব সাধারণের মধ্য দিয়ে অনন্যসাধারণ হয়ে উঠতে চান৷
যশ রাজ ফিল্মসের হাত ধরেই নতুন জীবনে পা দেবেন বাবিল, এমনটাই শোনা যাচ্ছে। বাবা ইরফানের মৃত্যুর পরেই তিনি জানিয়েছিলেন এই রাস্তার শুরুতে ইরফান একাই পথিক ছিলেন, কিন্তু শেষটা তিনি করবেন ছেলের সঙ্গেই । বাবার দেখানো পথেই হাঁটবেন তিনি। ‘দ্য রেলওয়েম্যান’ সিরিজ দিয়েই, তার অভিষেক হতে যাচ্ছে, যা তাঁর মা সুতপা শিকদারকে এক আবেগঘন মুহুর্তের শরিক করেছে ৷ প্রসঙ্গত, The Railwayman সিরিজে আর মাধবন, কে কে মেনন, দিব্যেন্দু অভিনয় করছেন। পরিচালনায় শিব রাওয়েল৷ সামনের বছর ২ ডিসেম্বর থেকে দেখা যাবে সিরিজটি।
Sutapa Sikdar তাই সিঙ্গল মাদারদের উদ্দেশে এক মন ছুঁয়ে যাওয়া বার্তা দিয়েছেন সোশাল মিডিয়ায়৷ যে-বার্তায় তিনি বলেছেন সিংগল পেরেন্টিং খুবই কঠিন, বিশেষ করে সেক্ষেত্রে যখন সন্তান একুশ বছর ধরে বাবা এবং মা উভয়ের সাহচর্য পেয়ে এসেছে৷ কিন্তু একলা মায়ের পক্ষে তার সেই একাকীত্ব সামলানো সহজ না হলেও, অন্তত অসম্ভব নয় ৷
ছেলে ফিল্মি জগতে পা রাখতে চলেছেন। ঠিক এই মুহূর্তটাতে দাঁড়িয়ে সুতপা বলেন, তিরিশ বছর একজন কিংবদন্তির সঙ্গে জীবন কাটিয়েছেন – তাই অভিনয় সম্পর্কে তাঁর প্রত্যাশা অনেক উঁচু।তাঁর নির্ধারিত সবক’টি মানদণ্ড স্পর্শ না করলে, তিনি ভালো অভিনেতার স্বীকৃতি দিতে নারাজ ৷ ছেলের কাছেও তাই তার প্রত্যাশা অসীম ৷ শুধু এটুকুই তাকে মনে করিয়ে দেওয়া, বাবার সমকক্ষ একদিন তাকে হতেই হবে।
ইরফান অনুরাগীদের কাছেও এ এক আবেগজর্জর মুহূর্ত ৷ বাবিলের বাবা ইরফানের পুরো নাম ছিল সাহেবজাদে ইরফান আলি খান। পরে চলচ্চিত্র শুরু করেন ইরফান খান নামে। অনেকেই তাঁকে সেরা খান বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু বংশ নয় বরং নিজ পরিচয়ে পরিচিত হতেই ভালো লাগত তাঁর।বলিউডে অজস্র ‘খান’ (আমির, শাহরুখ, সালমান, সাইফ) -দের ভিড়ে, আরেকজন ‘খান’ হিসেবে স্টার হওয়ার ইঁদুর দৌড়কে প্রত্যাখ্যানই করেছিলেন ইরফান।
টাকার মাপকাঠিতেও মাপতে চাননি কোনও চলচ্চিত্র আর অভিনেতাকে। এ ধরনের মাপকাঠিকে তিনি বাজে প্রবণতা মনে করতেন। অর্থ আর জনপ্রিয়তাকে তিনি বলতেন অভিনয়ের ‘বাইপ্রোডাক্ট’।বলিউডের মূল স্রোত থেকে গা বাঁচিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে এমন সম্মান এবং জনপ্রিয়তা যে অর্জন করা যায়, তা ইরফানই দেখিয়েছিলেন।
নিয়ম ভেঙে নিজের মতো করে নিয়ম গড়া ইরফানের প্রিয় কাজ ছিল।একটি পুরোনো সাক্ষাৎকারে বলা ইরফানের কথা অনুযায়ী, সুতপাই নাকি তাঁর সবথেকে বড়ো সমালোচক ছিলেন। তাই একথা মনে করিয়ে সুতপা বলেন, বাবিলকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করতে গেলে এখনঅনেক চড়াই উৎরাই পেরোতে হবে। তাতে সময় হয়তো অনেকটাই লাগবে, কিন্তু হার মানলে চলবে না। সুতপার মতে ছেলের এই পথ চলার সবে শুরু, এখনও অনেক পরিশ্রম বাকি আছে ৷ একই সঙ্গে সুতপা আশ্বাস দিয়েছেন, ছেলের পাশে সবসময় থাকবেন।
শিল্পির কর্মে তাঁর ব্যক্তি জীবনের ছাপ রয়ে যায়। শিল্প এমন এক পরিসর, যেখানে নিজেকে আড়াল করার উপায় থাকে না। তাই বাবার আদর্শকে কতটা বাস্তবায়িত করতে পারেন বাবিল, সেটা দেখার অপেক্ষাতেই থাকবেন দর্শকরা৷