ব্রিটেনে বর্তমানে ওমিক্রন ও ডেল্টা সংক্রমণ পাল্লা দিয়ে ছড়াচ্ছে। ওমিক্রন সংক্রমণ নিয়ে চিন্তায় গোটা বিশ্ব। আমেরিকা, ইউরোপ সহ একাধিক দেশে ডেল্টাকে পিছনে ফেলে ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমেরিকায় অধিকাংশ করোনা রোগী এখন ওমিক্রনেই সংক্রমিত হচ্ছেন। করোনা নিয়ে একেই মানুষের মন থেকে ভয় মুছে যায়নি আর এরই মাঝে নতুন আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে মানুষকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ‘মারাত্মক’ ডেল্টা স্ট্রেনের সঙ্গে মিলে সুপার স্ট্রেন তৈরি করতে পারে ‘অতি সংক্রামক’ ওমিক্রন। ওমিক্রনের সংক্রামক শক্তি দেখে আশঙ্কিত বিজ্ঞানীরা। টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা মডার্নার প্রধান মেডিকেল অফিসার ডঃ পল বার্টন সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সংসদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে এই সম্ভবনার কথা জানান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেদ্রস আধানম গেব্রেয়াসিস জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে ওমিক্রন Pandemic ভ্যারিয়েনট-এ পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি। তবে এমন প্রমানও পাওয়া গেছে যাতে দেখা গেছে ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনে আক্রান্তরা অনেক কম অসুস্থ হয়েছেন। কিন্তু দ্রুতগতিতে এই সংক্রমণ ছড়ানোয় বেশি মানুষ অসুস্থ হবেন, ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে। ক্রমাগত জিন-বিন্যাস বদলাবার ফলে সংক্রমণ ক্ষমতাও বেড়েছে করোনা ভাইরাসের এই নতুন প্রজাতির। এই পরিস্থিতিতে বাড়ির বড়োদের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের সুরক্ষার উপর নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। স্বল্প শরীর খারাপ হলে অথবা সামান্য জ্বর হলেও তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটাও যেমন জরুরি তেমনি বাড়িতে কী কী করনীয় সেটাও জেনে রাখাটা খুব দরকার।
জ্বর এলে কী করণীয়
- জ্বর আসছে মনে হলে শুরুতেই থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর পরিমাপ করে কাগজে লিখে রাখতে হবে
- জ্বর এলে বাচ্চাকে খুব বেশি কাপড়চোপড় পরিয়ে রাখা যাবে না। বাচ্চাকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে
- বাচ্চাকে ভেজা কাপড় দিয়ে বারবার শরীর মুছে দিতে হবে। বাচ্চার কপালে জলপট্টি দিয়ে রাখার দরকার নেই। এতে বাচ্চার ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা বেড়ে যায়
- বাচ্চাকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়াতে হবে
- জ্বরের সময় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং প্রোটিনজাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে
- জ্বরের জন্য প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ বাচ্চার বয়স অনুযায়ী ৮ ঘণ্টা পরপর দেওয়া যেতে পারে
- তিন দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
শিশুদের খাবারদাবার
করোনার এই পরিবেশে শিশুদের মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল ইত্যাদি প্রোটিনজাতীয় খাবার একটু বেশি দিতে হবে, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ভিটামিন ও মিনারেল-যুক্ত খাবার ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাবে। এ সময় পান করাতে হবে প্রচুর পরিমাণে জল। দিনে তিন থেকে পাঁচবার গরম জলে নুন ও লেবু দিয়ে পাতলা চা পান করানো যেতে পারে।
শিশুর ঘুম
শিশুর ঘুমের প্রতি বিশেষ নজর রাখুন। মনে রাখবেন, রাতের স্বাভাবিক ঘুম শিশুর স্ফূর্তিভাব বাড়িয়ে দেবে অনেক গুন। এ সময় তাদের মানসিক উদ্বিগ্নতা ও উৎকণ্ঠা বেশি বলে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। এ জন্য আপনার সন্তানকে রাত ৯-১০টার মধ্যে বিছানায় শোওয়ানোর অভ্যাস করুন। ঘুমোনোর আগে মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইস দূরে রাখুন। ঘুম না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেলাটনিনজাতীয় এক-দুটি ট্যাবলেট খাওয়াতে পারেন।
শিশুদের করোনার উপসর্গ দেখা দিলে
শিশুদের করোনার উপসর্গ বড়োদের মতোই। যেমন জ্বর, হাঁচি, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। অনেক শিশুরই রোগপ্রতিরোধক্ষমতা কম এবং তারা নিজেদের পরিষ্কার-পরিছন্নতা নিজেরা বজায় রাখতে পারে না। এ জন্য হালকা ঠান্ডা লাগা, কাশি, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। গরম জলে গার্গল করানো জরুরি। ভেষজ প্রতিরোধক হিসাবে, তুলসীপাতার রস পান করানো যেতে পারে। জ্বর যদি না কমে তাহলে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।