একটানা একবছর পড়ুয়ারা হারিয়েছে ওদের স্বাভাবিক জীবনযাপন। স্কুলে যাওয়া নেই, বন্ধুদের সঙ্গে মুখোমুখি বসে কথা বলা নেই, হইহুল্লোড় নেই, স্কুলে শিষ্টাচার মেনে চলা নেই, খেলাধুলোও নেই। মনে রাখবেন, এই ছন্দপতন পড়ুয়াদের শরীর-মনে মারাত্মক খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, শারীরিক পরিশ্রম এবং মানসিক সংযোগের ঘাটতির ফলে যেমন শারীরিক বৃদ্ধি ব্যহত করতে পারে, তেমনই মানসিক বিকাশও বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। এর ফলে স্থলতার সমস্যা, ধৈর্য হারানোর সমস্যা, বুদ্ধির ঘাটতির সমস্যা প্রভতি হতে পারে। শুধু তাই নয়, সামাজিক মেলামেশার এই বিরতি, ভবিষ্যতে একাকিত্বের কবলে ফেলতে পারে পড়ুয়াকে। অতএব, সতর্ক থাকুন অভিভাবকরা এবং সমস্যামুক্ত থাকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
একটানা বসে লেখাপড়া না করিয়ে মাঝেমধ্যে ঘরের মধ্যে হাঁটাচলা করতে বলুন আপনার সন্তানকে। অনলাইন-এ একটা ক্লাস করার পর যাতে অন্তত পনের মিনিট বিরতি পায় পড়ুয়ারা, তা নিশ্চিত করুন স্কুল টিচার-এর সঙ্গে আলোচনা করে। কারণ, ওই বিরতি আবশ্যক পড়ুয়ার মেন্টাল রিলিফ-এর জন্য, খাওয়া এবং হাঁটাচলার জন্য।
লেখাপড়ার মাঝে সঠিক সময়ে যাতে খাবার খায় পড়ুয়ারা এবং উপযুক্ত পরিমাণে জল পান করে, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকুন এবং সঠিক উদ্যোগ নিন।
পড়ার সময়, কিংবা মোবাইল ও ল্যাপটপ-এ চোখ রেখে অনলাইন ক্লাস করার সময় যাতে পর্যাপ্ত আলো পায় পড়ুয়ারা, সেই ব্যবস্থা রাখুন সঠিক ভাবে। কারণ, উপযুক্ত আলো না পেলে চোখে পাওয়ার আসতে পারে কিংবা পাওয়ার থাকলে তা আরও বেড়ে যেতে পারে। প্রতিদিনই যদি পড়ুয়ার মাথা ধরে থাকা কিংবা মাথার যন্ত্রণা হতে থাকে, তাহলে অবশ্যই আই স্পেশালিস্ট-কে দেখাবেন। কারণ, ডক্টর চেক-আপ না করালে, পরে বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
প্রতিদিন সকাল-বিকেল বাড়ির আশপাশ অঞ্চলে কিংবা মাঠে হাঁটিয়ে নিয়ে আসবেন পড়ুয়াকে। আর তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অবশ্যই বাড়িতে ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করাবেন আপনার সন্তানকে।
সময় পেলে সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন এবং ওর সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটান। এতে ওর মানসিক ভারসাম্য স্বাভাবিক থাকবে। সেই সঙ্গে, ওর স্কুল কিংবা পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে দূরভাষে কথা বলতে বলুন। কারণ, বাড়িতে থাকার একঘেয়েছি কাটাতে এটা এখন অন্যতম উপায়।
সন্তানকে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ-এ ব্যস্ত রাখুন। ভালো গান শোনান কিংবা শুনতে বলুন এতে মন ভালো থাকবে।
টিভিতে সারাক্ষণ প্রচারিত হতে থাকা অসুস্থতার খবর কিংবা মৃত্যুর খবর দেখাশোনা থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করুন আপনার সন্তানকে। অর্থাৎ, ওদের যেন কখনও নেগেটিভ চিন্তাভাবনা গ্রাস না করে।
লেখাপড়ার সময়ে অবসরে প্রয়োজনে মায়ে সঙ্গে ঘরের কাজেও ব্যস্ত রাখতে পারেন আপনার সন্তানকে। এর ফলে আপনার সন্তান বন্ধুদের সান্নিধ্য না পাওয়ার অভাব কিছুটা ভুলবে এবং একাকিত্ব গ্রাস করবে না।
বাড়িতে যেহেতু বেশিরভাগ সময়টা বসে অনলাইন ক্লাস করতে হচ্ছে ছোটোদের, তাই ওদের ফাস্ট ফুড খাওয়া থেকে বিরত রাখুন এবং খুব ভারী খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে যেন পড়তে না বসে। এতে স্থলতা এবং হার্ট-এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ইন্টারনেট যেহেতু সারা পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে, তাই পড়ুয়াদের খুব সাবধানে নজরে রাখা জরুরি। কারণ, ভালো কিছুর পাশাপাশি, খারাপ কিছুর নাগাল পেয়ে বিপথেও যেতে পারে আপনার সন্তান। যেমন ডেডলি গেমস, পর্নোগ্রাফি ইত্যাদির শিকার হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সতর্ক থাকুন এবং সন্তানকে সতর্কতার সঙ্গে নজরে রেখে, ওদের বিপথে যাওয়ার থেকে রক্ষা করুন।