আগের মতো বাবু হয়ে বসলে মা, রানুমাসি দুজনেই আজকাল খুব বকে। অগত্যা বদলে গেল আমার বসার ঢং। কিন্তু সেবারই প্রথম দোলে, চুলের সিঁথির ফাঁকে ইচ্ছে করেই রেখে দিলাম একটু আবির রং। কেন জানি না!

আগে হাফ-ইয়ারলি পরীক্ষা শেষ হতো গরমের ছুটির আগে। সারা দুপুর আমাদের খুব লুডো খেলা হতো। আমার দাদার বন্ধু মৈনাকদা আসত আমাদের বাড়ি। মাথায় ঝাঁকড়া চুল। এলোমেলো দাড়ি। সাজ-পোশাক পরিপাটি নয়, তবু চোখে একটা গভীরতা ছিল। আর কথায় ছিল জাদু। আমি তখন এর বেশি কিছু বুঝি না।

সেবছর ফাল্গুনে, টুটুমাসির বিয়েতে বর দেখে যেরকম ভালো লেগেছিল, সেরকম ভালো লাগে। আর ভালো লাগে আমার পাকা ঘুঁটি, দান পড়লেও মৈনাকদা কাটে না। আমার দাদা রেগে যায়, মৈনাকদা থামিয়ে দেয়। ঝগড়াও হতো মাঝেমধ্যে। সেটা ভুলে গেছি। সুযোগ পেয়ে জোড়া পাকা ঘুঁটি না খাওয়াটা আজও ভুলিনি।

চুল ঝাঁকিয়ে বেশ তবলা বাজাত মৈনাকদা। আমার সাথে সন্ধেবেলা অনেকদিন বাজিয়েছে। সেদিন আমার গান ভালো হতো না। শুদ্ধ স্বরগুলো নড়ে গিয়ে কড়ি-কোমলে লাগত। দাদা আমার থেকে দুবছরের বড়ো, তবুও আমি বড়ো হয়ে গেলাম আগে। কারণ মেয়েবেলায় ছেলেবেলাটা খুব ছোটো।

মাধ্যমিকের আগে দাদাকে বললাম, লাভ-ক্ষতির অঙ্কগুলো একটু বুঝিয়ে দিবি?

দাদার সামনে উচ্চমাধ্যমিক। দাদা বলল, কমার্স পড়তে পড়তে ওসব ভুলে গুলে খেয়ে দিয়েছি। মৈনাককে বলে দেব, ও দেখিয়ে দেবে।

পরদিন দুপুরে চিলেকোঠার ঘরে শুরু হল আমার লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষা। পরের বছর সরস্বতী পুজোয় নৃত্যনাট্যে স্টেজের পিছনে অন্ধকারে খুব অল্প জায়গায় ঘেঁষাঘেঁষি করে বসেছিলাম আমরা। তবলা নিয়ে মৈনাকদা আর তার ঠিক পাশেই আমি লাফিয়ে গিয়ে বসেছিলাম। ভালো লাগত বসতে। পাঞ্জাবি পরেছিল ও। গায়ে গন্ধটা চোখ বুঝলে আজও পাই। একটা জিতে যাওয়া মানুষের গায়ের গন্ধ। ওটাই শেষ পাশে বসা। মায়ের সজাগ চোখ তারপর আর কোনওদিন, আমাদের কাছাকাছি আসতে দেয়নি। বারান্দা থেকে ওর কলেজ যাওয়া দেখাটা, আমার আরও বেড়ে গেল। তবে স্বপ্নে অনেক কিছু দেখেছি, সেটা আমার একান্ত নিজস্ব। কাউকে বলা যাবে না।

আমার বাবা- মা দুজনেই চাকরি করে। রানুমাসি আমাদের সবসময়ে কাজের লোক, দেখাশোনা করে। মায়ের নির্দেশে, বেশি বেশি নজরে রাখে আমাকে। কারণ মৈনাক ভালো ছেলে হলেও, অর্থাভাবে ওদের টানাটানির সংসার। ওই বয়সে আমার কাছে সেটা অর্থহীন।

বিজয় দশমীর দিন ও প্রতিবছর আসত আমাদের বাড়ি। বাবা মাকে প্রণাম করত। দাদার সাথে কোলাকুলি করত। আর আমার সাথে চোখে চোখে যেটা হতো, শুধু সেটা নিয়ে একটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়। মা থালা সাজিয়ে মিষ্টি দিত। আমার, মামারবাড়িতে জামাই-ষষ্ঠীর কথা মনে হতো। মা বলত, দ্যাখ, মৈনাক কত ভালো ছেলে, যেমন পড়াশোনায়, তেমনি কি সুন্দর তবলা বাজায়।

আমার এই কথাগুলো ভালো লাগত না। এগুলো লোক ঠকানো। মৈনাকও বুঝত ভালো বিশেষণ পাওয়া সহজ। কিন্তু গ্রহণযোগ্যতার অনেক মাপকাঠি আছে। তবুও অবুঝের মতো হতাশ চোখে দেখত। আজকের মতো তখন এত মেলামেশার সুযোগ ছিল না। তখন ভালোবাসা বেশি ছিল, সাহস কম ছিল। এখন ঠিক উলটো। সাহসটা বেশি কিন্তু ভালোবাসাটা কম। আসলে বাধা-বিপত্তি না থাকলে কোনও কাজেই আনন্দ নেই।

ফল্গুর মতো একটা প্রেম বয়ে চলতে লাগল। পাড়ায় একটা চর্চা ছিল। কিন্তু কারও হাতেই কোনও প্রমাণ ছিল না। আসলে মৈনাক খুব ভীতু প্রেমিক। মৃদুমন্দ বসন্তবাতাসের মতো সারাদিন মন ভালো করে দেবে, অথচ প্রয়োজনে কালবৈশাখী হয়ে উঠতে পারবে না। না হলে এমএসসি পাশ করা একটা ছেলে তখনও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারছে না। নব্বইয়ের দশকে একটা মেয়ে নিজে থেকে উদ্যোগ নিতে পারে না।

আমার তখন গ্র‌্যাজুয়েশন হয়ে গেছে। আজকের যুগে হলে এটা জলের মতো সহজ। তবে সেটা হলে এ লেখাটাও হতো না, আর ভালোবাসার হয়তো মরণ হতো দু-ছক্কা দুই-এর সংসারের চাপে।

অনেক সাহস করে মৈনাক একদিন দেখা করেছিল একটা রেস্টুরেন্টে। প্রেম বলতে ওই একদিন আমরা করেছিলাম। গল্পের শেষে আমি যখন বলেছিলাম, বাবা-মা কিন্তু কোনওদিনই তোমার সাথে বিয়ে দেবে না।

ও কোনও উত্তর করল না। শুধু জলভরা চোখে তাকিয়ে রইল। ও যদি সেদিন আমায় এই বিশ্বসংসারের সব ছেড়ে ঝাঁপ দেবার ডাক দিত, আমি সেদিন ওর বুকে মাথা রাখতাম। ঠিক-ভুল, সময় বিচার করত। সাগর ডাক না দিলে, শুধু নদীর পক্ষে এগিয়ে গিয়ে মেলা কঠিন। মনে মনে সেদিন-ই বুঝে গেলাম, এ প্রেম আমায় সারা জীবন বিরহ যন্ত্রণা দেবে। ওঠার আগে আমার হাত চেপে ধরল মৈনাক।

একটা কান্না আমার গলার কাছে দলা পাকিয়ে উঠল। আসলে প্রেম তো শুধু ভালোবাসা চায় না, সে রাগারাগি চায়, ঝগড়া চায়, দোকানের ফর্দ চায়, বাজারের ভুল চায়, মুখ-ঝামটা দিয়ে ভাত বাড়তে চায়, মায়ের মতো রাগ করে আলাদা শুতে চায়, মাঝরাতে আবার মশারির ভেতরে এসে সোহাগ পেতে চায়। এসবে প্রেমের মৃত্যু হয়, না সাফল্য আমি জানি না। এখন নিজে মা হয়ে বুঝি, প্রেমের সংসার আর সংসারের প্রেমে কত তফাত।

তারপর যা হবার তাই হল। আমার কিশোরীবেলার অবুঝ প্রেম সাপলুডোর সিঁড়ি পেল না, সাপের মুখে পড়ল। বাবা-মার পছন্দের পাত্রের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল। কত কলকাকলি, তার মধ্যে বিবাহ-সংগীত, গায়ে লাল বেনারসী, রজনীগন্ধা, আগের সব গন্ধ ঢেকে দিল। কত উপহারের নীচে চাপা পড়ে গেল মৈনাকের দেওয়া গীতবিতান। অচেনা এক পুরুষকে বন্ধু করার চেষ্টা করতে লাগলাম। মৈনাকের জলছবির ওপর ধুলো জমতে থাকল।

বুঝতেই পারলাম না, কখন আমার ভেতরের দুদিকে দোল খাওয়া দু-বিনুনির ছটফটে মেয়েটা, মরে গিয়ে খোঁপায় পরিপাটি এক শান্ত বউ-এর জন্ম হল। এতদিনের গান-বাজনা, পড়াশোনা, সব টানটান বিছানা, রং মেলানো পর্দা, আর দুপুরের রঙিন কাপড় দিয়ে সেলাই করা বালাপোষের নীচে চাপা পড়ে গেল। কোলে এল মেহুল। মেয়েদের জীবনের সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি। সন্তান।

নব্বইয়ে দশকে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ঘরে সন্তানের জন্য জীবন দেওয়ার একটা রেওয়াজ ছিল। স্কুল, কোচিং ক্লাস, নোট নেওয়া এসবই ছিল ধ্যান-জ্ঞান। নিজের সব না-পারা ছেলেমেয়ের মধ্যে উসুল করে নেওয়া। জীবনের আয়নায় নিজের থেকে প্রতিবিম্বকে সুন্দর করে তোলা। মেহুলের নীচে চাপা পড়ে গেল আমার সব ঝাপসা অতীত।

আমার স্বামী মানুষটা খারাপ নয়। চাকরি ভালোই করে। মদ বা সিগারেট যেটুকু খায়, তাতে তাকে নেশাগ্রস্ত বলা যায় না। কর্তব্যে ফাঁকি নেই, তবে অমনোযোগিতা আছে। সুখ চারপাশে অনেক ছড়িয়ে আছে, একঘেয়েমির বিরক্তিও আছে। তবে সুপ্রিয় আমাকে খুব বিশ্বাস করে। শিকড় সমেত গাছ তুলে এনে অন্য মাটিতে বসালে যে অসুবিধাগুলো হয়, সেটা ধীরে ধীরে মানিয়ে নিলাম।

ঘড়ির কাঁটার মতো টিক টিক করে দ্বিতীয় পদবির বয়সও কুড়ি বছর হয়ে গেল। মেহুল এখন কলেজে পড়ে। আজকাল মেয়েরা, মেয়ে হওয়ার কষ্ট কমই বোঝে। একটা করে সন্তান, চারহাতে ঢাকা প্রদীপের শিখার মতো। আপন খেয়ালে বেড়ে উঠতে পারে। মেয়ে বলে কোনও আলাদা ভয় সমাজ এদের মনে ঢেলে দেয়নি। ফলে আমাদের থেকে খোলস ভাঙার ক্ষমতা এদের বেশি।

মেহুল একদিন কলেজ থেকে ফিরে বলল, মা জানো, আজকে একটা দারুণ ঘটনা হয়েছে। আমাদের কেমিস্ট্রি স্যার, এমডি আজকে হঠাৎ ক্লাসে আমাকে মার নাম জিজ্ঞেস করল। আমি তোমার নাম বললাম, আমার মাথায় হাত দিয়ে আদর করল। মা তুমি চেনো?

মুহূর্তে মনের ফুটো দিয়ে সব স্মৃতি ফিনকি দিয়ে উঠল। নিজেকে সংবরণ করলাম। শান্ত ভাবে বললাম, ওনার পুরো নাম কি?

মেয়ে বলল, মৈনাক দত্ত, দারুণ পড়ায়।

আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে উঠলাম, হ্যাঁ, তোমার মামার বন্ধু। বলেই অন্যদিকে কথা ঘুরিয়ে নিলাম। আমাদের প্রজন্মের, এ ভয়, না মরলে যাবে না। নিজের গ্রহ ছেড়ে অন্য গ্রহকে মানুষ চিনতে যাচ্ছে, অথচ একজন পুরুষকে আমি চিনতাম, সে কথা স্বীকার করার সৎসাহস আজও অর্জন করতে পারলাম না।

মেহুল রোজ এসে মৈনাকের গল্প বলত। ও বিশ্বাসই করতে চাইত না যে, মৈনাক ওর মামার বন্ধু! আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করত, মামার থেকে এত ছোটো দেখতে লাগে কেন?

আমি ওকে কী করে বোঝাব আমার মৈনাকের কথা শুনতে ভালো লাগে না। এখন শুধু একটাই আপশোশ করি, মেহুলকে একটু সুপ্রিয়র মতো দেখতে হল না কেন। যত বড়ো হচ্ছে একদম অবিকল আমি। শুধু হাঁটাটা আলাদা। দুদশক আগে আমাদের হাঁটায় শাড়ি পরে যে-সলজ্জ ভাবটা ছিল, সেটা এখন জিন্সে অনেক আধুনিক আর সাহসী।

একদিন সন্ধ্যাবেলা সুপ্রিয় তখনও ফেরেনি, মেহুল ওর নিজের ঘরে, আমি বসে টিভি দেখছি। হঠাৎ মেহুল এসে বলে, মা স্যার ফোন করেছে তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে।

আমি ইশারায় বললাম, বল মা টয়লেটে, পরে কথা বলবে।

আমার খুব রাগ হল, ও এরকম বোকার মতো করছে কেন? আসল সময়ে সাহসের খোঁজ নেই। এখন এসব করার কোনও মানে আছে। এখনকার মেয়েরা অনেক বুদ্ধিমান। কিছু যদি আন্দাজ করতে পারে কী বাজে হবে ব্যাপারটা!

স্যারের সাথে মেহুলের সম্পর্ক আরও কাছাকাছি আসতে লাগল। মেহুলকে কলেজের পর অনেক জায়গায় খাওয়াতে নিয়ে যায়। লাইব্রেরিতে অনেকক্ষণ দুজনে সময় কাটায়। কেমিস্ট্রির অনেক বই, নোটস দিয়েছে মেহুলকে। কিন্তু আমার যন্ত্রণা ক্রমশ বাড়তে লাগল। না পারছি, সুপ্রিয়কে সব খুলে বলতে… না বারণ করতে পারছি, মেহুলকে। তবে ফোনে আর কোনওদিন আমার সাথে কথা বলতে চায়নি। হয়তো বুঝে গেছে, আমি পছন্দ করছি না। মাঝেমধ্যে ভাবি মেহুলের কাছ থেকে মোবাইল নাম্বারটা নিয়ে মেহুলের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে বারণ করে দিই। এতে মেহুল জানতে পারলে, হিতে বিপরীত হতে পারে। এই নিয়ে অশান্তি আমার বাড়তেই থাকল।

সেদিন পঁচিশে বৈশাখ। আমি টিভিতে গান শুনছি। মেহুল সকালে উঠে বলল, মা, তোমার লালপাড় হলুদ শাড়িটা পরে আজকে কলেজ যাব। রবীন্দ্র-জয়ন্তী আছে।

আলমারি থেকে বার করে দিলাম। লাল ব্লাউজটা হালকা সেলাই করে দিলাম। শাড়ি পরে মেহুল এসে যখন সামনে দাঁড়াল, তখন আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গেলাম। এতদিনে মা হয়ে বুঝিনি, মেহুল হঠাৎ মেয়ে থেকে মহিলা হয়ে গেছে। ভয়ে ভয়ে দুগ্গা দুগ্গা বলে মেয়েকে কলেজ পাঠালাম। সুপ্রিয় তখনও ওঠেনি। এক ঠ্যালা দিয়ে বললাম, তুমি এবার বিয়ের ব্যবস্থা করো।

ও ঘুমের ঘোরে বলে উঠল, কার?

আমি রেগে বললাম, তোমার।

এবার ও ধড়মড় করে উঠে বলল, কি হয়েছে বলবে তো?

ওকে বুঝিয়ে বললাম, এবার মেয়ের বিয়ের খোঁজখবর শুরু করতে হবে, কথা বললেই তো আর বিয়ে হচ্ছে না। সময় ঠিক কেটে যাবে। ফাইনাল পরীক্ষার পর বিয়ে দিয়ে দেব। তারপর পড়তে চাইলে, বিয়ের পর পড়বে।

ও ধামাচাপা দেওয়ার মতো বলল, ঠিক আছে।

সন্ধেবেলা মেহুল ফিরে এল। হই হই করতে করতে ঘরে ঢুকল। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, মা স্যারকে পাঞ্জাবি পরে কী লাগছিল! মনেই হয় না স্যারের বয়স পঁয়তাল্লিশ। কী দারুণ তবলা বাজাল! আমার নাচের ভিডিওটা দ্যাখো। এই বলে আমাকে অনুষ্ঠানের সব ছবিগুলো দেখাতে লাগল। হঠাৎ একটা ছবিতে মৈনাককে দেখলাম। একইরকম আছে। শুধু চোখে একটা পুরু কাঁচের মোটা ফ্রেমের চশমা।

মেহুলকে জিজ্ঞেস করলাম, তোদের স্যারের চোখে খুব পাওয়ার?

মেহুল বাচ্চা মেয়ের মতো বলে উঠল, হ্যাঁ স্যারের তো গ্লুকোমা আছে, আর তো বছর দুয়েক হয়তো দেখতে পাবে, ডাক্তার বলে দিয়েছে। স্যার আমায় সব গল্প করে, স্যার তো কলেজে পড়ার সময়ে জানত। কুড়ি-পঁচিশ বছরের মধ্যে একবারে অন্ধ হয়ে যাবে। সেই জন্যই তো স্যার বিয়ে করেনি।

সেদিন গভীর রাত। সবাই শুয়ে পড়েছে। আমার ঘুম আসছে না। আমি মেহুলের ঘরে ঢুকে মৈনাকের নাম্বারটা নিলাম। ফোন করলাম মৈনাককে। গভীর রাতে সবার গলাই খাদে নেমে যায়। ওপার থেকে গম্ভীর গলায় ভেসে এল,

হ্যালো…।

আমার সারা শরীর কাঁপছে। আস্তে করে বললাম, মালবিকা।

কেমন আছো? একবার শুধু দেখতে ইচ্ছে করে।

তোমার চোখের কথা শুনলাম।

ও কিছু না। আমি তো ওটা পঁচিশ বছর আগেই জানি। শুধু চিরকালের মতো আলো নিভে যাওয়ার আগে, একবার তোমাকে দেখতে চাই। ওটা আমার অন্ধকারের ভেতরটা আলো করে রাখবে।

আমি যাব, রাখলাম।

সারারাত আমার ঘুম এল না। দেখলাম, একটা গোটা রাত কত গভীর, কত অন্ধকার। বারবার মনে পড়ছিল, মৈনাকের লেখা কবিতার চারটে লাইন,

আমি আজ দুঃখ দিয়ে নেশা করব,

আমার কান্নায় আফিমের কারবার;

তবু…, তুমি জ্যোত্স্না মাখলে না, মহাকাশে

রটিয়ে দিয়েছি স্পর্শহীন প্রেমের ইস্তেহার।

পরদিন সকালে উঠে চা করে ওদের ডাকলাম। সুপ্রিয়র সুগার আছে, ও চিনি দিতে বললে, আমি রাগারাগি করি। আজ আমি ভুল করে ওর কাপেই দুচামচ চিনি দিয়ে দিলাম। শরীর ভারী লাগছে। কোনও কাজ করতে ইচ্ছে করছে না।

মেহুলকে বললাম, তোর কলেজে একদিন যাব।

মেহুল জড়িয়ে ধরে বলল, আমার মিষ্টি মা।

মালবিকা ভাবতে লাগল… চোখ কী শুধু দেখার, না কাঁদার!

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...