মানালি : সিমলা থেকে মানালির Travelogue দূরত্ব অনেকটাই। ভায়া এনএইচ ১৫৪, ২৩৬ কিলোমিটার মানালি যাওয়ার মাঝে মণিকরণ ঘোরা যায়। মণিকরণ, পার্বতী নদীর ধারে ছোট্ট একটি শহর। গুরুদুয়ারা এবং উষ্ণ প্রস্রবণের জন্যেই বিখ্যাত। মানালি যাওয়ার রাস্তাতেই পড়ে বিয়াসের উপর প্যানডো ড্যাম। ড্যামের ফলে তৈরি হয়েছে সবুজ জলের প্যানডো লেক। অপূর্ব সুন্দর জায়গা। চারপাশে পাহাড়, মাথার ওপর নীল আকাশ আর মাঝে জল। অক্টোবরের ঠান্ডায় শরীর জমে যাওয়ার অবস্থা হয়। আমরা সিমলা থেকে মানালিতে হোটেলে যখন পৌঁছালাম তখন ঘড়িতে প্রায় দশটা বাজে। ক্লান্ত থাকায় রাতে খুব ভালো ঘুম হল। সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দেখি সামনের সবুজ পাহাড়গুলো সাদা ঝকঝকে রুপোর মুকুট পরে দাঁড়িয়ে আছে।
দুহাজারের বেশি উচ্চতায় বিয়াস নদীর ধারে অবস্থিত মানালির সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করা খুব শক্ত। মানালিতে আছে সারি সারি পর্বতশৃঙ্গ, সবুজ পার্বত্য উপত্যকা আর পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া সুন্দরী বিয়াস নদী। মানালিতে গিয়ে অন্যান্য পর্যটকদের মতো রোটাং পাস যাওয়া হল। বরফে ঢাকা রাস্তায় ভাড়া ড্রেস ও জুতো পরে বরফের মধ্যে অনেকটা পথ হাঁটতে হল। সে এক অপূর্ব অনুভূতি। মানালির সৌন্দর্য দেখতে হলে অন্তত চারদিন থাকা উচিত এখানে।
বিখ্যাত হিড়িম্বা মন্দির মানালি শহরে অবস্থিত। পাইন, দেবদারুর ঘন বনের মধ্যে হিড়িম্বা মন্দিরটি অপূর্ব সুন্দর। শোনা যায় হিড়িম্বা এইখানে একটি গুহায় বাস করতেন। মন্দিরটি নির্মাণ করেন মহারাজা বাহাদুর সিংহ ১৫৫৩ সালে। হিড়িম্বা মন্দিরের কিছুটা আগে একটা বড়ো গাছের তলায় হিড়িম্বার পুত্র ঘটোৎকচের পুজো হয়। মন্দিরের কাছাকাছি প্রচুর শীত বস্ত্রের দোকান ও অন্যান্য অনেক দোকান আছে। মানালির ক্লাবহাউস অতি চমৎকার।
মানালির ম্যাল খুব সুন্দর। ম্যালের চারপাশে অনেক বাজার দোকান আছে। এছাড়া রকমারি খাবারদাবারেরও অনেক দোকান রয়েছে। ম্যালের কাছাকাছি বনবিহার পার্ক, তিব্বতি বাজার এবং তিব্বতি মঠ অপূর্ব সুন্দর। বশিষ্ঠ গ্রামে আছে বশিষ্ঠ মুনির মন্দির এবং উষ্ণ প্রস্রবণ।
রোটাং পাস : মানালি থেকে ৫১ কিলোমিটার দূরে পির পাঞ্জাল রেঞ্জে প্রায় ৪০০০ মিটার উঁচুতে রোটাং পাস। কুলু উপত্যকাকে লাহুল-স্পিতির সঙ্গে যোগ করেছে এই রোটাং পাস। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর রোটাং পাস খোলা থাকে। তবে যে-কোনও সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রোটাং পাসের বেশ কিছুটা আগে থেকেই সবুজ প্রায় নিশ্চিহ্ন! এখানে অক্সিজেনের বেশ অভাব। এই কারণে অনেকেরই সমস্যা হয় শ্বাসকষ্টের।
সোলাং ভ্যালি : রোটাং থেকে ফেরার সময় দেখা হয়ে যায় সোলাং ভ্যালি। সোলাং গ্রাম আর বিয়াস কুন্ডের মাঝামাঝি এই উপত্যকা, যার চারপাশে বরফে ঢাকা শৃঙ্গ। উপত্যকার সর্বোচ্চ পয়েন্টে যাবার জন্যে এটিভি কোয়াড বাইকের ব্যবস্থা আছে। তবে, ইচ্ছে করলে ঘোড়ায় চড়েও যাওয়া যায়। মানালির পথে পথে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে, সেসব জায়গার Travelogue সৌন্দর্য মনপ্রাণ ভরিয়ে দেয়। এরকমই একটি জায়গা হল পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর নামাঙ্কিত ঝরনা নেহেরু কুণ্ড। এর আশেপাশের সৌন্দর্য একবার দেখলে ভোলা যায় না।
কুলু : মানালির একদিন রাখা হয়েছিল কুলু যাবার জন্য। কুলু যাবার পথে অনেক আপেল বাগান দেখা হল। প্রচুর ফোটো তোলা হয়েছে হিমালয়ের সৌন্দর্যের। এছাড়া হিমাচল প্রদেশের পোশাক পরে নানা ভঙ্গিমায় আমরা নিজেরা ফোটো শুট করলাম। মানালি থেকে ধরমশালায় যাওয়ার পথে পর পর রয়েছে রাফটিং পয়েন্ট। পথেই দেখা হয়ে যায় সুপ্রাচীন বৈজনাথ মন্দির এবং পালামপুরের চা বাগান।
ধরমশালা : ধরমশালায় পৌঁছোতে পৌঁছোতে সন্ধে সাতটা বেজে গেল। ধরমশালা থেকে একটু ওপরে হোটেলে আমাদের থাকার ব্যবস্থা ছিল। বেড়ানো প্রায় শেষ, পরদিন মানালি থেকে রওনা দিলাম দিল্লির দিকে। ফেরার উড়ান ছিল দিল্লি থেকে কলকাতা।
আমরা যাওয়ার সময় অবশ্য হাওড়া থেকে কালকা মেলে কালকা গিয়ে ওখান থেকে ট্রয়ট্রেনে করে সিমলা গিয়েছিলাম। কুলু ও মানালির সৌন্দর্য মনের মণিকোঠায় সঞ্চয় করে এক পাহাড়ি রাজ্যের কিছু অবিস্মরণীয় স্মৃতি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।