আট বছরের মেয়ে সানাকে নিয়ে মাঝেমধ্যে ‘নিরালা’-য় অবসর যাপন করতে চলে আসে সন্তু আর নীতা।

বাঁশবন, পেয়ারা বাগান, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, কদম, বট, অশ্বত্থ, বাবলা,শিরীষ,বকুল,কামিনি,শিউলি, সুপুরি,সবজি খেত আর পুকুর পরিবেষ্টিত হয়ে আছে গোবিন্দপুরের এই ‘নিরালা’ আবাসন। বহুতল আবাসনের এই ছাদ থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায় দারুণ ভাবে। রাতের আকাশের চাঁদের আলো যেমন ভালোবাসার আবেশে জড়ায়, ঠিক তেমনই কৃষ্ণপক্ষের সূচিভেদ্য অন্ধকার শিহরণ জাগায় শরীরে। লকডাউন-এর অবসরে, কলকাতার কোলাহল ছেড়ে এমনই প্রকৃতিকে সঙ্গী করে, ‘নিরালা’-য় এসে আশ্রয় নিয়েছিল সন্তু আর নীতা। কিন্তু তখন কে জানত যে, অমন সুন্দর প্রকৃতির মাঝেই ঘটে যাবে ভয়ংকর বিপদ !

গোধুলির ম্লান আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। আবাসনের গেট-এর কাছে,মুখে মাস্ক পরে ঘাসজমিতে বসে গল্প করছে নীতা আর সন্তু। একই ভাবে মুখে মাস্ক পরে ওদের মেয়ে সানা দুলছিল পা‌শে ঝোলানো একটি দোলনায়।

হঠাৎ হইহুল্লোড় কানে আসতেই গেট-এর দিকে এগিয়ে গেল সন্তু, নীতা এবং সানা। ওরা দেখতে পেল, ছোটোবড়ো একদল স্থানীয় ছেলে একটা বড়ো সাপ মেরে, লাঠিতে ঝুলিয়ে এনে, গেট-এর কাছে কদম গাছটার নীচে ফেলে পালিয়ে গেল। চিৎকার করে সাপটাকে ওখান থেকে সরাতে বললেও, ছেলেগুলোর কানে পৌঁছোলো না দারোয়ানের কথা। পচে দুর্গন্ধ ছড়াবে, তাই সাপটাকে ওখান থেকে সরিয়ে ফেলতে অনুরোধ করল সন্তু। অগত্যা, কথা রাখার প্রতিশ্রুতি দিল দারোয়ান।

এরই মধ্যে সন্ধে নেমেছে। বৈদ্যুতিক আলোগুলি জ্বলে উঠছে আবাসন চত্বরে। নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল ছিল সন্তু আর নীতা। তাই, মেয়ে সানা যে কখন নজরের বাইরে চলে গেছে, তা আর ওদের খেয়াল ছিল না।

হঠাৎ নজর কাড়ল দারোয়ান। ওর কোলে তখন অঝোরে কেঁদে চলেছে সানা।

‘কী হয়েছে ? সানা কাঁদছে কেন ? পড়ে গেছে ? ‘ —–উদ্বেগ ভরা গলায় সন্তু এবং নীতা প্রায় সমস্বরে প্রশ্ন করে চলেছে দারোয়ানকে।

‘বড়ো বিপদ ঘটে গেছে স্যার। আমি বাথরুম-এ গিয়েছিলাম,এরই মধ্যে ছোটো গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল আপনাদের মেয়ে।’

‘তা বিপদটা কী ঘটেছে ?’ —–দ্বিগুণ উদ্বেগে প্রশ্ন করল সন্তু।

‘শুকনো কাঠি দিয়ে ওই পড়ে থাকা সাপটার মুখে খোঁচাতে গিয়ে, কামড় খেয়েছে। সাপটা বেঁচে ছিল। একেবারে মরণ কামড় দিয়েছে। ব্যাঙ ধরার মতো করে ধরে ছিল ওর হাতের চেটোটা। বিষাক্ত সাপ। পুরো বিষ ঢেলে দিয়েছে সম্ভবত। আমি ওর হাত বেঁধে দিয়েছি,বিষ আর ওপরে যাতে না ওঠে। শিগগির গাড়ি বের করুন স্যার। হাসপাতালে নিয়ে চলুন। আমি সাপটাকে কৌটোতে ভরে নিচ্ছি। ‘—–এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে, সানাকে ওর মায়ের কোলে দিল দারোয়ান।

সানার হাত থেকে রক্ত ঝরছে। নীতা মেয়েকে কোলে নিয়ে ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।

লকডাউন-এর হ্যাপা কাটিয়ে সন্তু আর নীতা যখন সানাকে নিয়ে কলকাতার হাসপাতালে পৌঁছোলো, ততক্ষণে কেটে গেছে অনেকটা সময়। চিকিৎসা শুরু হল ঠিকই, কিন্তু সানার শরীরকে বিষমুক্ত করার সুযোগ পেলেন না চিকিৎসক। মাল্টি অরগান ফেলিওর হতে শুরু হল। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল, কৌটোয় রাখা ওই মরা সাপটার মতই নিথর হয়ে আছে সানার শরীরটা।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...