বাড়িতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গার কথা মনে হলেই রান্নাঘরের কথাটাই আগে মনে হয়। শরীর কর্মক্ষম রাখতে হলে খাবারের প্রয়োজন। নোংরা অপরিচ্ছন্ন জায়গায় যদি রান্না করতে হয়, তাহলে তা অস্বাস্থ্যকর তো বটেই।
আজকাল মহিলা এবং পুরুষ উভয়ে নিজেদের কর্মজগত নিয়ে ব্যস্ত। বাড়িতে তেমন ভাবে সময় কেউ দিতে পারে না। অথচ চাহিদা কিন্তু থেকেই যায়। অফিসেও যেরকম আপনার ‘বেস্ট’-টা আপনার কাছে আশা করা হয়, সেরকম বাড়িতেও কিন্তু মুখে না বললেও আপনার কর্মকুশলতার প্রদর্শনেই সকলে খুশি থাকে।
বিশেষ করে কর্মরতা মেয়েরাই মুশকিলে পড়েন বেশি, কারণ অফিসের দাযিত্ব সামলে বাড়ির দাযিত্বও কাঁধে তুলে নিতে হয়। সমস্যা হয় সেখানেই। এই পরিস্থিতিতে যদি রান্নাঘর সামলাবার কয়েকটা টিপস জেনে নেওয়া যায়, তাহলে মন্দ হয় না। নিঃসন্দেহে সমস্যার সমাধান হবে।
পরম্পরাগত অথবা মডিউলার কিচেন, যাই হোক না কেন, রান্নাঘর পরিষ্কার এবং ব্যবহারযোগ্য রাখতে হবে।
বিভিন্ন কৌটোতে জিনিস গুছিয়ে রাখুন। যে-কৌটোতে যে-জিনিস থাকে এবং যে-জায়গায় রাখা থাকে, প্রতিবারই সেই একই নিয়ম মেনে চলুন।
কৌটো বা বোতল, যাই ব্যবহার করুন না কেন, ব্যবহারের পরেই পরিষ্কার করে তবেই জায়গায় রাখুন। কালকের জন্যে ফেলে রাখবেন না, তাহলেই একসঙ্গে পরিষ্কার করতে হলেই করার ইচ্ছে থাকবে না।
কিচেন পরিষ্কার রাখার জন্যে কাগজের কিচেন ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারেন। কাপড়ের ন্যাপকিন ধুয়ে শুকোবার ঝামেলা থেকে মুক্তি।
রান্নাঘরের যা-যা জিনিস ফুরোল, সেগুলো একটা নোটবুকে লিখে লিস্ট তৈরি করুন তখনই। এরফলে মনে রাখার ঝামেলা থাকবে না এবং দোকানে গেলে লিস্ট মিলিয়ে কিনতেও সুবিধা হবে।
ডাল, মশলা, রান্নাঘরের এমন আরও জিনিস কৌটোতে ঢেলে রাখার পরেও অনেক সময় প্যাকেটে কিছুটা বেঁচে থাকে। ঢেলে রাখার পরে আলাদা আলাদা প্যাকেটের মুখ ভালো করে বেঁধে আলাদা একটি দেরাজে গুছিয়ে তুলে রাখুন। দরকার পড়লে সহজেই বার করে নিতে যাতে অসুবিধা না হয়।
প্রয়োজন অনুসারে রান্নাঘরে জিনিস রাখুন। রান্নাঘরকে স্টোররুম করে তুলবেন না।
ছুটির দিনে সারা সপ্তাহের বাজার করে ফ্রিজে গুছিয়ে তুলে রাখুন। সময় থাকলে, কিছু সবজির খোসা ছাড়িয়ে একদম কেটে জিপব্যাগে ভরে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন।
ফ্রোজেন স্ন্যাক্স আজকাল বাজারে খুব সহজেই পাওয়া যায়। বাড়িতে অতিথিদের জন্যে কিছু প্যাকেট কিনে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। অল্প সময়ে সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করতে পারবেন।
ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এবং ডিনারে কী রান্না হবে তা আগের রাতেই ঠিক করে রাখুন। প্রয়োজনমতো জিনিস আছে কিনা তাও চেক করে নিন আগের রাতেই।
রোজের রান্নায় পেঁয়াজ, আদা, রসুনের ব্যবহার করার দরকার পড়েই। রোজ এগুলো বাটার ঝঞ্ঝাটের হাত থেকে রেহাই পেতে, এগুলোর পিউরি বানিয়ে রাখলে অনেক সুবিধা হবে। 250 গ্রাম রসুনের সঙ্গে 100 গ্রাম আদা এবং 14 কাপ ভিনিগার মিশিয়ে পিউরি বানিয়ে নিন। টম্যাটো পিউরির জন্যে 1 কিলো টম্যাটো, 2টি বড়ো পেঁয়াজ, 10 কোয়া রসুন, কয়েটি লবঙ্গ এবং এলাচ ও 1 টুকরো দারচিনি প্রেশারে দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। একসঙ্গে সব মিক্সি করে এয়ারটাইট কৌটোয় ভরে ফ্রিজে তুলে রাখুন। গ্রেভি অথবা শুকনো তরকারি বানাতে এবং তা সুস্বাদু করে তুলতে এর থেকে সুবিধা আর কিছুতেই হতে পারে না। রান্নার জন্যে সময়ও খুব অল্প লাগবে।
রান্নাঘরের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করতে হলে রান্নাঘরকে হাইটেক বানান। আজকাল বাজারে রান্নাঘরের জন্য অনেক আধুনিক বৈদ্যুতিক উপকরণ কিনতে পাওয়া যায়। এইসব ব্যবহার করতে পারলে রান্নার সময়ও কম লাগবে এবং নানা ধরনের রান্না করে খ্যাতিও অর্জন করতে পারবেন। তবে সাবধানে যত্ন নিয়ে এগুলো ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহারের পর ভালো করে পরিষ্কার করে তুলে রাখতে হবে।
বাড়িতে যদি আভেন, মাইক্রোওয়েভ, ফুড প্রসেসর, রাইস কুকার, ইন্ডাকশন, মিক্সি ইত্যাদি না থাকে, তাহলে ধীরে ধীরে অল্প অল্প টাকা জমিয়ে তা কিনে নেওয়া উচিত। শাড়ি, গয়না ইত্যাদির থেকেও এই জিনিসগুলি অনেক বেশি প্রয়োজনীয়।
রান্নাঘর পরিষ্কার করেই তবে অফিস যান। অফিস থেকে ফিরে পরিষ্কার রান্নাঘর আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে।
রান্নাঘরে পোকামাকড় রোধ করার জন্য তিন মাস অন্তর পেস্ট-কন্ট্রোল করান। আজকাল হার্বাল পেস্ট কন্ট্রোলও শুরু হয়েছে।