তেলুগু ছবি ‘নেনক্কাডিনে’ দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন অভিনেত্রী কৃতি শ্যানন। তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি ছিল ‘হিরোপন্তী’। এই ছবির সাফল্যই বলিউডে পরিচিত করে তাঁকে। সম্মান এবং পুরস্কার দুই-ই পান তিনি। এরপর বক্স অফিস সফল ছবি ‘দিলওয়ালে’, ‘বরেলি কী বরফি’ প্রভৃতি সমৃদ্ধ হয় কৃতির অভিনয়ে। তবে শুধু এইটুকু তথ্য-ই নয়, তাঁর ফিল্মি কেরিয়ার নিয়ে আরও অনেক কিছুই জানালেন কৃতি স্বয়ং।
‘অর্জুন পাতিয়ালা’ ছবিতে সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আপনি। কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন নিজেকে? কার সাহায্য নিয়েছিলেন?
এই ছবির চরিত্রের জন্য কাউকে রোল মডেল বানাতে হয়নি। কারণ, ছবির বিষযও সিরিয়াস নয় এবং সাংবাদিকতার বিষয়টিও সিরিয়াস ছিল না। ফিরোজপুরের ক্রাইম রিপোর্টার-এর চরিত্রটি খুবই মজাদার। ছোটো শহরে মিডিয়া রিপোর্টিং কেমন হয়, তারই প্রতিফলন দেখতে পাবেন এই ছবিতে। আমি যখন চণ্ডীগড়-এ ছিলাম, তখন আমি রিপোর্টার-দের কাজকর্ম কিছুটা দেখেছি। ওদের কথা কিছুটা মাথায় রেখে কাজ করেছি এই ছবিতে।
এই ছবিতে আপনি এক লড়াকু মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আসল জীবনেও কি আপনি এরকমই?
আমি সবসময়ই খুব স্ট্রং নেচার-এর। আমার বিচার-বিবেচনাও বেশ স্ট্রং। যুক্তি ছাড়া কোনও কাজ করি না আমি। ঠিক-বেঠিক বিচার-বিবেচনা করে তবেই কাজ করি। অন্যায় দেখলে আমি ঠিক থাকতে পারি না, প্রতিবাদ করি।
হালকা কমেডি চরিত্রে আপনি অভিনয় করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। কীভাবে এইসব কমেডি চরিত্রগুলিকে এত আকর্ষণীয় করে তোলেন?
পরিচালকের নির্দেশ মতো কাজ করি আমি। অবশ্য আমার যদি মনে হয়, চরিত্রটিকে আরও সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য কিছু যোগ করার দরকার, তখন আমি পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করি। কোনও চরিত্র যাতে দুর্বল মনে না হয় দর্শকদের, সেই ভাবনা আমার মাথায়ও রাখতে হয়। আসলে, কমেডি হল পারফেক্ট রি-অ্যাকশন। সহ-অভিনেতার সংলাপের পর যথাযথ রি-অ্যাকশন-ই দর্শকদের আনন্দ দেবে। তাই, মজাদার সংলাপের সঙ্গে সঠিক এক্সপ্রেশন দিয়ে কমেডি অ্যাম্বিযে্স ক্রিয়েট করার চেষ্টা করি আমি। তবে, ছবিতে যতটা মজাদার চরিত্রে আমাকে দেখেছেন, রিয়েল লাইফ-এ ততটা প্রাণোচ্ছল নই আমি। তাই হয়তো কমেডি চরিত্রে অভিনয় করে এত আনন্দ পাই।
একই বছরে আপনি অনেকগুলি ছবিতে অভিনয় করেছেন। কতটা খুশি এরজন্য?
মোট পাঁচটি ছবিতে অভিনয় করেছি একই বছরে। লুকাছুপি, কলঙ্ক, অর্জুন পাতিয়ালা, হাউসফুল ৪ এবং পানিপথ একই বছরের ছবি। একই বছরে এতগুলি ছবি দর্শকদের উপহার দিতে পেরেছি, এটা খুবই আনন্দের বিষয় আমার কাছে। আর আমার আশা, মিমি,হাম দো হামারা দো,বচ্চন পাণ্ডে,আদিপুরুষ,শাহজাদা,ভেদিয়াঁ,গনপথ ছবিগুলিও আমার কেরিয়ারের সাফল্যাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
কোনও ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হওয়ার আগে কী কী বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেন?
চিত্রনাট্য শুনে আকর্ষণীয় লাগলে তবেই অভিনয় করতে রাজি হই আমি। আর যখন চিত্রনাট্য শুনি, তখন আমি নিজেকে দর্শকের আসনে বসিয়ে নিই। তখন পুরো ছবির চিত্রনাট্য যেমন গুরুত্ব পায় আমার কাছে, তেমনই আমার জন্য বরাদ্দ চরিত্রটাও দর্শকদের ভালো লাগবে কিনা, সেই ভাবনাও আমার মাথায় থাকে। কারণ, এটা মনে রাখা দরকার যে, আজকের এই ডিজিটাল দুনিয়ায়, মুঠো ফোনে ভালো ভালো ছবি দেখার সুযোগ পাওয়া দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটা তখনই দেখবেন, যখন ছবিটার মধ্যে ভালোলাগার রসদ থাকবে। আর ছবিটা ভালো কিনা, তা দর্শকমুখে প্রচারিত হয়ে যায় ছবিটা মুক্তির দু-তিন দিনের মধ্যে। অতএব, সাফল্য ধরে রাখার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত জরুরি।
বাবা, কাকা, মামা, মা, মাসি কেউ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে না থাকা সত্ত্বেও, আপনি পাঁচ বছরের মধ্যে এতটা সুযোগ এবং সাফল্য পেয়েছেন। কী বলবেন এই প্রসঙ্গে?
আমি যা পেয়েছি, তার জন্য আমি সন্তুষ্ট। এমন একটা সময় ছিল যখন আমি কোনও পার্টিতে যেতে কিংবা স্টেজ-এ উঠতেই লজ্জা পেতাম। সেই লাজুক মেয়েটি কখনও অ্যাক্টিং কেরিয়ার সফল করতে পারবে, এটা আমার মা-বাবাও ভাবতে পারেননি। কারণ, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অভিধানে লজ্জা শব্দটাই নেই। পারিবারিক কোনও ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা সত্ত্বেও যে আমি এতদূর পৌঁছোতে পেরেছি, এটা আমার কাছেও অভাবনীয়। নির্মাতা, নির্দেশকরা আমার উপর আস্থা রেখে অভিনয়ে সুযোগ দেওয়ার জন্য তাঁদের কাছে যেমন কৃতজ্ঞ, ঠিক তেমনই দর্শকদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। প্রতিটা ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে আমি অনেককিছু শিখেছি। তবে কাজের চাপে কিছু ছবির অফার অ্যাকসেপ্ট করতে পারিনি বলেও দুঃখ পেয়েছি।
সুপারস্টারদের সঙ্গে কাজ করার আগে কতটা উৎসুক থাকেন আপনি?
সুপারস্টারদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পাওয়া সত্যিই সুখপ্রদ এবং শিক্ষণীয়। আসলে ওঁদের সান্নিধ্য পেলে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করা যায়। শাহ রুখ খান এবং অক্ষয় কুমারের সঙ্গে কাজ করে আমি অনেককিছু শিখেছি। তাই আবারও, শাহ রুখ খানের বিপরীতে থেকে একটা রোমান্টিক ছবিতে অভিনয় করার খুব ইচ্ছে আছে আমার। কারণ, রোমান্টিক চরিত্র খুব ভালো করেন শাহ রুখ।
রূপচর্চায় কতটা সময় ব্যয় করেন আপনি?
উইদাউট মেক-আপ এবং পাজামা-কুর্তিতেই বাড়ির বাইরে চলে যাওয়ার অভ্যাস আছে আমার। কিন্তু তা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিকজ, আই অ্যাম অ্যান অ্যাক্ট্রেস। তাই, প্রেজেন্টেবল থাকতেই হয়। এটা কোনও চাপের বিষয় নয়, পেশাগত সৌজন্যরক্ষাও বলতে পারেন। অতএব, রূপচর্চার জন্য কিছুটা হলেও সময় ব্যয় করতে হয় বইকি! (হাসি)