শরীর-স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে বিশেষ সংকল্প অলরেডি নিয়ে ফেলেছেন? কী ঠিক করলেন? নিজেকে ফিট রাখতে কিছু বাড়তি ওজন ঝরাতে হবে, নাকি নিজের হারানো ফিটনেস ফিরিয়ে এনে তাকে মেইনটেন করবেন? এমন নয় তো যে, চট্জলদি ফিট্নেস ফিরে পেতে কিছু শর্টকাট পদ্ধতি ট্রাই করতে শুরুও করে ফেলেছেন?
তাহলে আপনার জানা উচিত, আপনার এই প্রচেষ্টার ফল সুদূরপ্রসারী নয়। সুতরাং বুঝেশুনে এমন চেষ্টা করা উচিত, যাতে ওজন লাগাতার কমার সঙ্গে সঙ্গে সেটা কন্ট্রোলেও থাকে। এই ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে জুম্বা এবং ওয়েট লিফটিং ব্যায়াম।
জুম্বা–র গুরুত্ব
রোগা হওয়ার উপায় হিসাবে, অনেকেই জিম যেতে পছন্দ করেন। কিন্তু জিমে সাধারণত যেসব উপকরণ এবং মেশিন থাকে সেগুলিতে গতানুগতিক ভাবে ওয়ার্কআউট করে যাওয়া তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পছন্দ করেন না। তাঁরা ফিট্নেস পেতে কিছু অন্যরকম চেষ্টা করে দেখতে চান। আর জুম্বা তাদের মনোরঞ্জন করবে সঙ্গে উৎসাহও জোগাবে।
৯০-এর দশকে কলোম্বিয়ান ডান্সার অ্যালবার্তো ‘বেটো’ পেরেজ, জুম্বা ফিটনেস প্রোগ্রাম-টির সূচনা করেন। এটি নাচ এবং অ্যারোবিক এক্সারসাইজের একটি সমন্বয়। দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন ডান্সশৈলীর উপর নির্ভর করে এই জুম্বাশৈলী গড়ে তোলা হয়েছে। এই ওয়ার্কআউট খুব দ্রুত ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে। পায়ের উপর ভর করে হিপহপ এবং সালসার সংমিশ্রিত বিট্স ফলো করে বডি-কে মুভ করাতে হয়।
এই ডান্স সাধারণত ভরপুর এনার্জির সঙ্গে দল বেঁধে করা হয়ে থাকে এবং এর মূল লক্ষ্য হল ফিট্নেস কায়েম রাখা। জুম্বা যেহেতু খুব দ্রুতগতির ওয়ার্কআউট, তাই ট্রেডমিল অথবা ক্রসট্রেনার-এর চাইতে অনেক তাড়াতাড়ি ফ্যাট বার্ন করতে সক্ষম।
ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ে : কার্ডিওভাস্কুলার এক্সারসাইজের খুব ভালো বিকল্প হল জুম্বা। দ্রুত এবং মধ্যম গতিতে এই এক্সারসাইজটি করতে হয় এবং ইন্টারভাল ট্রেনিং-এর মতো কাজ করে। ফলে শরীরের সমস্ত মাংসপেশি, বিশেষ করে পিঠ এবং পেটের জন্য খুব লাভদায়ক। জুম্বা-য় ব্যবহৃৎ জটিল মুভমেন্ট, শরীরের মাংসপেশির ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ায়, শরীরকে ব্যালেন্সড রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও শক্তিতে ভরপুর এই ওয়ার্কআউটের আর একটা লাভ হল— শরীরের সমস্ত মাংসপেশিকে সক্রিয় রেখে শরীর ফিট রাখতে সাহায্য করে। যে-কোনও বয়সেই এই এক্সারসাইজ-টি করা যেতে পারে। কারণ, শরীরের জয়েন্টের উপর এর প্রভাব খুব কম পড়ে। ফিট থাকার জন্য ৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সি যে-কোনও ব্যক্তি জুম্বা প্রাকটিস করতে পারে।
ওয়েট ট্রেনিং
ওজন কমাবার জন্য ওয়েট ট্রেনিং-ও একটি খুব ভালো বিকল্প। বডিবিল্ডার্সরাই আগে এই নিয়ে চর্চায় থাকতেন। অনেকেরই ধারণা ওয়েট ট্রেনিং খালি পেশি বানাতেই সাহায্য করে। তাই অনেকেই ওজন কমাবার জন্য ওয়েট লিফটিংকে গুরুত্ব দেন না। বদলে কার্ডিয়ো এবং ক্যালিসথেনিক্স ওয়ার্কআউট প্র্যাকটিস করেন।
শরীরের শক্তি অটুট রেখে, ওজন কমাতেও পূর্ণ সহায়তা করে এই ব্যায়াম। গতানুগতিক ভাবে স্ট্রেংথ ট্রেনিং-এর ক্ষেত্রে সহ্যশক্তি এবং মাংসপেশি বাড়াবার জন্য ফ্রি ওয়েট অথবা ওয়েট মেশিন ব্যবহার করা হয়। মেটাবলিক স্ট্রেংথ ট্রেনিং-এর ক্ষেত্রে উচ্চ তীব্রতা-যুক্ত ইন্টারভাল সার্কিটস এবং চেঞ্জিং কম্বিনেশনের সঙ্গে ফ্রি ওয়েটস, ক্যাটলবেলস, ডাম্বল ইত্যাদি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করা হয়।
ওয়ার্কআউট-এর সময় রেসিস্ট্যান্স ব্যান্ডস, মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে দেয়। কার্ডিয়ো ট্রেনিং-এর ক্ষেত্রে কেবল ওয়ার্কআউটের সময় হৃদয়ের গতি এবং ফুসফুসের ক্ষমতা বেড়ে যাওয়াতে ক্যালোরিজ বার্ন হয়ে যায়। অথচ ওয়েট ট্রেনিং-এ ব্যায়াম শেষ হয়ে যাওয়ার ৭২ ঘন্টা পরেও ক্যালোরি বার্ন হতে থাকে। এটি শরীরের মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে সারাদিন দ্রুত ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে।
ওজন কমিয়ে শরীরকে মজবুত করে : ওয়েট লিফটিং শুধু ওজনই কমায় না, শরীরের পেশি মজবুত করার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ডেনসিটি (ঘনত্ব) বাড়াতেও সাহায্য করে। ফলে অস্টিয়োপোরোসিস-এর মতো কিছু অসুখ রোধ করা যেতে পারে। নিয়মিত ওয়েট লিফটিং করলে ডায়াবিটিজ হওয়ার ভয় কমে যাবে এবং পিঠের ব্যথায় আরাম পাওয়া যাবে। মানসিক শক্তি বাড়ে এবং কাজে উৎসাহ পাওয়া যায়।
সুতরাং ফিটনেস-এর জন্য জুম্বা অথবা ওয়েট ট্রেনিং, যেটাই বাছুন না কেন, এই দুটো ওয়ার্কআউট-ই ফিটনেস-এর লক্ষ্যে পৌঁছোতে আপনাকে সাহায্য করবে। ওজন কম করতে অথবা মাংসপেশি শক্তপোক্ত করে তুলতে, এই দুটো পন্থাই খুবই কার্যকরী। সুতরাং আপনি তৈরি হয়ে নিন নতুন বছরে কিছুটা ঘাম ঝরাবার জন্য।