সারাবছরই মহিলারা তাদের সৌন্দর্যের ব্যাপারে অতি সচেতন। উৎসব, অনুষ্ঠান, পার্টি, অফিস কিংবা কলেজ– যেখানেই যান না কেন, নিজেকে প্রেজেন্টেবল করে তুলতে হবে। সেই দৌড়ে ত্বক আর চুলের চাকচিক্য একটা বড়ো ভূমিকা গ্রহণ করে। তবে মহিলারা বরাবরই তাদের চুলের ব্যাপারে একটু বেশিই যত্নশীল। একরাশ ঘন কালো চুলের কনসেপ্ট বদলালেও, বদলায়নি চুলকে নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা এবং নানান হেয়ারস্টাইল করার হিড়িক। আর সময়ের সঙ্গে পা মেলাতে রকমফের স্টাইলিং করতে গিয়েই যত বিপত্তি।

বিশেষ করে উৎসবের সময়ে চুলে মানানসই শেপ দিতে ব্যবহার করা হয় নানা প্রকারের ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপকরণ, স্ট্রেটনার, ড্রায়ার, ব্লোয়ার এবং অ্যালকোহল জাত স্প্রে। তাছাড়া বায়ুদূষণ, ধুলো, ময়লা এবং রোদের আলট্রাভায়োলেট রে-র প্রকোপ তো রয়েইছে। ফলস্বরূপ চুল হয়ে উঠছে নিষ্প্রাণ, জেল্লাহীন। শুধু তাই নয় অতিরিক্ত জেল বা বারবার চুল কালার করার ফলে চুল সাদা হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অ্যালোপেসিয়া-রও শিকার হচ্ছেন কিছু কিছু মহিলা। এমনকী টাক পড়ার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। যদি স্ট্রেটনার, ড্রায়ার, ব্লোয়ার বা রাসায়নিক জাতীয় উপকরণ ব্যবহার করতেই হয়, সেক্ষেত্রে কিছু বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন আবশ্যক।

দেখভাল করার উপায়:

  • চুল ভালো রাখার প্রথম শর্তই হল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। যদি আপনি নিয়মিত চুল না পরিষ্কার করেন সেক্ষেত্রে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়বে এবং অতিমাত্রায় হেয়ারস্টাইলিং উপকরণের ব্যবহার সেই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেবে। তাই চুল সুস্থ রাখতে হলে ডিপ কন্ডিশনিং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তত্ত্ব। এতে নিষ্প্রাণ, শুষ্ক চুলও সুরক্ষিত থাকবে এবং জৌলুষ ফিরে পাবে।
  • ভিটামিন এ, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, প্রোটিন এবং ক্যালশিয়ামের মতো সাপ্লিমেন্টস্, চুলের জন্য দারুণ উপযোগী। যদি আপনার চুল পাতলা হতে শুরু করে, তাহলে অবিলম্বে ভালো কোনও ডার্মাটোলজিস্ট-এর পরামর্শ নিন।
  • ড্রায়ার যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। বরং প্রথমে ভিজে চুলে তোয়ালে জড়িয়ে জল টানিয়ে নিন। বাকিটা পাখার হাওয়ায় শুকোন। সময়ের অভাবে যদি ড্রায়ার ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকানোর আগে অ্যালোভেরা জেল অবশ্যই লাগান। যে-কোনও অন্য জেল যেখানে স্টাইল বদলানোর জন্য আদর্শ, সেখানে অ্যালোভেরা জেল স্টাইলিং-এর পাশাপাশি সুরক্ষাও প্রদান করে।
  • ব্লোয়ার ব্যবহারের ফলে স্ক্যাল্পের রোমছিদ্র খুলে যায়। যার কারণে ধুলো-ময়লা অনায়াসেই প্রবেশ করে চুলের গোড়া দুর্বল করে তোলে।
  • অ্যালকোহল অথবা অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক স্টাইলিং প্রোডাক্টস্-ও চুলের ক্ষতিসাধন করে। সম্ভব হলে এসব এড়িয়ে প্রাকৃতিক উপকরণেই ভরসা রাখুন।
  • হেয়ার কালারের ব্যাপারে কমবেশি সকলেরই দুর্বলতা রয়েছে। কিন্তু মনে রাখবেন অ্যামোনিয়া কিংবা সিলিকন যুক্ত কালার আর অ্যালকোহল যুক্ত কালার চুলের জন্য মোটেই যথোপযুক্ত নয়। কারণ এর ব্যবহারে খুশকি, চুলকুনি এমনকী চুল পড়ার মতো সমস্যার কবলেও পড়তে হয়।
  • চুলের পুষ্টির কথা খেয়াল রাখুন। এর জন্য নিয়মিত স্ক্যাল্প এবং চুলে ঈষদুষ্ণ অলিভ অয়েল, নয়তো নারকেল তেল দিয়ে মাসাজ করুন। এতে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখবেন, অতিরিক্ত তেলও চুলের ক্ষতিসাধন করতে পারে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহে একদিনই তেলের ব্যবহার যথোপযুক্ত। সারারাত মাথায় তেল লাগিয়ে রাখার দরকার পড়ে না, ২-৩ ঘন্টাই যথেষ্ট। সঙ্গে মিনিট দশেক হালকা মাসাজ করতে পারলেই বাজিমাত।
  • চুলের গ্রোথের জন্য স্টেম সেল থেরাপি, পেপ্টাইড থেরাপি, এলইডি থেরাপি এবং রিজুভিনেশন অরেঞ্জ লাইট থেরাপি দারুণ কার্যকর। এগুলি চুলে পুষ্টির যোগান দেওয়ার পাশাপাশি, খুশকি তথা অন্যান্য সমস্যার থেকে চুলকে সুরক্ষিত রাখে।
  • ডিমের সাদা অংশ, দই, হেনা প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদান চুল-কে কন্ডিশনিং করতে সাহায্য করে। এর ব্যবহারে নিষ্প্রাণ, শুষ্ক চুলও হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত।
  • পুষ্টিকর খাবার খান। কারণ এই খাবারের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে আপনার চুলের স্বাস্থ্য। ডিম, চিকেন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো প্রোটিন-যুক্ত আহার, আর মাছ, বাদাম, আখরোটের মতো আয়রন-যুক্ত খাবার এবং গাজর আর ডাল খান প্রচুর পরিমাণে। যার মধ্যে অধিক মাত্রায় রয়েছে ভিটামিন এবং ফলিক অ্যাসিড। এগুলি মেনে চললেই আপনার চুল সুস্থ এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকবে।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...