নানা জাতি, সম্প্রদায়, বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ জুড়ে আমাদের এই দেশ। তার মধ্যে হই-হুল্লোড়, চারপাশে ভিড়, দূষণের চোখরাঙানি আর সবথেকে ভযংকর করোনার দাপট এইসব থেকে বাচ্চাকে সুরক্ষিত রাখতে অভিভাবকদের কিছুটা সতর্কতা মেনে চলতে হবে।

করোনার দীর্ঘ প্রভাব কাটিয়ে উঠে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে আমাদের দেশ। চারপাশে উচ্ছ্বাসের ঢল, হইচই, খুশির স্রোতে ভেসে চলা। স্কুল কলেজ অফিস রেস্তোরাঁ সব কিছুই আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে। কিন্তু দুবছর ধরে সকলের জীবনশৈলীতেই বেশ একটা বড়ো পরিবর্তন এসেছে। আনন্দ উচ্ছ্বাসে সামান্য হলেও ভাটা পড়েছে। করোনার থাবা সরাসরি বসে গেছে মানুষের আনন্দ উদযাপনের মানসিকতার উপর।

এই সংকট বড়োদের সঙ্গে বাচ্চদের উপরেও প্রভাব ফেলেছে। বাচ্চারা এতদিন হয়ে পড়েছিল গৃহবন্দি। এর ফলে বাচ্চাদের মধ্যেও অবসাদের বীজ বপন হয়েছে। করোনার টীকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বড়োরা এই সুবিধা গ্রহণ করে অনেকটাই সংকট মুক্ত হয়েছেন। তারা সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করে স্বাভাবিক জীবনের আনন্দে শামিল হচ্ছেন। বাচ্চাদের স্কুলে স্কুলেও এই টীকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু বাচ্চাদের ঝুঁকি এখনও পুরোপুরি কমেনি। কারণ করোনার টীকাকরণ প্রক্রিয়ার আওতায় বহু বাচ্চারা এখনও পড়েনি।

বর্তমানে করোনার তৃতীয় ঢেউ আমরা কাটিয়ে উঠেছি সাফল্যের সঙ্গে। শিশুদের উপর হওয়া ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ফলাফলও হাতে পেয়ে গেছে সারা বিশ্ব। সুতরাং নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাচ্চাদের সুরক্ষা দেওয়ার Safety of children দাযিত্ব পুরোপুরি অভিভাবকদের।

বছরের শুরু থেকে শেষ অবধি নানা উৎসব চলে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এতদিন এই আনন্দঅনুষ্ঠান গুলো থেকে মানুষ বঞ্চিত থেকেছে। কিন্তু আর গণ্ডিবদ্ধ হয়ে থাকতে মানুষ চাইছে না। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া দোল এবং হোলির মাতামাতিই এই বার্তা বহন করছে। আসতে চলেছে বাঙালির নতুন বছরের উন্মাদনা। নতুন পোশাক, এলাহি খাওয়াদাওয়ার আয়োজন সবই পরিকল্পনায় রয়েছে। সুতরাং বড়োদেরও উচিত নিজেদের সঙ্গে বাচ্চাদেরও শামিল করা। সুতরাং তাদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না করে, প্রাণঘাতী সংক্রমণ থেকে আগলে রাখতে বড়োদের বিশেষ কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে।

সর্বপ্রথম মনে রাখতে হবে, যে বাচ্চারা এখনও বাইরে যেতে আরম্ভ করেনি তারাও বাইরের সংক্রমণের শিকার হতে পারে কারণ বড়োরা যেহেতু বাইরে বেরচ্ছেন তাই বাড়ির বড়োরাই সংক্রমণের বাহক হতে পারে। দুবছর বয়সের ঊর্ধ্বে সব বাচ্চাদেরই মাস্ক পরানো উচিত। একত্রে অনেকে মিলে খেলাধুলা করতে না দেওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো উচিত।

বাচ্চারা নানা কারণে জ্বরে পড়ে। হালকা জ্বর, সর্দি-কাশি, নাক দিয়ে জল পড়া, গলা ও সারা শরীরে ব্যথা, বমি ভাব, পেট জ্বালা, পাতলা পায়খানা, ক্লান্তি এগুলি বাচ্চাদের খুব কমন লক্ষণ। সাধারণত ডাক্তাররা এর জন্য জ্বরের ওষুধ দিয়ে থাকেন। বাড়ির বড়োদের উচিত বাচ্চার মধ্যে এই ধরনের লক্ষণ ফুটে উঠলে বাড়িতে থেকে ২-৩ দিন তাদের পর্যবেক্ষণ করা।

যে-কোনও ভাইরাস সাধারণত জলবাহিত বা বাযুবাহিত। জল ফুটিয়ে খাওয়ানো উচিত বা ফিল্টারড জল, বাইরের যে-কোনও পানীয় না দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। এ ছাড়া সর্বসাধারণের জন্য যেসব খেলার মাঠ বা পার্ক রয়েছে সেখানে বাচ্চাদের না পাঠানোই ভালো এবং প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোনোও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। তবে উৎসব অনুষ্ঠানে একান্তই বাইরে নিয়ে যেতে হলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ২ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে বাচ্চাদের পাবলিক প্লেসে এবং বাড়িতে বাইরের লোকজন এলে, মাস্ক পরিয়ে রাখা উচিত। একইসঙ্গে ছ’ফুটের দূরত্বও মেনে চলাটা একান্ত বাঞ্ছনীয়।

যদি কোনও শিশু সংক্রমিত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠে তাহলে তার প্রতিরোধ ক্ষমতা মোটামুটি ছয় থেকে দশ মাস পর্যন্ত স্থাযী হবে। শিশুর মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে ব্যালেন্স ফুড, পুষ্টিকর, আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া উচিত। এছাড়াও মাল্টি ভিটামিন এবং অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রিযেনট বাচ্চাদের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, খেলাধুলো এবং পর্যাপ্ত ঘুম-সহ সুষম জীবনযাত্রা বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সরাসরি সহায়তা করে।

জ্বর হলে কী করতে হবে

  • বাচ্চার ঘরটি ঠান্ডা রাখুন
  • গরমে একগাদা ভারি পোশাক পরিয়ে রাখবেন না, সুতির হালকা পোশাক পরান
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে তাকে তরল খাওয়ান। যেমন জল, টাটকা ফলের রস, ডাবের জল, ইলেক্ট্রলের জল ইত্যাদি
  • নিশ্চিত করুন যেন সে অত্যধিক পরিশ্রম না করে
  • ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়াতে থাকুন।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...