ট্র্যাডিশনাল কাঁথা ব্যবহারের বদলে, মায়েরা বাচ্চাকে এখন ডায়াপার কিংবা ন্যাপি পরিয়ে রাখেন। কিন্তু বাচ্চার কমফর্ট-টা এতে ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, সেটাও খেয়াল রাখা দরকার। তাই বুঝেশুনে ন্যাপির নির্বাচন করুন। ন্যাপি কেনার সময় দেখে নিন যাতে সেটার ফিটিং আপনার শিশুর মনমতো হয়। এর শোষণ ক্ষমতা যেন ভালো হয় এবং এর স্পর্শ যেন আপনার শিশুর কোমল ত্বকের পক্ষে উপযুক্ত হয়। ডায়াপার ইউজ অ্যান্ড থ্রো আইটেম। কিন্তু ন্যাপি কেচে নিয়ে আবার ব্যবহার করা যায়।
যে-ঋতুই হোক, কটন বা লিনেনের ন্যাপি সবচেয়ে ভালো। এর শোষণ ক্ষমতাও যেমন ভালো, অন্যদিকে এর নরম স্পর্শের কারণে শিশুর ত্বক ছড়ে যায় না। ডিসপোজেবল ডায়াপারের পাশাপাশি বাড়িতে তৈরি এই ধরনের কাপড়ের ন্যাপিও ব্যবহার করতে পারেন, বাচ্চার আরাম হবে এতে।
ন্যাপি কেনার আগে
শোষণ ক্ষমতা – ন্যাপির শোষণ ক্ষমতা ভালো হলে, বাচ্চার ড্রাই ফিল হবে। মলমূত্র ত্যাগের পর অস্বস্তি হবে না।
মোলায়েম – শিশুর ত্বক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাই ন্যাপি মোলায়েম হওয়া আবশ্যক।
ওয়েটনেস ইন্ডিকেটর – ওয়েটনেস ইন্ডিকেটর বস্তুত ন্যাপির উপর দেওয়া একটি রঙিন রেখা, যেটা ন্যাপি ভিজে গেলেই হলুদ থেকে রং পরিবর্তন করে নীল হয়ে যায়। ফলে মা বুঝতে পারেন, ন্যাপি বদলানোর সময় এসেছে।
কোন ন্যাপি ভালো – কোন ন্যাপি ব্যবহার করবেন, তা নিয়ে মায়েরা প্রায়শই চিন্তায় পড়েন। অজস্র ব্র্যান্ডেড ডায়াপার বাজারে আছে। কিন্তু সেগুলো ব্যয় সাপেক্ষও বটে। তাই বাড়িতে থাকলে বাচ্চাকে কাপড়ের ন্যাপি পরান। আর বাইরে নিয়ে বেরোলে ডায়াপার। কটন ন্যাপিতে অনেক হালকা আর আরামদায়ক অনুভূতি হবে বাচ্চার। রাতে অবশ্য ডায়াপার-এর উপর নির্ভর করাই ভালো, তাহলে বারবার ঘুম থেকে উঠে মা-কে ন্যাপি চেঞ্জ করার ঝামেলা পোহাতে হবে না।
ন্যাপি র্যাশেস – লাগাতার ডায়াপার ও ন্যাপি ব্যবহার করার কারণে বাচ্চার কোমল ত্বক ছড়ে যায়। ন্যাপি র্যাশ-এর অন্যতম ফল। সেই সব জাগয়া, যেগুলি ভাঁজ হয়, সেখানেই বেশি র্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও কিছু কারণে র্যাশ হতে পারে যেমন, কষে বাঁধা থাকলে, বা ডিটারজেন্ট দিয়ে কাচার পর পরিষ্কার জলে ভালো ভাবে না ধোওয়ার কারণে। বাচ্চারা ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হলে বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পড়লেও অনেক সময় র্যাশ হয়।
র্যাশেস থেকে বাঁচাতে – শিশুকে র্যাশ-এর সমস্যা থেকে সুরক্ষিত রাখতে মাঝে মাঝে ন্যাপি খুলে রেখে উন্মুক্ত রাখুন, যাতে হাওয়া চলাচল করে। পাউডার দিন। ভিজে ন্যাপিতে বাচ্চাকে বেশিক্ষণ রাখবেন না। প্রত্যেকবার ন্যাপি চেঞ্জ করার সময়, হালকা গরম জলে নরম কাপড় বা তুলো ডুবিয়ে বাচ্চার শরীরের ওই অংশটি মুছে দিন।
র্যাশ হলে ঘরোয়া প্রতিকার
- এই র্যাশ সিরিয়াস কোনও সমস্যা নয়। আপনি বাড়িতে বসেই এটার সমাধান করতে পারেন
- র্যাশ-এর উপর অ্যালোভেরা জেল লাগান
- কিছুক্ষণ করে ন্যাপি ছাড়া রাখুন বাচ্চাকে, যাতে র্যাশ শুকিয়ে যায়
- র্যাশ-এর উপর পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে দিন
- ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করুন ন্যাপি চেঞ্জ করার পর
খেয়াল রাখুন
- বাচ্চাকে হালকা গরম জলে, মাইল্ড সোপ দিয়ে স্নান করাবেন
- কটনের মোলায়েম টাওয়েল দিয়ে গা মুছে দিন। শরীর পুরোপুরি শুকনো করে মুছে, তারপর জামা পরান
- ভিজে ন্যাপি সঙ্গে সঙ্গে বদলান। ডায়াপারও ৪ ঘণ্টা অন্তর বদলানো উচিত
- দিনে অন্তত ৪ ঘণ্টা বাচ্চাকে ন্যাপি ছাড়া উন্মুক্ত রাখুন যাতে ঢাকা অংশটি হাওয়া পায়
চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নেবেন
- ন্যাপি ভিজে থাকলে শুধু র্যাশ-ই না, অনেকরকম ইনফেকশনের সমস্যাও হয়। তাই ন্যাপি চেঞ্জ করার পর সমস্ত স্থানটি কিছুক্ষণের জন্য উন্মুক্ত রেখে, তারপর নতুন ন্যাপি পরান
- ন্যাপি চেঞ্জ করার সময়, বাচ্চাকে এক হাত দিয়ে তুলে কোমরের নীচ থেকে ন্যাপিটা খুলে নিন। নোংরা ন্যাপি যেন বাচ্চার শরীরের অন্যান্য অংশ স্পর্শ না করে
- ন্যাপি মোটা করার জন্য কটন প্যাডিং করে দিতে পারেন
- পরিষ্কার করার সময় নরম টাওয়েল দিয়ে আলতো করে মুছুন। রগড়াবেন না
- ন্যাপি পরানোর সময় অর্ধেকাংশ বাচ্চার কোমরের নীচে রেখে, সামনের অংশ ঢেকে ন্যাপি বাঁধুন
- ন্যাপি বদলানোর পর মায়ের ভালো করে হাত ধোওয়া ও স্যানিটাইজ করা জরুরি
- ন্যাপি বদলানোর সময় বাচ্চার পা এমন ভাবে তুলুন যাতে ওর বেকায়দায় চোট না লাগে
- ন্যাপির বন্ধন বেশি টাইট করবেন না
- সদ্যজাতদের নাভি উন্মুক্ত রাখুন। এতে ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকোবে
ন্যাপি ধোওয়ার টিপস
ডিসপোজেবল ডায়াপার ধোয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু বাড়ির তৈরি বা বাজার থেকে কেনা কাপড়ের ন্যাপি রি-ইউজ করা যায়। তাই এগুলি পরিষ্কার করার সময় কিছু নিয়ম মেনে চলুন।
- ন্যাপি হালকা গরম জলে, মাইল্ড ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নেবেন
- সুগন্ধী-যুক্ত ডিটারজেন্ট ব্যবহার না করাই ভালো। এতে র্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
- বেশি নোংরা হয়ে যাওয়া ন্যাপি, কিছুক্ষণ ঠান্ডা জলে ডুবিয়ে রেখে, তারপর কাচুন।
- ফ্যাব্রিক সফটনার ব্যবহার না করাই ভালো। এর থেকে বাচ্চার ত্বকের সমস্যা হতে পারে।
- ন্যাপি ধোয়ার পর ভিনিগার মেশানো জলে একবার ডুবিয়ে নিন। তারপর আবার ঠান্ডা জলে ধুয়ে শুকোতে দিন।