দুনিয়াটা বদলে যাচ্ছে। আমরাও পালটে যাচ্ছি খুব দ্রুত। পুরোনো মূল্যবোধগুলো ভেঙেচুরে গড়ে নিচ্ছি নতুন করে। সামাজিক, অর্থনৈতিক গঠনের পরিবর্তন হচ্ছে। একান্নবর্তী পরিবারের জায়গা দখল করে নিচ্ছে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। তবু, এদেশে এখনও, ‘পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহি পরমন্তপঃ’ আর ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সি।’ তাই পুত্র-সন্তান, বিয়ের পরেও বৃদ্ধ মা-বাবার সঙ্গে এক বাড়িতে বাস করতে পারে, তাতে চোখ কপালে ওঠে না। শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ছেলের বউটিও মিলেমিশে সংসার করে। তবু রান্নাঘরে একসঙ্গে রাখা বাসনের মধ্যে যেমন ঠোকাঠুকি লেগেই থাকে, তেমনই শাশুড়ি-বউমা’র সম্পর্কেও মনোমালিন্য অত্যন্ত সাধারণ একটি ব্যাপার। তাই একসঙ্গে থাকতে হলে, সাংসারিক জীবনে সহজতার ছোঁয়া বজায় রাখতে হলে মেনে চলতে হবে কিছু জরুরি বিষয়। শাশুড়ি-বউমার টক-ঝাল Relationship যদি থাকে তবেই আসবে ভালোবাসার রোমাঞ্চ।

নতুন বউমাকে স্বাগত জানান প্রাণখুলে

ছেলের বিয়ে প্রেমঘটিত হোক অথবা সম্বন্ধ করে, পুত্রবধূকে প্রাণখুলে স্বাগত জানান। যদি কোনও কারণে বউমাটিকে আপনার পছন্দ না-ও হয়, সে’কথা নিজের মধ্যে রাখাই ভালো। প্রকাশ্যে আনবেন না। মনে রাখবেন, ভালোবাসা দিলে তবেই ভালোবাসা পাওয়ার প্রত্যাশা রাখতে পারেন। শ্রদ্ধা আর সম্মানও অর্জন করতে হয়, বাজারে বিক্রি হয় না।

বউমাকে মানিয়ে নিতে সময় দিন

আপনার বউমাটি অন্য একটি পরিবার থেকে আপনাদের পরিবারে এসেছে, তাই চেষ্টা করুন সে যেন স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। স্বামীর সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করার এই মুহূর্তটিতে তার যেন নিজস্ব একটি ঘর থাকে, যেখানে সে আর তার স্বামী একটু একা হয়ে পরস্পরের সান্নিধ্য উপভোগ করতে পারবে। সাজানো ঘর, দেয়ালে নতুন রং, জানলা-দরজায় নতুন পর্দা, জামাকাপড় ও জুতো রাখার কাবার্ড, এই সবই বউমাকে পরিবারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে করাতে সাহায্য করবে। সে নিজেকে অপাঙক্তেয় ভাববে না।

শ্বশুর-শাশুড়ি যেন ছেলে-বউকে একটু নিভৃতে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয়। যৌথ পরিবারের ক্ষেত্রে প্রাইভেসি একটি বড়ো সমস্যা। সমস্যা মেটাতে, ওদের একসঙ্গে সময় কাটানোর মুহূর্ত তৈরি করে দিন। খেয়াল রাখুন, ওদের হানিমুনের ছুটিটা যেন বেশ লম্বা হয়।

বউমাকে ঘরে আটকে রাখবেন না

সিঁথির মোড়ের মুনমুনের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ওকে বাইরে কাজ করতে দেয় না। ওরা চায় যে, মুনমুন যেন বাড়ির খেয়াল রাখে আর চুটিয়ে সংসার করে, বাইরের কাজ নয়। অথচ, মুনমুন ফাইন্যান্সে মাস্টার্স করেছে। বিয়ের আগে একটি এমএনসি-তে চাকরিও করত। ফলে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সঙ্গে মুনমুনের মতবিরোধ হয় এবং স্বামীকে নিয়ে ও আলাদা থাকতে শুরু করে।

এমন ঘটনা শুধু মুনমুনের ক্ষেত্রেই নয়, আরও অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটে। তাই সংসার বাঁচাতে শ্বশুর-শাশুড়িরা আগের থেকেই সাবধান হোন। ছেলের বউ-কে বাড়ির ‘কাজের লোক’ বানিয়ে তুলবেন না। তাকে মুক্ত হাওয়ায় বাঁচতে দিন। চাকরি করা বা না-করার সিদ্ধান্ত তার নিজের সিদ্ধান্ত, আপনাদের মতামত চাপিয়ে দেবেন না।

সন্তান-ধারণের জন্য বউমাকে চাপ দেবেন না

যে-কোনও দায়িত্বশীল দম্পতিই খুব ভেবেচিন্তে সন্তান ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এর জন্য অর্থনৈতিক, মানসিক এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। এমনকি এমন অনেক দম্পতি আছেন যারা সন্তান চান না। তাই শুধুমাত্র ঠাকুরদা-ঠাকুমা হবার স্পেশাল আনন্দকে উপভোগ করার মনস্কামনায় ছেলের বউকে সন্তান ধারণের জন্য চাপ দেবেন না। কন্সিভ করার সিদ্ধান্ত ছেলে-ছেলের বউ-কেই নিতে দিন।

বউমার প্রশংসা করুন

শাশুড়ি-মায়েরা ছেলের বিয়ের পরে বোধহয় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। তবে কারণ যাই হোক না কেন, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী বা বন্ধুবান্ধবদের কাছে কখনওই বউমার নিন্দা করবেন না। এর ফলে সংসারে শুধু তিক্ততাই বাড়বে।

এক-এর অধিক পুত্রবধূ

যদি পুত্রবধূর সংখ্যা একাধিক হয়, তবে কখনওই পুত্রবধূদের মধ্যে তুলনা টেনে বা অন্য উপায়ে তাদের একে অপরের প্রতিপক্ষ বানিয়ে তুলবেন না। এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল আপনার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। সংসারে অশান্তির সম্ভাবনা এবং সংসার ভেঙ্গেও যেতে পারে।

সমস্যা শেয়ার করুন

পুত্রবধূকে আপনার পরিবারের একজন সদস্য করে তুলুন। সে যেন নিজেকে বাইরের লোক না ভাবে। পরিবারের যে-কোনও সমস্যা তার সঙ্গে শেয়ার করুন। যৌথ পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার মতামতকে গুরুত্ব দিন।

বউমাকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসুন। গল্পে, আড্ডায় দু’জনে সুন্দর সময় কাটান। ওকে স্বাধীনভাবে বাঁচতে দিন। কথায় আছে ‘শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।’ তাই শাসনের অধিকার পেতে, বউমাকে ভালোবাসায় ভরে দিন।

সন্তান হবার পর

গর্ভধারণের পর দীর্ঘ সময় এবং সন্তান ভূমিষ্ট হবার পরেও, বউমাকে আদর-যত্নে ভরিয়ে রাখুন। বাচ্চা সামলাতে তাকে সাহায্য করুন। অনেকসময় সদ্যজাত সারারাত জেগে থাকে, ঘুমোতে চায় না, মা-কেও জাগিয়ে রাখে। এই অবস্থায় বউমার ওপরে অতিরিক্ত কাজের দায়িত্ব না চাপানোই ভালো। শুধুই শিশুটির নয়, বউমার শরীরেরও যত্নের প্রয়োজন। শাশুড়ি মায়েরা কিছুক্ষণের জন্য হলেও বাচ্চাটির খেয়াল রাখুন। আপনার বউমা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে।

এমনই সব ছোটো ছোটো সহজ উপায়, সুস্থ Relationship-এর চাবিকাঠি। একটু খেয়াল রাখলেই, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হবে, সংসার থাকবে অটুট।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...