সমস্যামুক্ত ত্বক সব নারীই চান। কিন্তু তা সত্ত্বেও কখনও তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়, আবার কখনও ত্বকে অ্যাকনের সমস্যা। এগুলি মুখের সৌন্দর্য‌ এবং ঔজ্জ্বল্য যেমন নষ্ট করে, তেমনি এর কারণে ত্বকে প্রদাহ এবং চুলকানির এতটাই সমস্যা দেখা দেয় যে, সেটা সহ্য করা মুশকিল হয়ে ওঠে। যে-কোনও মরশুমেই এই সমস্যা হতে পারে। কিন্তু গরমে তৈলাক্ত ত্বক এবং ত্বকে অ্যাকনের সমস্যা বেশি দেখতে পাওয়া যায়। কারণ গরমে সেবেসিয়াস গ্ল্যান্ডস ত্বককে হাইড্রেটেড রাখার জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় সিবাম উৎপাদন করা শুরু করে দেয়। এটি অ্যাকনে হওয়ার প্রধান কারণ। এর জন্য প্রয়োজন তৈলাক্ত এবং কম্বিনেশন ত্বকের বিশেষ যত্ন।

কী কারণের জন্য তৈলাক্ত এবং কম্বিনেশন ত্বকের সমস্যা হয়ে থাকে?

তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা এখন খুবই কমন হয়ে গেছে। তৈলাক্ত ত্বকে লিপিড-এর স্তর, জল এবং ফ্যাট-এর মাত্রা অনেক বেশি থাকে। যখন সেবেসিয়াস গ্ল্যান্ডস প্রয়োজনের অতিরিক্ত সিবাম উৎপাদন করা শুরু করে দেয় তখন অ্যাকনে, ব্ল্যাকহেডস, ব্রেকাউটস, হোয়াইটহেডস-এর সমস্যা দেখা দিতে থাকে। ব্রেকাউটস-এর ফলে সিবাম ত্বকের মৃত কোশের সঙ্গে মিশে গিয়ে রোমছিদ্র বন্ধ করে দেয়। এতে ত্বকের অবস্থা আরও খারাপ হয়। কম্বিনেশন ত্বকে টি-জোন যেমন কপাল, নাক এবং থুতনি-তে অয়েল গ্ল্যান্ডস ওভার অ্যাক্টিভ হয়ে পড়ে। অথচ মুখের বাকি অংশ নর্মাল ও ড্রাই থাকে। সেজন্য এই ধরনের ত্বকে ভারসাম্যের অভাবে ড্যামেজ বেশি হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে ত্বকের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়।

  • জেনেটিক কারণেও ত্বক তৈলাক্ত হতে পারে। যার ফলে সেবেসিয়াস গ্ল্যান্ডস ওভার অ্যাক্টিভ হয়ে প্রতিনিয়ত বেশি সিবাম উৎপাদন করে এবং এর ফলে অ্যাকনে হয়।
  • হাইপার কেরাটিনাইজেশন এবং ব্যাক্টেরিয়াল প্রোলিফেরেশন, যৌবনে হরমোনাল পরিবর্তন হওয়ার কারণে অতিরিক্ত মাত্রায় সিবাম উৎপাদন করে। এর ফলে ত্বক বেশি তৈলাক্ত এবং চটচটে হয়ে পড়ে। এছাড়াও একইসঙ্গে ফ্রেশ সিবাম-এর কারণে এটির স্ট্রাকচার আলাদাও হয়ে থাকে। এটি বেশি ঘন হওয়ার কারণে ফলিকল-এর বাইরে বেরোতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে কোমেডোন হওয়ার বিপদ আরও বেড়ে যায়।
  • হাইপার কেরাটিনাইজেশন-এ, স্কিন সেল্স-এ দ্রুত বাড়তে থাকা রোমছিদ্রের মুখ বন্ধ করে, সিবামের বাইরে বেরোনোর পথ রোধ করে দেয়। কোমেডোন বাড়তে থাকার এটি একটি কারণ। এর ফলে এর আশেপাশের ত্বকে পিগমেনটেশন লক্ষ্য করা যায়।
  • অ্যাকনের ব্যাক্টেরিয়া বাড়াতে সিবাম নিউট্রিয়েন্ট-এর ভূমিকা নেয়। এর জন্য কোমেডোন লাল রঙের ব্রণতে পরিবর্তিত হয়ে প্রদাহ এবং ব্যথার কারণ হয়ে ওঠে।
  • অনেক সময় রোমছিদ্রের মুখ বড়ো হয়ে গেলে বয়স বেশি দেখায় এবং ব্রেকাউটস হয়ে যায়, ফলত এতে বেশি মাত্রায় তেল উৎপন্ন হওয়া শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে রোমছিদ্রের আকার হ্রাস করা সম্ভব হয় না। কিন্তু ত্বকের বিশেষ যত্ন নিয়ে এটিকে কন্ট্রোল করা সম্ভব।
  • আমরা অপরকে দেখে বা চিন্তাভাবনা না করেই ত্বকে ভুল স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে ফেলি, যার ফলে ত্বক আরও বেশি তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। যে-কারণে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এর জন্য যাদের কম্বিনেশন ত্বক বা অ্যাকনের সমস্যা রয়েছে, তাদের উচিত নিজের স্কিন টাইপ জেনে তবেই স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা। এই ধরনের ত্বক যাদের, তাদের লাইটওয়েট ময়েশ্চারাইজার ও জেল বেসড ক্লিনজার্স ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়।

কী করা জরুরি

রোদ এড়িয়ে চলুন : সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি ত্বক শুষ্ক করে তোলে। এমনকী তৈলাক্ত ত্বকেও ময়েশ্চারাইজারের প্রয়োজন হয়। এই পরিস্থিতিতে ফ্যাট নিঃসরণ গ্রন্থি অতিরিক্ত অ্যাক্টিভ হয়ে পড়ে। এর ফলে বেশি মাত্রায় সিবাম তৈরি হয় এবং স্কিন ব্লেমিশেজ-এরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও ত্বক ড্রাই হয়ে পড়ার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ডেড স্কিন সেল্স-কে এটি বেরোতে দেয় না। ফলে রোমছিদ্র থেকে সিবাম বাইরে বেরোতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। সেজন্য যতটা সম্ভব প্রখর রৌদ্রের তাপ এড়িয়ে চলুন। যদি একান্তই রোদে বেরোতে হয় তাহলে পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরে বেরোন।

ট্রিটমেন্ট রোজ ফলো করুন : ট্রিটমেন্ট শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই ত্বকে তার প্রভাব পড়ে না। বরং রেগুলার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ত্বকের দরকার এক্সট্রা কেয়ার নেওয়ার। যেমন ডে এবং নাইট ক্লিনজিং রুটিন ফলো করার সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেশন ট্রিটমেন্ট করার দরকার হয়। ৫ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যেই এর ফলাফল চোখে পড়বে।

ব্রণতে হাত দেবেন না : ব্রণ পেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাতে ব্যথাও হয়, ফলে এটি খুবই কষ্টদায়ক। তাই ইরিটেশন হলেও ব্রণতে হাত দেবেন না কারণ এতে সংক্রমণ ছড়াবার সঙ্গে সঙ্গে দাগ পড়ার ভয়ও থাকে।

ক্লিনজিংএর প্রয়োজনে বায়োডার্মার সিবিয়াম ফেসওয়াশ : কম্বিনেশন থেকে অয়েলি স্কিন হোক বা অ্যাকনে প্রভাবিত ত্বক, ক্লিনজিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া। এই পরিস্থিতিতে শুধু ক্লিনজিংই নয়, সঠিক ক্লিনজার নির্বাচন করা প্রয়োজন। বায়োডার্মার সিবিয়াম ফেসওয়াশ, যা জেন্টল ক্লিনজারের কাজ করে সঙ্গে মুখের নোংরা দূর করে সিবামের অতিরিক্ত মাত্রায় উৎপাদন রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া রোমছিদ্র বন্ধ হতে দেয় না, যার ফলে ত্বক ধীরে ধীরে সমস্যামুক্ত হতে থাকে। এটি ত্বককে ড্রাই হতেও দেয় না।

এতে থাকা জিংক সালফেট ও কপার সালফেট, এপিডার্মিসকে পরিষ্কার করে, সিবাম সিক্রিয়েশন কম করে, দাগছোপ কমাতে সহায়তা করে। এটির সোপ-ফ্রি ফর্মুলা ত্বকের পিএইচ লেভেল-এর ভারসাম্য বজায় রাখার কাজ করে। কিছুদিন এটি ব্যবহার করলে আপনি এর ফলাফল নিজের চোখেই দেখতে পাবেন। সুতরাং এখন অ্যাকনে এবং অয়েলি স্কিন-কে বলুন বাই।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...