যে-গন্ধটা আসছে, সেটা খুব খারাপ গন্ধ। ঠাকুরের আসনের জুঁই-চন্দনের গন্ধ ছাপিয়েও এই গন্ধটা আসে। এই গন্ধে এখনও লোভ হয়। ইলিশ মাছের গন্ধ। মরণ! ইলিশ মাছ হচ্ছে আজ।

ছত্রিশ বছর ধরে ইলিশ খাচ্ছেন না তারাসুন্দরী। উনি গত হয়েছেন ছত্রিশ বছর হ’ল। কোনও মাছই তো খাচ্ছিলেন না, নিউমোনিয়া হবার পর খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, ডাক্তার বলল চিকেন সুপ খেতে হবে। তারাসুন্দরী বলেছিলেন, ছি-ছি-ছি, মুরগির ঝোল? বিধবার মুখেও আনতে নেইকো। ডাক্তার বলেছিল, তবে শিঙিমাছের ঝোল খান। সেটাও খেতে চাননি, বলেছিলেন, এসব খেতে পারব না, আঁশটে গন্ধ লাগবে, এতদিন ওসব খাইনি, বমি হয়ে যাবে। ডাক্তার বলেছিল, বমি হবে না। হলে আমি আছি।

কই, আঁশটে গন্ধ লাগেনি তো, ভালোই লেগেছিল বেশ। মাছগুলো ঝোলের ভিতরে চটকে মিশিয়ে দিয়েছিল, বেশ বুঝতে পারছিলেন তারাসুন্দরী। কিন্তু ভালো লাগাটা কাউকে বুঝতে দেননি। দিতে নেই। চামচে করে সুপ খাইয়ে দিচ্ছিল ছেলে বউ, আর প্রতিবার মুখ বিকৃত করেছেন।

তারপরও, জ্বরজারি হলে একটু শিঙিমাছের সুপ খেয়েছেন। নাতনিটা বলেছে নিয়মভঙ্গ যখন হয়েই গেছে ঠাম্মা, রোজই একটু মাছ খাও। শরীর ঠিক থাকবে। একশো বছর টেনে দেবে।

একশো বছর টেনে দেবে কথাটা যে একটা খোঁচা মারা কথা এটা কি বোঝেন না তারাসুন্দরী? বেশ বোঝেন। বাড়ি সারাইয়ের সময় রাজমিস্ত্রিকে বড়ো বউমা বলেছে, ওটা শুনেছেন তারাসুন্দরী, শুনে ফেলেছেন– বাড়ি ভেঙে যাবে, খসে পড়ে যাবে, উনি থাকবেন। উনি মানে কে, সে কি বুঝতে অসুবিধা হয়? মাছ আর খান না। জ্বরজারি হলেও না।

ইলিশ হচ্ছে। গন্ধটা ম’ ম’ করছে। উনি খুব ইলিশ আনতেন। দু’ হাতে দুটো ঝুলিয়ে আনতেন বর্ষার দিনে। তখন তো মাছ কাটিয়ে আনত না আজকালকার মতো, নিজে মাছ কাটতেন। কালোজিরে কাঁচালংকার পাতলা ঝোল– কাঁচা কুমড়ো দিয়ে, সরষেবাটা আর সরষের তেল মাখিয়ে, কাঁচালংকা চিরে দিয়ে টিফিনবাটিতে ভাতের হাঁড়িতে রেখে দিয়ে ভাপা, নারকেলবাটা দিয়ে লাউপাতায় মুড়ে... কত কী...। ওনার শ্রাদ্ধে ছেলেরা ইলিশ খাইয়েছিল– উনি ভালোবাসতেন বলে। তারাসুন্দরী মরে গেলে ওর মৎস্যমুখীতেও হয়তো ইলিশ করবে ছেলেরা। আত্মা কি স্বাদ পায়?

आगे की कहानी पढ़ने के लिए सब्सक्राइब करें

ডিজিটাল

(1 साल)
USD10
 
সাবস্ক্রাইব করুন

ডিজিটাল + 12 প্রিন্ট ম্যাগাজিন

(1 साल)
USD79
 
সাবস্ক্রাইব করুন
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...