অনেকেই মনে করেন লিপস্টিক মানেই মোটামুটি উজ্জ্বল একটি রং যেমন-তেমন করে ঠোঁটে লাগিয়ে নিলেই হল। কিন্তু বিষয়টা ঠিক ততটা হেলাফেলার নয়। লিপস্টিক লাগানোর আগে প্রয়োজন সঠিক কালার সেন্স, এবং লিপস্টিক লাগানোর সঠিক পন্থা জানা।
ঠোঁটের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে লিপস্টিক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই লিপস্টিকের রং নির্বাচন করুন আপনার স্কিন টোনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। যারা শ্যামাঙ্গিনী তাদের জন্য ডার্ক মেরুন, ডিপ রেড বা ওয়াইন রেড, বার্গান্ডি, প্লামরিচ বা ডার্ক রাস্ট কালার ভালো। দিনের বেলায় এগুলির হালকা পরত চলতে পারে। নিউড শেড-ও খারাপ লাগবে না, অর্থাৎ ঠোঁটের আউটলাইন করুন এই সব শেড দিয়ে, আর ঠোঁটের উপরে থাক গ্লসের পরত। ইয়েলো টোন বা পার্ল ফিনিশিং Lipstick শ্যামলা গায়ের রঙের সঙ্গে বেমানান লাগে, তাই এগুলি অ্যাভয়েড করাই ভালো।
গায়ের রং ফরসা হলে, যে-কোনও শেডেই আপনাকে সুন্দর দেখাবে। তাই সাহস করে ব্রাইট শেডস-ই বেছে নিন। দিনের বেলায় নিউট্রাল ব্রাউন, পিচ, পিংক, বেইজ, কোরাল মানানসই হবে। আর রাতের জন্য থাক রেড বা কফি কালার।
ঠোঁটের গঠন
লিপস্টিক লাগানোর আগে নিজের ঠোঁটের গঠন সম্পর্কে এক পরিষ্কার ধারণা করে নিন। কারণ লিপস্টিক এক ধরনের কারেকশন টুল, যার দ্বারা ঠোঁটের গঠনগত ত্রুটি ঢেকে ফেলা সম্ভব, অতিরিক্ত মোটা বা পাতলা ঠোঁট সৌন্দর্য হ্রাস করে। এক্ষেত্রে লিপস্টিক লাগানোর আগে আউটলাইন নিখুঁত হওয়া দরকার, যার ফলে ঠোঁটকে সুন্দর আকার দেওয়া যাবে।
পাতলা ঠোঁট
ঠোঁট যদি অতিরিক্ত সরু হয়, তাহলে লিপলাইনার লাগানোর আগে কন্সিলার বা ফাউন্ডেশন লাগান। এরপর লিপলাইনারের সাহায্যে ঠোঁটের দুদিকের সীমারেখার কিছুটা বাইরে অবধি রেখা টানুন। এর ফলে ঠোঁট কিছুটা চওড়া দেখাবে। এবার ঠোঁটের ভিতরের অংশ Lipstick দিয়ে ভরে দিন। সব শেষে দিন লিপগ্লসের ছোঁয়া।
মোটা ঠোঁট
ঠোঁটের আকার যদি মোটা হয়, তাহলে তাকে সরু দেখানোর জন্যও লিপস্টিকের একটা ভূমিকা আছে। প্রথম ঠোঁটের সীমা বরাবর কন্সিলার লাগান। এবার পেন্সিল লাইনারের সাহায্যে ঠোঁটের একটু ভিতরের দিকে রেখা টেনে ঠোঁট কে সরু আকার দিন। এবার ম্যাট শেডের লিপস্টিকে ঠোঁট ভরে দিন। লিপগ্লস ব্যবহার না করাই ভালো।
ফোলা ঠোঁট
যদি আপনার ঠোঁটে ফোলা ভাব এনে ঠোঁটটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চান, তাহলে আরও বিশেষ টেকনিক আছে। এর জন্য ডার্ক কালারের লিপলাইনারের সাহায্যে একটু চওড়া করে আউটলাইন আঁকুন, তারপর ঠোঁটের ভিতরটা হালকা শেডের লিপস্টিক দিয়ে ভরে দিন। ঠোঁটের মাঝ বরাবর লিপলাইনারের সাহায্যে একটি বিভাজন রেখা টানুন। এর ফলে এই রেখার দুপাশের ঠোঁটের অংশ ফোলা দেখাবে।
অস্পষ্ট ঠোঁট
অনেকেরই উপরের ঠোঁটের রেখা তেমন স্পষ্টভাবে নজরে আসে না কিংবা ঠোঁটের মধ্যবর্তী অংশের ‘ভি’ শেপটাও স্পষ্ট নয়, এক্ষেত্রে লিপলাইনারের সাহায্যে ঠোঁটের মাঝখানে ‘ভি’ আকারের রেখা টেনে কারেকশন করে নিন। এরপর এই ‘ভি’-রেখা আরও বাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বাকি ঠোঁটের আউটলাইন করুন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যেন উপরের ঠোঁট ও নীচের ঠোঁটের গড়নে সামঞ্জস্য থাকে। এরপর ম্যাট শেডের Lipstick লাগান।
বয়স সম্পর্কে সচেতনতা
লিপস্টিকের রং নির্বাচনের সময় অবশ্যই আপনার বয়সের ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন। কারণ আপনার বয়সের পক্ষে বেমানান একটি রং চয়ন করলে তা সৌন্দর্য বৃদ্ধির পরিবর্তে আপনাকে হাস্যাস্পদ করে তুলবে। টিনএজার্সদের মানায় লাইটার নিউড টোন, পিংক বেসড ন্যাচারাল শেডস। এদের লিপস্টিকের পরিবর্তে লিপগ্লস বা লিপবাম লাগালেও চলে। কিন্তু বয়স বাড়লে স্কিন টোনের সঙ্গে মানানসই ব্রাইট শেডস-ই বেছে নেওয়া উচিত হবে। চেরি, রেড, মেরুন, ডিপ বেরি বা কোরাল শেডস-এই আপনাকে ভালো দেখাবে।
আরও একটু বেশি বয়সের মহিলাদের একটি ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে, সেটা হল ত্বকের বলিরেখা ও ত্বক কুঞ্চন। এ বয়সে ঠোঁটের ত্বকেও কুঞ্চন লক্ষ্য করা যায়। তাই লিপস্টিক লাগানোর আগে লাইনারের সাহায্যে কারেকশন লাইনস টেনে নিয়ে তবেই ম্যাট ফিনিশ লিপস্টিক লাগানো ভালো।
সময় আর ঋতু ইমপর্ট্যান্ট
লিপস্টিক লাগানোর আগে খেয়াল করুন এই সাজ দিনের বেলার না রাত্রের। দিনের সাজের সঙ্গে নিউট্রাল শেডস-ই ভালো। আর রাতে ডার্ক ও ব্রাইট শেডস ব্যবহার করাই সমীচীন। ঋতু বদলের ক্ষেত্রেও কিছু সতর্কতা জরুরি। যেমন শীতে ময়েশ্চারাইজার বেসড্ লিপস্টিক বা সফট্ ক্রিমি লিপস্টিক ব্যবহার করুন, আর গরমের জন্য আদর্শ ম্যাট বা সেমি ম্যাট লিপস্টিক।
লিপস্টিক রিমুভাল
ঠোঁট সুন্দর করার পাশাপাশি ঠোঁটের সুরক্ষার বিষয়টিও মাথায় রাখুন, তাই অবশ্যই সাজ মোছার সময় ঠোঁটের রং-ও মুছে ফেলতে ভুলবেন না।
ঠোঁট রগড়ে কখনও লিপস্টিক তুলবেন না, পরিবর্তে তুলোয় ক্লিনজিং মিল্ক লাগিয়ে, আলতো করে লিপস্টিক মুছে নিন। এক্ষেত্রে সফট হার্বাল ক্লিনজারও ভালো। এর ফলে ঠোঁটের প্রাকৃতিক নমনীয়তা অক্ষুণ্ণ থাকবে। ঘুমোনোর আগে গ্লিসারিনের পরত লাগালে বাড়তি সুরক্ষা পাবে আপনার ঠোঁট দুটি।