এইভাবে দ্বিতীয় দিনটিও কেটে যায় লখনউ শহরে। আজ খানাপিনার দ্বিতীয় পর্ব। হজরতগঞ্জের এক রেস্তোরাঁয় চাঁপ-কাবাব-পরোটার মহোৎসব। মহোৎসবের কথায় মনে পড়ে গেল লখনউ-মহোৎসবের কথা। গানবাজনা, খাবার, হস্তশিল্প, প্রদর্শনী ও বিক্রয় ছাড়াও আকাশ জুড়ে ওড়ে নানা ধরনের ঘুড়ি, মোরগ লড়াইও চলে উৎসব প্রাঙ্গনে। সে এক এলাহি ব্যাপার– তবে এবারে আমাদের ভাগ্যে এই মহোৎসব দেখার সুযোগ নেই।
লখনউয়ের তৃতীয় দিনটা কেনাকাটার জন্য নির্দিষ্ট ছিল আর তার সঙ্গে একটু আয়েশি ঘোরাফেরা। আধুনিক লখনউতে শহরের আনাচেকানাচে গড়ে উঠেছে উদ্যান– শহরকে আরও সবুজ করে তোলার উদ্যান। তবে এত বাগান ঘুরে ঘুরে দেখার উৎসাহ থাকে না সাধারণ পর্যটকের। তবে যে-উদ্যান না দেখলেই নয়, তা হল শহরের প্রায় কেন্দ্রস্থলেই এক নতুন পর্যটনকেন্দ্র, নাজ ‘ড. ভীমরাও অম্বেদকর সামাজিক পরিবর্তনস্থল’। ভারতের সংবিধান রচনায় অগ্রণী ড. অম্বেদকর নামাঙ্কিত নবনির্মিত উদ্যানকে পর্যটনস্থলই বলতে হবে কারণ এটি শুধু উদ্যান নয় সঙ্গে রয়েছে অনন্য স্থাপত্য, স্মারক, সংগ্রহশালা, গ্যালারি…। আজকের আয়েশি ঘোরাফেরার অঙ্গ এই উদ্যানভ্রমণ।
উদ্যানে প্রবেশপথ অনেকগুলি। উত্তরের প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে টিকিট কেটে প্রবেশ করি অন্দরে। এটি সম্পূর্ণ রূপে খুলে দেওয়া হয় মায়াবতীর মুখ্যমন্ত্রীত্বের আমলে। এই বিশাল আয়োজন দেখতে অনেকটা সময় লাগবে– কারণ এটির মধ্যে রয়েছে অনেকগুলি বিভাগ। গ্র্যানাইট পাথরের চকচকে রাস্তা, মাঝে মাঝে সবুজের টুকরো লন, তাতে ফুলের গাছ আর চারপাশ জুড়ে নানা স্থাপত্য, গ্যালারি ইত্যাদি। রয়েছে ভীমরাও আম্বেদকর স্মারক বিশাল এলাকা জুড়ে, গোলাপি মার্বেল পাথরের শোভা। আম্বেদকরের জীবনের বিভিন্ন স্মরণীয় মুহূর্তের মুর্যাল আর বিশেষভাবে আকর্ষণ করে আম্বেদকরের বিশাল পাথরের মূর্তি। এরপর পরপর আম্বেদকর সামাজিক পরিবর্তন সংগ্রহশালা, সামাজিক পরিবর্তন গ্যালারি, স্মারক প্রতিবিম্বস্থল, স্মারক দৃশ্যস্থল ইত্যাদি বিভাগ। রয়েছে বাঁধানো জলাশয়, ফোয়ারা আর যেটা বার বার চোখে পড়ে অসংখ্য হাতির মূর্তি সারা এলাকা জুড়ে সাজানো। সব মিলে সত্যিই বিশাল আয়োজন।
লখনউয়ের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র বলতে হজরতগঞ্জ, চক, আর আমিনাবাদ। তার মধ্যে হজরতগঞ্জের দোকানগুলিতে যেমন চাকচিক্য বেশি মূল্যসূচিও অনেকটা বেশি। সিল্ক, পারফিউম (আতর) ও গয়নাগাটির শহর লখনউ। চিকনের কাজ করা শাড়ি, পাঞ্জাবি, তার সঙ্গে জরির কাজেরও এ অঞ্চলে বিশ্বখ্যাতি আছে। তাই চকবাজার ও আমিনাবাদে মার্কেটিং এ ব্যাগ ভরল আর পকেটের বটুয়া শূন্য হতে লাগল।
চতুর্থ দিনে আমরা ঘুরে এলাম লখনউ থেকে দূরে রামের জন্মভূমি অযোধ্যা। সেখানে শুধু মন্দির আর মন্দির, আর রয়েছে সেই বিতর্কিত রামজন্মভূমি। সে গল্পের মধ্যে আজ আর ঢুকব না। পঞ্চম দিনে লখনউকে বিদায় জানাতে হবে। মনে পড়ে যায় ওয়াজেদ আলি শাহর লেখা সেই ঠুংরি–
‘যব ছোড় চলে লখনৌ নগরী
তব হাল আদম্ পর ক্যা গুজরী…’
প্রয়োজনীয় তথ্য
(১) হাওড়া থেকে লখনউ যাওয়ার অনেকগুলি সরাসরি ট্রেন আছে। অমৃতসর মেল, অমৃতসর এক্সপ্রেস, দুন এক্সপ্রেস, হিমগিরি এক্সপ্রেস সরাসরি লখনউ যায়। কলকাতা থেকে সরাসরি উড়ানও রয়েছে লখনউ পর্যন্ত।
(২) লখনউ শহরে হোটেলের অভাব নেই। উত্তরপ্রদেশ পর্যটন দপ্তরের হোটেল গোমতী ছাড়াও রয়েছে অনেক প্রাইভেট হোটেল।
(৩) লখনউ শহর দেখার জন্য টুরিজমের বাস যথেষ্ট যাত্রী না পেলে ছাড়ে না। তবে গাড়িযঅটোযটাঙায় শহর ঘোরা যায়।
(৪) চিকন ফ্যাক্টরি দেখতে খুব ভালো লাগবে। চকবাজার বা আমিমাবাদে নিজেদেরই শপিং করা উচিত হবে।