ইশ্ এই শীতকালে মেঘলা আকাশ দেখলেই ভীষণ মন খারাপ লাগে বলো। রঞ্জনা বারান্দার দরজাটা দিতে দিতে বলে।
প্রদীপ্ত লেপের মধ্যে নিজেকে সঁপে দেয়– ঠিক বলেছ। এরকম দিনে কেমন যেন পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে।
– তোমার পুরোনোদিনের কথা মানেই তো রেখা আসবে। ঠোঁট টিপে হাসে রঞ্জনা।
– বেশ রেখার কথা আর বলব না। তুমিই তো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করো, অভিমানী স্বরে বলে প্রদীপ্ত।
– খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আবার কী! রেখার কথা যা বলো তাই শুনি। মনে কোনও প্রশ্ন জাগলে জিজ্ঞাসা করি। ব্যস। মনে হয় বঙ্কিমচন্দ্র কী আর সাধে বলেছিলেন, বাল্যপ্রেমে অভিশাপ আছে, মুখে ক্রিম ঘষতে ঘষতে চপলসুরে বলে রঞ্জনা।
প্রদীপ্ত লাজুক হাসে– যাঃ ওই বয়সে প্রেম কী তাই জানতাম না। আলগাটানে রঞ্জনাকে বিছানার মধ্যে নিয়ে এসে দু’হাতের তালুতে রঞ্জনার মুখটা ধরে বলল–প্রেম তো খুঁজে পেলাম অনেক পরে। রঞ্জনার দু’চোখে চুমু খেয়ে বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে বলল– এখানেই আমার প্রেমের আশ্রয় বুঝেছ।
রঞ্জনা প্রদীপ্তর চুলগুলো মুঠোর মধ্যে নিয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘাড় নাড়ল। তারপর আদুরে গলায় বলে– অনেকদিন রেখার কথা শুনিনি।
প্রদীপ্ত শুয়ে রঞ্জনার আঙুলগুলো নাড়াচাড়া করতে থাকে। রেখা এক অদ্ভুত ধরনের মেয়ে ছিল, জানো তো। ক্লাসে সবসময় আমার পাশে বসত। ওকে কেউ যদি মারত আমাকে নালিশ করত। কারও কাছে বকুনি খেলেও আমাকেই বলত। একটু নাকি সুরে কথা বলত। বলার সময় ঠোঁট দুটো ফুলে যেত। চোখ ছলছল করত। অথচ আমরা তো একই বয়সি ছিলাম। কিন্তু সেই নার্সারি ক্লাস থেকেই আমি কী করে যেন রেখাকে আগলে রাখতাম। এমনকী মাঝেমধ্যে ধমক-ধামকও দিতাম। কিন্তু কক্ষনো মারতাম না। ওকে দেখলেই কেমন যেন মায়া লাগত।
– তোমার বন্ধুরা কিছু বলত না?
– অত ছোটো বয়স। এখনকার বাচ্চাদের মতো তো ম্যাচিওরড ছিলাম না। তবে মনে আছে স্কুলে কোনও অন্যায় যদি করতাম তাহলে পানিশমেন্ট হিসেবে টিচাররা আমাদের দুজনকে আলাদা বসিয়ে দিতেন। একটা মজার ঘটনা শোনো। উৎসাহে প্রদীপ্ত বালিশটা কোলে নিয়ে উঠে বসল– ক্লাস থ্রিতে পড়ি তখন। হাফ ইয়ারলি পরীক্ষায় রেখা অঙ্কে ফেল করল। কিন্তু আমি একশোতে একশো। রেখা তো হাপুসনয়নে কাঁদতে কাঁদতে বলছে– এই খাতা দেখালেই বাবা আমাকে প্রচণ্ড বকবে। আর মা তো খুন্তিপেটা করে সারা গায়ে দাগ করে দেবে। তুই আমাকে বাঁচা, তা রেখার কান্না দেখে আমারও চোখে জল চলে এল।